প্রতিজ্ঞ: সুইংয়ে বাজিমাত করতে তৈরি আকাশ-ঈশান। ফাইল চিত্র
শহর থেকে মাঠের দূরত্ব প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার। যানবাহনের ব্যবস্থা শোচনীয়। বাস, অটোর রুট সম্পূর্ণ অন্য প্রান্তে। অ্যাপ ক্যাবই ভরসা। প্রচুর অনুরোধের পরে তারা মাঠে পৌঁছে দিতে রাজি হতে পারে। কারণ মাঠের চারপাশে কোনও বসতির চিহ্নই তো নেই। এসসিএ স্টেডিয়ামের গা ঘেসে চলে যাচ্ছে রেললাইন। সবুজ ক্ষেতের মধ্য দিয়ে।
রাজকোটের এই স্টেডিয়ামে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল দেখতে দর্শক আসবেন, তা আশা করেন না সৌরাষ্ট্রের ক্রিকেটারেরাও। কিন্তু বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এই ম্যাচের মর্যাদা অন্য। ৩০ বছর হয়ে গিয়েছে, রঞ্জি ট্রফির মুখ দেখেননি বাংলার সমর্থকেরা। শেষ বার ট্রফি উঠেছিল সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। সে জয়ের অন্যতম কান্ডারি অরুণ লাল এখন বাংলার কোচ। তাঁর সেই হার-না-মানা মানসিকতার ইঙ্গিত দলের মধ্যে স্পষ্ট। বঙ্গ সমর্থকেরা তাই আশায় বুক বেঁধেছেন।
এ দিকে সৌরাষ্ট্র শেষ সাত বছরে চার বার ফাইনালে উঠেছে। কাপ তোলা হয়নি। এই সুযোগ কোনও ভাবেই তারা ছাড়তে নারাজ। তাই বাংলাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে ব্যাটসম্যান সহায়ক উইকেটে। ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমার, আকাশ দীপদের নির্বিষ করার উদ্দেশ্য নিয়ে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন উইকেটের ঘাস ছাঁটা হচ্ছে, যেখানে বিপক্ষ অধিনায়ক জয়দেব উনাদকাটের উইকেটসংখ্যা ৬৫? বাংলার কোচ অরুণ লাল বলছিলেন, ‘‘ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল পুজারার। বাংলার পেস ত্রয়ীর বিরুদ্ধেও হয়তো দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করতে শুরু করেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে প্রথম দু’দিন কিছুটা সাহায্য তো পাওয়াই যাবে।’’
কর্নাটককে ধসিয়ে দেওয়া মুকেশ কুমার পিচের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ শ্যাডো প্র্যাক্টিস করছিলেন। মাঠ থেকে বেরনোর সময় বললেন, ‘‘পিচের গুড লেংথে ফাটল লক্ষ্য করেছেন? এই শুষ্ক আবহাওয়ায় দু’দিন পরেই তা বাড়বে। সেখানে বল ফেলতে পারলে কী হতে পারে আন্দাজ করেছেন?’’
তাই সেমিফাইনালের মতো তিন পেসার, দুই স্পিনার ছকে যাচ্ছে বাংলা। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে ওপেনিং জুটি নিয়ে। অনূর্ধ্ব-২৩ দল থেকে সুদীপ ঘরামিকে ওপেনার হিসেবে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার বাংলার অনুশীলনে শুরুতেই দেখে নেওয়া হল তাঁকে। বিপক্ষের দুই বাঁ-হাতি পেসার উনাদকাট ও চেতন সাকারিয়াকে সামলানোর আগে পরীক্ষা হল গীত পুরি ও রোশন সিংহের বিরুদ্ধে। তাঁদের দু’জনকেই নেট বোলার হিসেবে আনা হয়েছে রাজকোটে। কোচ সুদীপের ব্যাটিংয়ে খুশি। রঞ্জি ফাইনালে অভিষেক হওয়া মানে ফিরে আসা তিরিশ বছর আগের সেই স্মৃতি। ইডেনে দিল্লির বিরুদ্ধে রঞ্জি ফাইনালেই অভিষেক হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নামক এক ব্যক্তির। সেই সিদ্ধান্ত আশীর্বাদ হয়ে ফিরেছিল বাংলা শিবিরে। কোচও সেই ফর্মুলা মেনেই এগোতে চান। দল সূত্রের খবর, ইনিংস ওপেন করবেন সুদীপ ঘরামি। চার নম্বরে মনোজ অথবা ঋদ্ধিমানের মধ্যে একজন খেলবেন। শোনা গিয়েছে, ম্যাচের দিন মনোজের চোট ঠিক হয়ে গেলে তিনিই খেলবেন চার নম্বরে। অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরনের ছন্দও বড় উদ্বেগের কারণ। টেকনিকে কিছু গলদের জন্য ইনসুইং সমস্যায় ফেলছে। দলীয় সূত্রে জানা গেল, স্বয়ং বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর টেকনিকের বেশ কয়েকটি খুঁত তুলে ধরেছেন। দলের এক সদস্যের কাছে ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন সৌরভ। যতই হোন বোর্ড প্রেসিডেন্ট, তাঁর মন পড়ে আছে বাংলা শিবিরেই। ঈশ্বরনের হাতে কাপ দেখতে যে সৌরভও মরিয়া, তা অজানা নয়।
মরিয়া আরও এক অভিজ্ঞ সৈনিক। তিনি মনোজ তিওয়ারি। সেমিফাইনালে স্লিপে ক্যাচ নেওয়ার সময় আঙুলে লাগা সেই আঘাত, এখনও পুরোপুরি সারেনি। কিন্তু তিনি হারতে শেখেননি। আঙুলে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে তিন বার ব্যাট করলেন নেটে। ইয়র্কার, অথবা খাটো লেংথের বল এখনও সাবলীল ভাবে সামলাতে পারছেন না। কভার ড্রাইভ মারার পরে অজান্তেই ডান-হাত ঝাঁকিয়ে নিচ্ছেন। শরীর বলছে ঝুঁকি না নিতে, কিন্তু হৃদয় মানছে না। রঞ্জি ট্রফি জেতার স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছে সুযোগ কি আর নষ্ট করা যায়? মনোজ বলে গেলেন, ‘‘খালি হাতে ফেরার কোনও প্রশ্নই নেই। জেনে রাখুন, আঙুল ভেঙে গেলেও ফাইনাল খেলতাম। বাংলা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। বাংলাকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আসুক উনাদকাট ওর সর্বশক্তি নিয়ে। রঞ্জি ট্রফি ছাড়া
বাংলা ফিরবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy