সতর্ক: মুখাবরণ পরে পথচারী। টোকিয়োয় এই ছবিই দেখা যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের জেরে টোকিয়ো অলিম্পিক্স সময় মতো করা যাবে কি না, তা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, তা আরও বেড়ে গেল। অলিম্পিক্সের জন্য রাগবিতে যোগ্যতামান পেরনোর অন্যতম একটি ইভেন্ট মঙ্গলবার বাতিল করে দিয়েছে টোকিয়ো। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ২৫-২৬ এপ্রিলে সেই প্রতিযোগিতা সুষ্ঠু ভাবে করার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। ‘‘করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারছি না যে, নিরাপদে আমরা টুর্নামেন্ট করতে পারব,’’ এক বিবৃতিতে বলেছে জাপানের রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন।
এর আগে হং কং এবং সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগিতাও বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠেছে, খেলার সূচিই শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে। সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে প্রায় ৯০,০০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। অন্তত ৩,১০০ জন মারা গিয়েছেন,। ৭০টি দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে প্যারালিম্পিক্সের যোগ্যতামান অর্জনের একটি হুইলচেয়ার রাগবি ইভেন্টও বাতিল হয়ে গিয়েছে এই সপ্তাহে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সের স্বেচ্ছাসেবকদের ট্রেনিং পর্যন্ত বাতিল হয়ে গিয়েছে। অলিম্পিক্সের জন্য দেশ জুড়ে যে মশাল দৌড় চালু করার পরিকল্পনা ছিল, তা-ও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী স্কুল বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন, বড় বড় ইভেন্ট এখন না-করার পরামর্শ দিয়েছেন। সারা বিশ্বে এই সময়ে নানা খেলায় অলিম্পিক্সের যোগ্যতামান অর্জনের জন্য প্রচুর ইভেন্ট হওয়ার কথা ছিল। কোনওটাই প্রায় করা সম্ভব হচ্ছে না। সবই হয় বাতিল করতে হচ্ছে নয়তো পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উড়ান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বসিয়ে দিয়েছে নানা দেশ। সেই কারণে খেলোয়াড়েরা বা দলগুলিও ইভেন্টের কেন্দ্রে যেতে পারছে না। জাপানের মন্ত্রী মঙ্গলবারই বলেছেন, করোনাভাইরাসের জেরে অলিম্পিক্স পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা অনুমতি পেয়ে যাবেন। যদিও অলিম্পিক্সের সংগঠকেরা এখনও জোরালো দাবি করে যাচ্ছেন, নির্ধারিত সময়েই (২৪ জুলাই থেকে ৯ অগস্ট) প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এ দিন আইওসি (আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি) জানিয়েছে, টোকিয়োর সঙ্গে তাদের যা চুক্তি তাতে ২০২০ সালের মধ্যে অলিম্পিক্স আয়োজন করতে হবে। অর্থাৎ, চুক্তি অনুযায়ী, জুলাই-অগস্ট থেকে বছরের শেষের দিকে পিছিয়ে নিয়ে গেলে চুক্তিভঙ্গ হবে না। কিন্তু আইওসি বলে দিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তাদের প্রথম লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ে ইভেন্ট করা।
জাপানের মন্ত্রী সিকো হাসিমোতোও তাঁদের সংসদে অন্য সুরে বলেছেন, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০-র শেষ পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে অলিম্পিক্স আয়োজন করার জন্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ইভেন্ট এখনই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ চুক্তি অনুযায়ী, ইভেন্ট পিছিয়ে দেওয়া বা বাতিল করার এক্তিয়ার রয়েছে একমাত্র নিয়ামক সংস্থা, আইওসি-র। এবং, আইওসি প্রেসিডেন্ট থোমাস বাখ বলে দিয়েছেন, তাঁরা নির্ধারিত সময়ে অলিম্পিক্স করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। হাসিমোতো বলেছেন, জাপান সরকার এবং টোকিয়োর সংগঠকেরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে অলিম্পিক্স পিছিয়ে দিতে না হয়।
ইভেন্ট স্থগিত রাখতে হলে প্রচুর টাকার ক্ষয়ক্ষতিও হবে বলে আশঙ্কা। হাসিমোতো জানিয়েছেন, টোকিয়ো অলিম্পিক্সের বাজেট ১.৩৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯৩ হাজার কোটি) এর মধ্যে জাপান সরকার ১২০ বিলিয়ন ইয়েন দিচ্ছে অলিম্পিক স্টেডিয়াম তৈরি করার জন্য। আরও ৩০ বিলিয়ন বরাদ্দ করা হচ্ছে ২০২০ প্যারালিম্পিক্সের জন্য। আইওসি সব প্রতিযোগীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছে, সকলে পুরো দম লাগিয়ে তৈরি হতে থাকো। অলিম্পিক্স নির্ধারিত সময়েই হবে। কিন্তু সত্যিই আইওসি-র সেই ইচ্ছা কত দূর সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
করোনাভাইরাসের জেরে যে ভাবে একের পর এক যোগ্যতামান অর্জনের ইভেন্ট বাতিল হচ্ছে, তার পরে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও সেগুলি সব অলিম্পিক্সের আগে করে ওঠা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছে। তবে মনে রাখা দরকার, ৬৬ বছরের বাখ খুবই কঠিন মানসিকতার মানুষ। প্রাক্তন অলিম্পিক ফেন্সিং চ্যাম্পিয়ন এবং আইনজীবী বাখ। লোকে তাঁকে চেনে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy