Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
wrestling

Ravi Dahiya: রুপোজয়ী রবির মতো কবি রবিও মজেছিলেন কুস্তিতে, গোবর গোহর বাংলায় অস্তমিত আখড়া

১৯২১ সালে আমেরিকায় কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন বাংলার গোবর গুহ। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দও কুস্তি চর্চা করতেন। সে সব এখন ইতিহাস।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর কুস্তি চর্চার কথা নিজেই লিখেছেন।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর কুস্তি চর্চার কথা নিজেই লিখেছেন। ফাইল চিত্র

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২১ ১৬:৪৫
Share: Save:

কুস্তিতে পদক এল ভারতে। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে ভারত রবির উদয়ে উল্লসিত দেশ। এই বাংলাতেও খুশির জোয়ার। কারণ, একটা সময় পর্যন্ত দেশে কুস্তি চর্চায় এগিয়ে থাকা রাজ্যের অন্যতম ছিল বাংলা। এখনও যে হয় না, তা নয়। তবে দিন দিন কমছে। বিশ্বখ্যাত কুস্তিগির গোবর গুহ শুধু নন, বাংলার কুস্তি চর্চার কথা উঠলে উল্লেখ করতে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামও। ছেলেবেলায় তিনিও নিয়মিত কুস্তি চর্চা করতেন।

একটা সময় বাংলায় কুস্তি চর্চার রমরমা ছিল। উনিশ শতকের গোড়ার দিক থেকেই বাংলার কুস্তির আখড়াগুলি জমে উঠতে শুরু করে। মল্লযুদ্ধে শুধু পুরুষ নয়, মহিলাদেরও অংশগ্রহণ ছিল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কলকাতায় কুস্তিকে খেলা হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলায় বড় ভূমিকা ছিল রাজা বৈদ্যনাথ রায়ের। কুস্তিপ্রেমী বৈদ্যনাথ একটা বড়সড় আখড়াও তৈরি করিয়েছিলেন। পাথুরিয়াঘাটার দেওয়ান নন্দলাল ঠাকুরের বাড়ির সামনের আখড়াতেও অনেকে আসতেন। অত পুরনো দিনের কথা না বাদ দিলেও কুস্তির চর্চা বাংলায় কয়েক দশক আগেও খুবই জনপ্রিয় ছিল। তবে এখন অধিকাংশ আখড়াই অস্তমিত। যে ক’টি রয়েছে সেগুলিও কোনওরকমে টিকে আছে।

কুস্তি চর্চা বাঙালির জীবনে কতটা জনপ্রিয় ছিল তার উল্লেখ পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদিগকে বিচিত্র বিষয়ে শিক্ষা দিবার জন্য সেজদাদার (হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর) বিশেষ উৎসাহ ছিল। ইস্কুলে আমাদের যাহা পাঠ্য ছিল বাড়িতে তাহার চেয়ে অনেক বেশি পড়িতে হইত। ভোরে অন্ধকার থাকিতে উঠিয়া লংটি পরিয়া প্রথমেই এক কানা পালোয়ানের সঙ্গে কুস্তি করিতে হইত। তাহার পরে সেই মাটিমাখা শরীরের উপরে জামা পরিয়া পদার্থবিদ্যা, মেঘনাদবধকাব্য, জ্যামিতি, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল শিখিতে হইত। স্কুল হইতে ফিরিয়া আসিলেই ড্রয়িং এবং জিমনাস্টিকের মাস্টার আমাদিগকে লইয়া পড়িতেন।’

বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক বিশ্বনাথ রায়ের বক্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ নিজের কুস্তি চর্চার কথা বলেছেন। বিভিন্ন খেলাধুলোর বিষয়ে তাঁর খুবই আগ্রহ ছিল। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী তৈরির পরে তিনি জাপান থেকে প্রশিক্ষক এনেছিলেন পড়ুয়াদের জুডো, ক্যারাটে শেখানোর জন্য। এ ছাড়াও নানা খেলার প্রসারে তিনি উদ্যোগী হয়েছেন।’’ বিশ্বনাথ আরও বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মনের গঠনের জন্য স্বাস্থ্যচর্চা প্রয়োজন বলেই মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ। মোহনবাগানের খেলোয়াড় গৌরগোপাল ঘোষও ছিলেন কবিগুরুর সঙ্গী। তাঁর নামেই শান্তিনিকেতনের গৌরপ্রাঙ্গণ।’’

রবীন্দ্রনাথের এই দিকটা বাঙালি মনে না-রাখাতেই বাংলার ক্রীড়া ক্ষেত্র ততটা যত্ন পায়নি বলেই মনে করেন ক্রীড়া গবেষক অভীক চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে যতটা চর্চা করি, ততটা তাঁর ক্রীড়া প্রেম নিয়ে নয়। আর কুস্তির ক্ষেত্রে বাংলার পিছিয়ে পড়ার কারণটা অনেক গভীরে।’’ অভীক মনে করেন, পরাধীনতার সময় আগে বাঙালি নিজের মধ্যে বীরভাব জাগিয়ে তোলার যে চেষ্টা করতেন সেটা স্বাধীনতার পরে একটু একটু করে কমেছে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় কুস্তির চর্চা স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে। যতীন্দ্রচরণ গুহ বা ‘গোবর গোহ’ (ব্রিটিশদের উচ্চারণে ‘গুহ’ হয়ে যায় ‘গোহ’) ১৯২১ সালে আমেরিকায় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। তাঁর পিতামহ অম্বিকাচরণ গুহ বাংলার প্রথম আখড়া তৈরি করেন উত্তর কলকাতার মসজিদবাড়ি স্ট্রিট এলাকায়। স্বামী বিবেকানন্দও সেখানে কুস্তি চর্চা করতে আসতেন।’’

বাংলার কুস্তি চর্চা যে কমছে তা মানছেন রাজ্য কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসিত সাহাও। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে দিন দিন কমছে আখড়ার সংখ্যা। তা-ও এখনও শ’খানেক রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কুস্তি নিয়ে ছেলেমেয়েদের আগ্রহ বেশি। তবে সবটাই দিন দিন কমছে।’’

কেন কমছে? অসিত বলেন, ‘‘আসলে কুস্তিতে সুযোগ সুবিধা কম। প্রথমত গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরাই এটা খেলতে আসে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার পায় না। কুস্তি খেলেয়াড়দের কাছে খাবার একটা বড় ব্যাপার। আর চাকরির সুযোগও কমছে। আগে পূর্ব রেলে চাকরির আশায় অনেকে কুস্তি চালিয়ে যেত। কিন্তু আজকাল রেলও অন্য রাজ্যের ছেলেমেয়েদের নিয়ে নেয়। তবু অনেকেই শুধু ভালবেসে কুস্তির আখড়ায় আসে নিয়মিত।’’

অসিতের আরও দাবি, কুস্তি এখন আর মাঠে হয় না। প্রতিযোগিতামূলক কুস্তি প্রশিক্ষণের জন্য আধুনিক ম্যাট দরকার। তার দাম কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য দরকার। কারণ, ক’টা আখড়ার আর ম্যাট কেনার সামর্থ্য আছে? তবে আমরা হাল ছাড়ছি না। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে কুস্তি দেশকে পদক এনে দেওয়ার পরে আশা করা যায় সরকারি সুনজর পাবে এই অ-জনপ্রিয় খেলা।’’

একটা সময় পর্যন্ত বাংলায় খুবই জনপ্রিয় ছিল কুস্তি।

একটা সময় পর্যন্ত বাংলায় খুবই জনপ্রিয় ছিল কুস্তি।

রবীন্দ্রনাথের এই দিকটা বাঙালি মনে না-রাখাতেই বাংলার ক্রীড়া ক্ষেত্র ততটা যত্ন পায়নি বলেই মনে করেন ক্রীড়া গবেষক অভীক চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে যতটা চর্চা করি, ততটা তাঁর ক্রীড়া প্রেম নিয়ে নয়। আর কুস্তির ক্ষেত্রে বাংলার পিছিয়ে পড়ার কারণটা অনেক গভীরে।’’ অভীক মনে করেন, পরাধীনতার সময় আগে বাঙালি নিজের মধ্যে বীরভাব জাগিয়ে তোলার যে চেষ্টা করতেন সেটা স্বাধীনতার পরে একটু একটু করে কমেছে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় কুস্তির চর্চা স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে। যতীন্দ্রচরণ গুহ বা ‘গোবর গোহ’ (ব্রিটিশদের উচ্চারণে ‘গুহ’ হয়ে যায় ‘গোহ’) ১৯২১ সালে আমেরিকায় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। তাঁর পিতামহ অম্বিকাচরণ গুহ বাংলার প্রথম আখড়া তৈরি করেন উত্তর কলকাতার মসজিদবাড়ি স্ট্রিট এলাকায়। স্বামী বিবেকানন্দও সেখানে কুস্তি চর্চা করতে আসতেন।’’

বাংলার কুস্তি চর্চা যে কমছে তা মানছেন রাজ্য কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসিত সাহাও। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে দিন দিন কমছে আখড়ার সংখ্যা। তা-ও এখনও শ’খানেক রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কুস্তি নিয়ে ছেলেমেয়েদের আগ্রহ বেশি। তবে সবটাই দিন দিন কমছে।’’

গোবর গোহ। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের গর্ব।

গোবর গোহ। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের গর্ব।

কেন কমছে? অসিত বলেন, ‘‘আসলে কুস্তিতে সুযোগ সুবিধা কম। প্রথমত গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরাই এটা খেলতে আসে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার পায় না। কুস্তি খেলেয়াড়দের কাছে খাবার একটা বড় ব্যাপার। আর চাকরির সুযোগও কমছে। আগে পূর্ব রেলে চাকরির আশায় অনেকে কুস্তি চালিয়ে যেত। কিন্তু আজকাল রেলও অন্য রাজ্যের ছেলেমেয়েদের নিয়ে নেয়। তবু অনেকেই শুধু ভালবেসে কুস্তির আখড়ায় আসে নিয়মিত।’’

অসিতের আরও দাবি, কুস্তি এখন আর মাঠে হয় না। প্রতিযোগিতামূলক কুস্তি প্রশিক্ষণের জন্য আধুনিক ম্যাট দরকার। তার দাম কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য দরকার। কারণ, ক’টা আখড়ার আর ম্যাট কেনার সামর্থ্য আছে? তবে আমরা হাল ছাড়ছি না। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে কুস্তি দেশকে পদক এনে দেওয়ার পরে আশা করা যায় সরকারি সুনজর পাবে এই অ-জনপ্রিয় খেলা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy