রাফাই আজ রাজা! ম্যাচের পর সোনার মুহূর্ত।-প্রেম সিংহ
কে বলবে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে দুবাই টিমের হয়ে খেলছেন! জনতার সমর্থন তো তাঁরই দিকে বড় বড় ঢেউয়ের মতো ক্রমাগত উঠছে।
প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদালও যথেষ্ট বন্দিত। প্রচুর হাততালি কুড়োচ্ছেন। কিন্তু তিনি, রজার ফেডেরার যেন দেশি টেনিস-জনতার সচিন তেন্ডুলকর! ভিআইপি বক্সে একজন বললেনও এখন সচিন ঢুকলে বুঝতেন তিনি যদি ভারতের আদরের ছেলে হন, ফেডেরার হলেন জামাই। ৫-৬ হেরেও তিনি যে আবেগ কুড়োলেন তা লোকে বিজিত নয়, বিজয়ীর জন্য বরাদ্দ রাখে। নইলে তার পরও গ্যালারি প্ল্যাকার্ড তুলবে কেন, ঈশ্বর আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমরা শুধু রজারের আরাধনা করি।
এক সেটের খেলা শ্রেষ্ঠত্ব মাপার কোনও মাপকাঠি নয়। এ যেন টাইব্রেকে বার্সা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের নিষ্পত্তি করানো! তবু ফেডেরার বনাম নাদাল দেখতে কী চাঞ্চল্য! সকালে ইমরান খান বললেন, আজ রাতেই জাপান উড়ে যেতে হবে বলে দিল্লিতে থাকার মেয়াদ বাড়াতে পারছেন না। নইলে ম্যাচটা দেখে দিল্লি ছাড়তেন। রবি শাস্ত্রী দ্রুত মুম্বই থেকে চলে এসেছেন স্রেফ এই ম্যাচের টানে। ম্যাচ যখন নাদাল ৩-১ এগিয়ে এবং মনে হচ্ছে এখুনি শেষ, স্পনসর কর্তার কাছে দীপিকা পাড়ুকোনের ফোন এল, ‘‘আমি স্টেডিয়াম থেকে দশ মিনিট দূরে। আসব কি?’’ তাঁকে বারণ করা হল আপনি আসতে-আসতে ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। এসে কী করবেন? কে জানত, এখুনি শেষ হয়ে যাচ্ছে এটা ফেডেরার-নাদাল ম্যাচের টেমপ্লেট কখনও নয়। ফেডেরার ম্যাচে নাটকীয় ফিরলেন। তার পর আবার শেষে এসে নাদাল ছিনিয়ে নিলেন ম্যাচ। দীপিকা এলে শেষ কয়েকটা পয়েন্ট দেখতেই পেতেন।
তারাদের রঁদেভু। (উপরে) নাদাল-দীপিকা। ফেডেরার-সানিয়া।-প্রেম সিংহ ও কোকা কোলার সৌজন্যে।
দিল্লিতে হওয়া এই আইপিটিএল গত দু’দিন একটা অকিঞ্চিৎকর, মশালা ধুমধাম মনে হচ্ছিল। আজ দুই মহাপ্রতিদ্বন্দ্বীর টক্করে সেই অসহ্য প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার পারফিউম কোথায় উড়ে গেল। শনিবারও দু’জন কোর্টে পা দেওয়ার আগে অবধি জনতারও কোনও যেন উৎসাহ নেই। সাইকিডেলিক আলোয় রংবাহার চলছে। আলো-আঁধারি চলছে। কিন্তু উৎসবে হৃদয় কোথায়। শব্দই শুধু আছে, অনুভূতি নেই।
তারই মধ্যে সকাল থেকে ঠাণ্ডা বেড়েছে। সঙ্গে হাওয়া। দিল্লিওয়ালারা এত বড় টুর্নামেন্ট সংগঠনের উপযুক্ত নয়, এমন উপসংহার গেড়ে বসছে ঠিক এই সময় এঁরা দু’জন সমীকরণটাই বদলে দিলেন। কথা হচ্ছিল দিল্লিতে লোকে শুধু কমপ্লিমেন্টারি পাস নিয়েই টেনিস দেখতে আসে। কেউ টিকিট কাটতে আগ্রহী নয়। অথচ আজ ‘বুক মাই শো’-য়ে এই ম্যাচের সাড়ে তেরো হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ দেখা গেল গ্যালারিতে হাজার আঠারো লোক। আর প্রচণ্ড চিৎকার যেন ইডেনে কেকেআর খেলছে।
রক অ্যান্ড রোল টেনিসের অনিশ্চিত দিকগুলো উড়ে গিয়ে ক্ষত্রিয়ের ইগো, প্রাণপণ চেষ্টা, জেতার জন্য আকুলি-বিকুলি এই সব ব্যাপার হাজির হয়ে গেল।
ডাবলস দিয়ে শুরু। এক দিকে রোহন বোপান্না আর নাদাল। অন্য দিকে ফেডেরার আর চিলিচ। একটা সময় নাদাল আর ফেডেরার কোর্টে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ডাবলসের প্র্যাকটিস করছেন। আর সেকেন্ডে সেকেন্ডে মোবাইলের ফ্ল্যাশ চমকাচ্ছে গ্যালারি থেকে। এমন ছবি কেউ এখানে দেখেনি। দেখবে বলেও ভাবেনি। হোক না প্রদর্শনী। মেসি আর রোনাল্ডো পাশাপাশি মানেই তো সোনার মুহূর্ত! তাই যত না লোকে ছবি তুলছে, তার চেয়ে বেশি ভিডিও তুলছে। হঠাৎ মনে পড়ল মাঝ ডিসেম্বরের দিল্লিতে এঁরা পাশাপাশি। মাঝ জানুয়ারিতেই মেলবোর্ন পার্কে হয়তো আবার সেই বাঘ-সিংহের যুদ্ধ।
নাদালকে গত ক’দিন যাঁরা এখানে কাছ থেকে দেখছেন টুর্নামেন্টের সঙ্গে জড়িত সেই কর্তাব্যক্তিরা ডাবলস কিছুক্ষণ চলার পরেই বলতে শুরু করেন, ও আজ ৬-৩ উড়িয়ে দেবে ফেডেরারকে। অসম্ভব খাটছে এই ক’দিন ধরে। কাল খেলা ছিল না। তা-ও তিন ঘণ্টা ট্রেনিং করেছে।
রাতের সাংবাদিক সম্মেলনে ফেডেরার বললেন, ‘‘রাফা এখানে দু’দিন আগে এসেছে। একটা ম্যাচ এর আগে খেলেছে। আমি সে দিক থেকে নতুন মরসুম শুরু করছি। একটু জড়সড়ো ছিলাম। আর এক সেট ব্যাপারটা এমন যে শুরুর আগেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে গিয়ে ভাবতে হয়, কী ঘটল।’’
মধ্যিখানে মহেশ ভূপতি। একদিকে নাদাল। একদিকে রজার। পিছনে ফ্যানরা এত জোর চেঁচাচ্ছে যে কাচের দরজা ভেদ করে সেই আওয়াজ পৌঁছোচ্ছে। আজ পর্যন্ত কখনও কোনও সাংবাদিক সম্মেলন দেখিনি যেখানে বন্ধ ঘরের কথাবার্তাকে ডুবিয়ে দিতে পারে ফ্যানদের চিৎকার। ফেডেরার হাসছেন। নাদালও। কিন্তু আসলে এক জনই হাসছিলেন। আর এক জন কষ্ট পাচ্ছিলেন।
লেন্সবন্দি মায়ার রাত।-গৌতম ভট্টাচার্য।
নইলে ও একদিন আগে আসার সুবিধে পেয়েছে, এই কথাটা বলবেন কেন? ফেডেরার এমনও বলে গেলেন, নতুন যে কোচকে নিয়েছি সে সমসাময়িক প্লেয়ার। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে অনেক বেশি ইনফর্মেশন দিতে পারবে। এটা কি ঘুরিয়ে নাদালকে শোনালেন? কে জানে? জিতে উঠে সুখী নাদাল সেটা আদৌ শুনছিলেন?
রাফা সরাসরি ‘হেড টু হেড’-এ যতই ফেডেরারের চেয়ে ২৩-১১ এগিয়ে থাকুন, এই মুহূর্তে তো চোট সারিয়ে ফিরেছেন। প্রদর্শনী টুর্নামেন্টে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানোটাও এই মুহূর্তে তাঁর কাছে বিশাল টনিক। হেরো ফেড-এক্স সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করেই উঠে চলে গেলেন। জানালেন, পরের বার আইপিটিএল খেলবেন কি না ঠিক নেই। আর রাফা? বলেন, ‘‘আবার আসব।’’ সাংবাদিকরা ছবি তুলছিলেন। তাঁদের বললেন, ‘‘সেলফি তুলুন না আমার সঙ্গে।’’ প্রায় পাঁচ মিনিট ফেড-এক্স চলে যাওয়ার পরেও দাঁড়ালেন। দৃশ্যতই তাঁর চোখেমুখে ট্রফি জয়ের আনন্দ।
এক সেট বলে ব্যাপারটা কখনওই মহাকাব্যিক দিকে যাওয়া সম্ভব নয়। ফেডেরার যেমন। শুরুর দিকে অর্জুন গাণ্ডীব তুলতে না পারলে যেমন হয়, তাঁর তেমনই অবস্থা। ফার্স্ট সার্ভ কাজ করছে না। এর পর ফোরহ্যান্ডও বাইরে পড়া শুরু হল। প্রায় ভরা গ্যালারির সামনে তিনি দিশেহারা। এটা অবশ্যই পছন্দ হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়। যতই হোক না প্রদর্শনী টেনিস। দ্রুত তিনি খেলায় ফিরলেন। আবার নাদাল ছিনিয়ে নিলেন খেলাটা টাইব্রেকে। দ্বিতীয় সেট থাকলে অবশ্যই তীব্রতা বাড়ত। কিন্তু এই ফর্ম্যাটে যে তা নেই।
দুধের স্বাদ তাই ঘোলে! কিন্তু ফেডেরার-নাদাল সংঘর্ষ দিয়ে তৈরি ঘোল নিশ্চয়ই অভুক্ত থাকার চেয়ে ঢের ভাল।
এখন ‘গোলগাপ্পা (ফুচকা) টেস্টিং’। ফেডেরারদের ভালই লেগেছে ফুচকা। তবে ম্লাদেনোভিচের হয়তো অতটা ভাল লাগেনি! টুইটারে সানিয়া মির্জা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy