উড়ন্ত: আগ্রাসী এই জোকোভিচকেই দেখা গেল রড লেভার এরিনায়। ফেডেরারকে হারানোর পথে। গেটি ইমেজেস
অস্ট্রেলীয় ওপেনের সেমিফাইনালে রজার ফেডেরার বনাম নোভাক জোকোভিচের লড়াই। মেলবোর্ন পার্কে গত ১৬টা খেতাবের মধ্যে ১৩টাই যাদের দখলে। এ রকম একটা স্বপ্নের ম্যাচ দেখতে বহু টেনিসপ্রেমী হয়তো বৃহস্পতিবার টেলিভিশন সেটটা অনেক আগে থেকেই চালু রেখেছিলেন। অনেকে হয়তো হতাশও হয়েছেন সে ভাবে লড়াই না হওয়ায়। জোকোভিচ যে এ ভাবে স্ট্রেট সেটে জিতে ফাইনালে উঠে যাবে, ফেডেরার ভক্তরা নিশ্চয়ই আশা করেননি। তবে আমি কিন্তু এই ফল দেখে অবাক হইনি।
আমি তো ভেবেছিলাম ফেডেরার দু’জনের ৫০তম সাক্ষাতের ম্যাচটা খেলতেই নামতে পারবে না, বা খেললেও মাঝপথে উঠে যেতে বাধ্য হবে চোটের জন্য। কারণ ৩৮ বছর বয়েসে ফেডেরারকে এর আগে যে ভাবে দুটো পাঁচ সেটের ম্যারাথন ম্যাচ খেলতে হয়েছে, তাতে ক্লান্তি থাকাটা খুব স্বাভাবিক। তার উপরে কোয়ার্টার ফাইনালেই কুঁচকিতে চোটের সমস্যায় ওকে মেডিক্যাল টাইম আউটও নিতে হয়েছিল। ইন্টারনেটে দেখলাম, বুধবার ফেডেরার প্র্যাক্টিসও করেনি। বিশ্রাম নিয়েছিল। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে অন্য কোনও খেলোয়াড় হলে হয়তো ওয়াকওভারই দিয়ে দিত।
ফেডেরারের বিশেষত্ব ঠিক এখানেই। পেশাদার সার্কিটে প্রায় দেড় হাজার ম্যাচ খেলে ফেললেও কোনওদিন চোটের জন্য ফেডেরার ম্যাচ ছেড়ে দেয়নি। সেই রেকর্ড অক্ষত রাখল বৃহস্পতিবার মেলবোর্ন পার্কেও। সে জন্য ওকে কুর্নিশ। কোর্টে নামার পরে ফেডেরারকে দেখে মনেই হচ্ছিল না কোনও সমস্যা আছে। এতটাই সাবলীল ভাবে নড়াচড়া করছিল। এখানে মনে রাখতে হবে ফেডেরার এখন খুব বেছে বেছে প্রতিযোগিতা খেলে। এ বার অস্ট্রেলীয় ওপেনে নামার আগে কোনও প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা খেলেনি। ঠিক দু’বছর আগের মতো। সে বার যখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তখনও কোনও ওয়ার্ম আপ খেলেনি। ওর কৌশলটাই হল যতটা সম্ভব তরতাজা থেকে নামা। কিন্তু যতই পরিকল্পনা নিখুঁত হোক, বয়সটাও তো দেখতে হবে। সেই ফেডেরারের এ দিন চোট সঙ্গে ক্লান্তির সমস্যা থাকবে ধরে নিয়ে জোকোভিচের জন্য ফাইনালে ওঠাটা যে অনেক সহজ হয়ে যাবে সেটা হয়তো ধরে রেখেছিলেন জোকোভিচ-ভক্তেরা এবং সার্বিয়ান তারকা নিজেও।
সেখানেই প্রথম চমকটা দেন ফেডেরার। দুরন্ত ফর্মে থাকা জোকোভিচকে রুখতে ফেডেরার দুটো কৌশল নিয়েছিল।
১) শুরুতেই যতটা সম্ভব আগ্রাসী খেলে জোকোভিচের পরিকল্পনা ভেস্তে ধাক্কা দিতে হবে। জোকোভিচকে সময় দেওয়া যাবে না পাল্টা পরিকল্পনা করার।
২) লম্বা র্যালিতে না গিয়ে ছোট ছোট পয়েন্ট, উইনারে দ্রুত স্ট্রেট সেটে জয়ের জন্য ঝাঁপাও।
খেলা শুরু হওয়ার প্রথম দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যেই নিখুঁত ভাবে পরিকল্পনাটা কাজেও লাগিয়েছিল ফেডেরার। যেটা জোকোভিচ আশা করেনি। জোকোভিচ হয়তো ভেবেছিল চোটের জন্য সে ভাবে কোর্টে নড়াচড়া করতে পারবে না ফেডেরার। প্রথম দিকে তাই মনসংযোগ হারিয়ে ব্যাকফুটে মনে হচ্ছিল জোকোভিচকে। প্রথম সার্ভিস গেমে দুটো ব্রেক পয়েন্ট বাঁচানো ফেডেরারকে দ্রুত এর পরে দেখা গেল ৪-১ এগিয়ে যেতে। জোকোভিচের সার্ভিসেই তখন ও ০-৪০ পিছিয়ে ছিল। এখানেই যদি ফেডেরার গেমটা নিতে পারত তা হলে খেলাটা অন্য দিকে গেলেও যেতে পারত। কিন্তু সেটা হল না। ফেডেরারের সার্ভিস ভেঙে ঘুরে দাঁড়াল জোকোভিচ এবং প্রায় ৬২ মিনিট লড়াই করে টাইব্রেকারে জিতে নিল প্রথম সেট। এখানে একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানে পরিষ্কার হবে ফেডেরার কতটা সফল হয়েছিল ওর পরিকল্পনায়। প্রথম সেটে জোকোভিচের উইনার যেখানে ১০টি ফেডেরারের ২৬টি।
আসলে অস্ট্রেলীয় ওপেনের এই কিছুটা ধীর গতির হার্ডকোর্টে জোকোভিচের খেলার ধরন খুব মানিয়ে যায়। সাত বারের চ্যাম্পিয়ন এ জন্যই হয়তো সেমিফাইনালে এক বার উঠতে পারলে ট্রফি না নিয়ে কখনও ফেরেনি মেলবোর্ন পার্ক থেকে। সব মিলিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়েও জোকোভিচ ২৬-২৩ এগিয়ে ছিল। তা ছাড়া গত আট বছরে গ্র্যান্ড স্ল্যামে বরাবরই জোকোভিচ দাপট দেখিয়ে এসেছে ফেডেরারের বিরুদ্ধে। শেষ বার গ্র্যান্ড স্ল্যামে ফেডেরার ২০১২ সালে জোকোভিচকে হারিয়েছিল, তাও উইম্বলডনে। গত বছর উইম্বলডন ফাইনালে ফেডেরার দুটো ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়েও জিততে পারেনি ওর বিরুদ্ধে। আমার মনে হয়, ওটাই ফেডেরারের শেষ সুযোগ ছিল গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার। এ বারও আমার কাছে অস্ট্রেলীয় ওপেন জেতার দৌড়ে তাই এগিয়ে জোকোভিচই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy