সাহানারা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
সেই সিন্ধু যে দিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন, সেই রাত মেসের বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হৈ করে খাওয়া-দাওয়া করে কাটিয়েছিলেন কলকাতার বেলেঘাটা দেশবন্ধু গার্লস স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাহানারা খাতুন। এই ব্যাডমিন্টন খেলার টানেই বহরমপুর ছেড়ে কলকাতার স্কুলে ভর্তি হওয়া তাঁর। উদ্দেশ্য সাইয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া। কিন্তু এত বড় সিদ্ধান্ত নেওার পিছনে বাবা মানোয়ারা শেখ ও মা নাজমিরা বিবির সমর্থন তাঁকে সাহস জুগিয়েছে। সাহানারা বলছেন, ‘‘বহরমপুরে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে স্কুলে যাওয়া এবং বিকেলে ক্লাবে অনুশীলন করে কাটিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু স্বেচ্ছায় এই জীবন বেছে নেওয়ার পিছনে রয়েছে সিন্ধু। আমি সিদ্ধুর মতো হতে চাই।’’
রামকৃষ্ণ ব্যায়াম মন্দির আয়োজিত জেলা স্তরের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার অনূর্ধ্ব ১৭ বছর মহিলা সিঙ্গলস বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সাহানারা। সাহানারা বলছেন, ‘‘যখন নবম শ্রেণিতে, তখন রামকৃষ্ণ ব্যায়াম মন্দিরে ভর্তি হই। নিয়মিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। এখন ব্যাডমিন্টনের প্রতি এতটাই ভালবাসা জন্মে গিয়েছে যে, সেই খেলার টানেই কলকাতা চলে আসা। একটা মেসে থাকি। প্রতি দিন সকালে সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠে সাইয়ে যাই প্রশিক্ষণ নিতে। ফিরি সাড়ে ৮টা নাগাদ। এর পরে স্নান-খাওয়া সেরে স্কুল। বিকেলে কখনও কখনও অনুশীলন থাকলে যেতে হয়।’’ পুজোর সময়ে স্কুল ছুটি থাকবে দীর্ঘ দিন। কিন্তু পুজোর সময়ে চার দিনের জন্য বহরমপুরের বাড়িতে ফিরবেন সাহানারা। পুজোর পরেই রয়েছে টানা অনুশীলন। সাহানারা জানান, ফলে চার দিনের ছুটি কাটিয়ে তাঁকে কলকাতায় ফিরে আসতে হবে।
সাহানারা সিঙ্গলসে জয়ী হলেও এ বছর ডাবলসে জয়ী হয়েছেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তহমিনা ইয়াসমিন। ব্যাডমিন্টন অনুশীলনের জন্য প্রতি দিন মেয়েকে নিয়ে সালার থেকে বিকেলে বহরমপুরের ক্লাবে পৌঁছে দিয়ে সেখানেই ক্লাব প্রাঙ্গনে ঠাঁই বসে থাকেন বাবা রবিউল হক। গত পাঁচ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে। তা নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়-পরিজনের কম গঞ্জনা শুনতে হয়নি পিতা রবিউলকে। কেউ বলেছেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলে মেয়ে বড় তারকা হবে’, কেউ আবার ‘মেয়ে বড় হচ্ছে, তাঁকে নিয়ে এ ভাবে ছেলেদের সঙ্গে পাশাপাশি খেলতে পাঠানোর মানে হয় না’ বলেও পরামর্শ দিয়েছেন।
ওই সব কথায় অবশ্য কোনও দিনই কান দেননি রবিউল। ব্যাডমিন্টন খেলার প্রতি মেয়ের আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখে নিজের চালু ব্যবসা ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে সালার-বহরমপুর যাতায়াত থেমে যায়নি তাঁর। রবিউল বলেন, ‘‘যারা মেয়ের ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে আড়ালে-আবডালে নানা কথা বলত, এখন তাঁরা টিভিতে পিভি সিন্ধুর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে তারা মুখ লুকিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy