Ray Price, Former International Zimbabwean Cricketer Turns into an Air Conditioner mechanic dgtl
ray price
ছিলেন আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বর, জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন এই স্পিনার এখন ফ্রিজ-এসি সারাই করেন
পড়াশোনার পাশাপাশি শিখেছিলেন রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন সারাইয়ের কাজ। সেটাই পরবর্তী জীবনে হয়ে দাঁড়াল বেঁচে থাকার উপায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ১৪:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন নির্ধারিত সময়ের দু’মাস আগেই। সদ্যজাত অবস্থাতেই দুরারোগ্য মেনিনজাইটিস। বধির হয়ে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। রে প্রাইসের সেই লড়াই এখনও থামেনি। জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন এই দুর্দান্ত ক্রিকেটার এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটরের সারাইকর্মী।
০২১৭
পুরো নাম উইলিয়াম রেমন্ড প্রাইস। জন্ম ১৯৭৬-এর ১২ জুন। জন্মের কয়েক মাস বয়সেই মেনিনজাইটিস। তাঁর বেঁচে থাকার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাঁদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে প্রাইস বেঁচে থাকলেন। কিন্তু হারালেন শ্রবণক্ষমতা।
০৩১৭
তিনি যে কিছু শুনতে পারছেন না, সেটা অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলেন বাড়ির লোক। চার বছর বয়সে জটিল অস্ত্রোপচারে ফিরে আসে প্রাইসের শ্রবণক্ষমতা। কিন্তু বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা তাঁর আজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে। তাঁর বয়সিদের তুলনায় বেশ কিছুটা দেরি করেই শুরু হয়ে তাঁর স্কুলপর্ব।
০৪১৭
বাড়ির বাগানে ক্রিকেট খেলায় হাতেখড়ি। প্রথমে তিনি ছিলেন পেসার। পরে কলেজে পৌঁছে রপ্ত করেন স্পিন বোলিং। স্পিনার হওয়ার পরে তাঁর ক্রিকেট খেলার ধরনেরও অনেক উন্নতি হয়।
০৫১৭
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ ১৯৯৫-৯৬ সালে। তখনও ক্রিকেটকে পেশা করার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। পড়াশোনার পাশাপাশি শিখেছিলেন রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন সারাইয়ের কাজ। সেটাই পরবর্তী জীবনে হয়ে দাঁড়াল বেঁচে থাকার উপায়।
০৬১৭
জিম্বাবোয়ের জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজর তাঁর উপর ছিল। সুযোগ এল হঠাৎই। ১৯৯৯-২০০০ মরসুমে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে বিপাকে পড়ল জিম্বাবোয়ে দল। অফ ফর্ম এবং চোটের কারণে দলের বাইরে পল স্ট্র্যাং, অ্যাডাম হাকল, অ্যান্ড্রু হুইটল। ফলে দলে সুয়োগ পেলেন স্পিনার প্রাইস।
০৭১৭
২০০৩-এ প্রথমে ইংল্যান্ড, তার পর অস্ট্রেলিয়া সফরে নজর কেড়ে নিলেন প্রাইস। সেই সময় থেকে সমসাময়িক বিশ্বমানের স্পিনারদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে প্রাইসের নামও।
০৮১৭
২০০৪ সালে সুর কাটল কেরিয়ারে। তৎকালীন অধিনায়ক হিথ স্ট্রিকের সঙ্গে প্রাইস-সহ বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার বিদ্রোহ ঘোষণা করেন জিম্বাবোয়ে ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে। প্রাইস ইংল্য়ান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে চলে যান। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
০৯১৭
২০০৬-এ তিনি আবার জিম্বাবোয়ে ফিরে আসেন। জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেন। হয়তো তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পরের বিশ্বকাপে খেলা। কিন্তু ২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দল বাছাইয়ের সময় তাঁর দিকে ফিরে তাকাননি নির্বাচকরা।
১০১৭
বিশ্বকাপে প্রত্যাখ্যাত প্রাইস এ বার ঠিক করলেন তিনি আবার জিম্বাবোয়ের হয়েই খেলবেন। সাড়ে তিন বছর কাউন্টি ক্রিকেট খেলার পরে নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর আগেই উর্সস্টারশায়ার কাউন্টির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করলেন। ২০০৭-এ জিম্বাবোয়ের জাতীয় দলে ফিরলেন প্রাইস।
১১১৭
দেশের হয়ে কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের বিগত পারফরম্যান্সকে ছাপিয়ে গেলেন প্রাইস। ২৭টি ওয়ানডে ম্যাচে ৪৫ উইকেট নিয়ে আইসিসি-র তালিকায় তিনি উঠে এলেন বিশ্বের তৃতীয় সেরা বোলার হিসেবে। এর পর তিনি হয়ে ওঠেন জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য।
১২১৭
২০১৩-র মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সিরিজ চলাকালীন ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন প্রাইস। কেরিয়ারে মোট ২২ টেস্টে তিনি উইকেট পেয়েছেন ৮০টি। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন পাঁচ বার। সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ৬/৭৩।
১৩১৭
১০২টি ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর শিকার ১০০ উইকেট। সেরা পারফরম্যান্স ২২ রানে ৪ উইকেট। কিন্তু তাঁর নিজের দেশেই প্রাইস অনুচ্চারিত থেকে গিয়েছেন। টেস্টে তিনি জিম্বাবোয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।
১৪১৭
জিম্বাবোয়ের যে চার জন বোলার ওয়ান ডে তে একশো উইকেট নিয়েছেন, প্রাইস তাঁদের মধ্যে অন্যতম। জিম্বাবোয়ে থেকে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তিনি খেলেন আইপিএল-এ। কিন্তু তার পরেও তিনি প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন বলে অভিমত বহু ক্রিকেটপ্রেমীর।
১৫১৭
সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে প্রাইসের বন্ধুত্বের শুরু আইপিএল-এ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-এর সদস্য ছিলেন প্রাইস-ও। তবে সচিনের সঙ্গে তাঁর ক্রিকেটীয় সাক্ষাৎ শুরুতে মোটেও মাস্টারব্লাস্টারের পক্ষে সুখকর ছিল না। ২০০২ সালে জিম্বাবোয়ের ভারত সফরের সময় পর পর তিনটি টেস্ট ইনিংসে তাঁর বোলিংয়ে আউট হন সচিন তেন্ডুলকর। প্রথমে নাগপুর টেস্ট, তার পর দিল্লি টেস্টের দুই ইনিংসেই প্রাইসের শিকার ছিলেন সচিন।
১৬১৭
ভারতের সঙ্গে প্রাইসের আরও একটি সুখকর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তিনি এক বার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দিল্লি চিড়িয়াখানায় এক কর্মী তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন। বলেছিলেন, তাঁর ছেলে বাঁ হাতি স্পিনার এবং তিনি প্রাইসের ভক্ত। এই ঘটনাকে নিজের জীবনের সেরা স্বীকৃতি বলে মনে করেন প্রাক্তন এই স্পিনার।
১৭১৭
অবসর নেওয়ার পরে প্রাইস প্রথমে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। খেলার সাজসরঞ্জাম পাওয়া যায়, এ রকম একটি দোকান খুলেছিলেন। কিন্তু সেই ব্যবসা বেশি দিন ভাল চলেনি। দোকানটি এখনও আছে। পাশাপাশি, অর্থোপার্জনের জন্য এখন বাতানুকূল যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটর সারাইয়ের কাজ করেন বিশ্বের প্রাক্তন তিন নম্বর বোলার, রে প্রাইস।