কীর্তিমান: ঝলমলে সেঞ্চুরির সঙ্গে ভারতকেও বিপর্যয় থেকে টেেন তুললেন রোহিত শর্মা। রাঁচীতে। পিটিআই
‘‘বোলারকে তুমি প্রথম দু’ঘণ্টা দাও। দিনের শেষে রাজা হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরো।’’
ছোটবেলায় প্রত্যেক ক্রিকেটারই তাঁর কোচের থেকে এই নির্দেশ পেয়েছেন। যাঁরা মানেননি, তাঁরা সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই আটকে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা মেনেছেন, তাঁদের কঠিন পরিস্থিতিও কাবু করতে পারেনি। ঠিক যেমন রোহিত গুরুনাথ শর্মাকে থামাতে পারেনি কাগিসো রাবাডা, লুনগি এনগিডির প্রথম স্পেল। দিনের শেষে ‘হিটম্যান’-এর নামের পাশে অপরাজিত ১১৭ রান (১৬৪ বলে)। সুনীল গাওস্করের পরে প্রথম ভারতীয় ওপেনার, যিনি সিরিজে দু’টির বেশি সেঞ্চুরি করলেন। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের অভিষেক সিরিজে চার সেঞ্চুরি করে ক্রিকেটবিশ্বে আবির্ভাব হয়েছিল গাওস্করের। ওপেনার হিসেবে অভিষেক সিরিজে রোহিতও সেই পথেই এগোচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে তাঁর। প্রথম দিনের শেষে তিন উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ২২৪। খারাপ আলোর জন্য ম্যাচ বন্ধ না হলে এ দিনই ৩০০-র গণ্ডি পেরিয়ে যেতে পারত ভারত।
রোহিতের মুকুটে আরও একটি পালক যোগ হল শনিবার রাঁচীর জেএসসিএ স্টেডিয়ামে। এক টেস্ট সিরিজে সব চেয়ে বেশি ছয়ের বিশ্বরেকর্ড এখন তাঁর দখলে। শনিবারের ইনিংসে চারটি ছয় মেরে শিমরন হেটমায়ারকে টপকে গেলেন ভারতীয় ওপেনার। সিরিজে এখন পর্যন্ত ১৭টি ছয় মেরেছেন রোহিত। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ১৫টি ছয় মেরে রেকর্ড গড়েছিলেন হেটমায়ার।
ছয় মেরেই এ দিন সেঞ্চুরি করলেন রোহিত। অফস্পিনার ডেন পিয়েডকে লং-অফের উপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে টেস্ট জীবনের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি এল তাঁর ব্যাটে। তার আগে অবশ্য এক বার বেশ উদ্বিগ্ন দেখিয়েছে রোহিতকে। যখন ৯৫ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি। ওই সময় হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়। যা দেখে হতাশ রোহিত বলে ওঠেন, ‘‘এখন নয়!’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এই ভিডিয়ো। এর পরেই ছয় মেরে সেঞ্চুরি রোহিতের।
ওপেনার হিসেবে অভিষেক সিরিজে কী করে এই দাপটের সঙ্গে ব্যাট করা সম্ভব? সাংবাদিক বৈঠকে ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর বললেন, ‘‘শুধুমাত্র মানসিকতায় পরিবর্তন করেই ও আজ এত সফল। সব সময়েই বিশ্বাস করেছি, যে কোনও ফর্ম্যাটে বিশ্বসেরা হয়ে ওঠার ক্ষমতা ওর রয়েছে। ওকে ওপেন করানো হবে কি না, সেটাই ছিল বড় সিদ্ধান্ত। যে ভাবে রোহিত নিজেকে প্রমাণ করেছে, তা নিয়ে আর কিছুই বলার নেই।’’
এ দিনও টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিরাট কোহালি। কিন্তু রাবাডার ঝোড়ো স্পেলে টস হারাই যেন আশীর্বাদ হয়ে উঠেছিল ডুপ্লেসির কাছে। ১৫.৩ ওভারে ভারতের স্কোর ৩৯-৩। রাবাডার আউটসুইং মায়াঙ্ক আগরওয়ালের (১০) ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় তৃতীয় স্লিপে ডিন এলগারের হাতে। তার চার ওভার পরেই চেতেশ্বর পুজারাকে (০) ইনসুইংয়ে পরাস্ত করেন রাবাডা। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। কোহালিকে ফেরান অ্যানরিখ নর্ৎজে। ১২ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান অধিনায়ক। সেখান থেকে আর উইকেট ফেলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৮৫ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে দলকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেন রোহিত ও অজিঙ্ক রাহানে। রোহিতের সঙ্গেই ৮৩ রানে ক্রিজে রয়েছেন ভারতের সহ-অধিনায়ক।
রোহিত-রাহানের এই লড়াই দেখে মুগ্ধ ব্যাটিং কোচ। বলেছেন, ‘‘উইকেটে শুরুর দিকে আর্দ্রতা ছিল। যার সদ্ব্যবহার করে গিয়েছে রাবাডা। সেই জায়গা থেকে এ ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোই বড় ব্যাটসম্যানের চরিত্র তুলে ধরে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘টেস্টে এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতি আসবেই। সেখানেই ব্যাটসম্যানের পরীক্ষা। রোহিত ও রাহানে শুরুর দিকটা উইকেটে থিতু হয়ে পরের দিকে বোলারদের শাস্তি দিয়েছে।’’
এ দিন একটি চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেল অধিনায়ক কোহালিকে। কুলদীপ যাদবের পরিবর্ত হিসেবে শাহবাজ় নাদিমের নাম ঘোষণা করা হয় শুক্রবার বিকেলে। আর শনিবার সকালেই টেস্ট খেলার স্বপ্নপূরণ হল এই বাঁ-হাতি স্পিনারের। ২৪ ঘণ্টাও দলের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেননি নাদিম। তার মধ্যেই পেয়ে গেলেন ‘টেস্ট ক্যাপ’। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে পাঁচটি পরিবর্তন হয়েছে। ফিরলেন পিয়েড। এ ছাড়াও নেওয়া হল এনগিডি, জ়ুবের হামজ়া, হেনরিখ ক্লাসেন ও লিনডেকে। এডেন মার্করাম, থেউনিস দে ব্রুইন, মহারাজ, ভার্নন ফিল্যান্ডার ও মুতুস্বামীর পরিবর্তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy