মহড়া: রয় কৃষ্ণের (মাঝে) সঙ্গে অনুশীলনে জবি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রয় কৃষ্ণ বনাম সুনীল ছেত্রীর গোলের খিদে। বেঙ্গালুরু এফসি রক্ষণ বনাম এটিকের আক্রমণ।দুই স্পেনীয় কোচের মগজাস্ত্রের লড়াই। যুবভারতীতে বড়দিন কার হবে? উৎসবের আবহে তা দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে কোনও ডার্বি নেই। কিন্তু ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস এবং কার্লেস কুদ্রতের যা মনেভাব, তাতে তো বড় ম্যাচের আবহই মনে হচ্ছে।
মাঠে নামার আগেই বেঙ্গালুরু কোচ কুদ্রত কোনও রাখঢাক না করে বলে দিলেন, ‘‘এটিকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। তবুও ক্রিসমাস ডে-কে স্পেশ্যাল ডে হিসাবে পালন করতে চাই আমরা।’’ তার কিছুক্ষণ পরেই হাবাসের মুখ থেকেও বেরিয়ে এল একই রকম সম্ভ্রম ও আবেগ, ‘‘আমরা জানি গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে খেলতে নামছি। প্রতিযোগিতার সেরা দল বেঙ্গালুরু। এ-ও জানি এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা। ঘরের মাঠে তিন পয়েন্টের লক্ষ্য নিয়েই নামব আমরা।’’
কোচেদের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ দু’দলের অনুশীলনেও প্রভাব ফেলেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় আলোর রোশনাই, মানুষের ঢলে জমজমাট উৎসব শুরু হয়েছে, তখন যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে সান্তা ক্লজের টুপি পরে ছবি তুলছিলেন বেঙ্গালুরুর উদান্ত সিংহ, আশিক কুর্নিয়ানরা। সতীর্থদের দেখে দৌড়ে এলেন অধিনায়ক সুনীলও। একটা টুপি চেয়ে নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক। তাঁকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জনা পঞ্চাশ দর্শককে ‘মেরি ক্রিসমাস’ বলে টিম বাসে উঠলেন বাংলার জামাই।
আরও পড়ুন: আজ নামছে বাংলা, ঝামেলায় জড়িয়ে বাদ ডিন্ডা
শৃঙ্খলায় মোড়া হাবাসের অনুশীলনে এ রকম কিছু না হলেও হোটেলের খবর, বিদেশি ও ভারতীয় ফুটবলারেরা ম্যাচ জিতে ক্রিসমাসের ছুটি উপভোগের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এই ম্যাচের পরেই ছুটিতে চলে যাবেন সবাই। বছর শেষে কে-ই বা গোমড়া মুখে বাড়ি ফিরতে চান।
লিগ টেবলে দুই বনাম তিনের ম্যাচ। পরিস্থিতি যা, তাতে হাবাস বা কুদ্রত, যাঁর দলই জিতবে তাদেরই ফের শীর্ষে ওঠার সুযোগ চলে আসতে পারে। আর এ রকম ধুন্ধুমার ম্যাচে জেতার জন্য এটিকে কোচের তুরুপের তাস যদি হয় তাঁর দলের দুই স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণ (৮ গোল) এবং ডেভিড উইলিয়ামসের (৪ গোল) ছন্দে থাকা, তা হলে হাবাসের চিন্তার কারণ তাঁর নড়বড়ে রক্ষণ। এদু গার্সিয়া, প্রণয় হালদার, আনাস এথানোডিকা—যাঁরা সামলাতেন প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারদের, তাঁরাই তো চোটের জন্য বাইরে। কী ভাবে সামাল দেবেন সুনীল ছেত্রীকে? প্রীতম কোটালদের কোচের গলার জোর কমে এল প্রশ্ন শুনে। বললেন, ‘‘সংগঠন করে।’’ কী করতে চাইছেন হাবাস? সম্ভবত পাঁচ ডিফেন্ডারেই দল সাজানোর ভাবনা ঘুরছে তাঁর মাথায়। তিন রক্ষণের সঙ্গে দুই উইং মিডিয়োর জন্য গণ্ডি বেঁধে দিচ্ছেন তিনি। মুখে অবশ্য এটিকে কোচ বলছেন, ‘‘সুনীল অসাধারণ ফুটবলার। আইকন। কিন্তু আমি শুধু ওকে নিয়ে নয়, বাকি সকলকে নিয়েই ভাবছি।’’
উল্টো দিকে এটিকে কোচের মতো ধোঁয়াশা রেখে নয়, সুনীলদের কোচ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘‘রয়-উইলিয়ামস জুটিকে আটকানোর জন্য আলাদা পরিকল্পনা আছে। ওদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া লিগে দীর্ঘদিন খেলা মান্ডি সোসার কথাও মাথায় থাকছে। তিন জনকেই নজরে রাখব আমরা।’’ এখানেই অবশ্য থেমে থাকেননি গতবারের চ্যাম্পিয়ন কোচ। ঘুরিয়ে নিজেদের শক্তির কথা শুনিয়ে রেখেছেন কুদ্রত। বলে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের রক্ষণ কিন্তু ন’ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল খেয়েছে। সব দলের চেয়ে যা কম। তবে এ সবই সংখ্যার কচকচানি। কিন্তু প্রত্যেকটা ম্যাচের চরিত্র আলাদা হয়।’’ বেঙ্গালুরুর রক্ষণ যদি এখনও পর্যন্ত প্রতিযোগিতার সেরা হয়, তা হলে তাদের সমস্যা গোল করার লোক নিয়ে। ন’ম্যাচে ১১ গোল করেছে কুদ্রতের দল। তার মধ্যে সুনীলের গোলই পাঁচটি। এ দিন উদান্তদের স্পেনীয় কোচ ইঙ্গিত দেন, জানুয়ারিতে ফিফার জানলা খুললে নতুন বিদেশি স্ট্রাইকার নেবেন।
বড়দিনে ভিড় হবে বলে প্রথমে এই ম্যাচের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। কিন্তু সামান্য কিছু পুলিশের সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিনশো নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে ম্যাচ করছে এটিকে। হাবাসের ‘রক্ষণে’ এ রকম বাড়তি ‘রক্ষী’ থাকবেন, ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। রয় কৃষ্ণদের কোচের অঙ্ক তো সহজ, ‘‘জিততে না পারো হেরে ফিরো না।’’ সুনীলকে আটকে দিতে পারলেই সেই লক্ষ্যে পৌছনো সম্ভব। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে এটিকের রেকর্ড যে একেবারেই ভাল নয়।
আজ আইএসএলে: এটিকে বনাম বেঙ্গালুরু (যুবভারতী, সন্ধে ৭.৩০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy