Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
PV SINDHU

অলিম্পিকে সোনা জেতাই লক্ষ্য, এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বললেন পিভি সিন্ধু

এই মুহূর্তে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের পয়লা নম্বর তারকা সিন্ধু আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে।

সিন্ধু কি টোকিয়োয় ফের তুলে ধরতে পারবেন তেরঙা? —ফাইল চিত্র।

সিন্ধু কি টোকিয়োয় ফের তুলে ধরতে পারবেন তেরঙা? —ফাইল চিত্র।

সৌরাংশু দেবনাথ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৫৮
Share: Save:

সিন্ধুসভ্যতা!

পি ভি সিন্ধু বা পুসারলা ভেঙ্কটা সিন্ধুর যে কোনও সাফল্য এ ভাবেই চিহ্নিত হয় প্রচারমাধ্যমে। কোনও সন্দেহ নেই, এই মুহূর্তে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের পয়লা নম্বর তারকা হলেন ২৫ বছর বয়সি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ব্যাডমিন্টনে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তিনি। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনে পদকজয়ীও। খেলরত্ন, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, মুকুটে রয়েছে একাধিক রাষ্ট্রীয় সম্মান।

হায়দরাবাদী একসময় ছিলেন মহিলাদের র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের দুই নম্বর। এখন পিছিয়ে সাতে। করোনা অতিমারির ভয়াবহতা কাটিয়ে প্রায় ছয় ফুটের সিন্ধু এখন পাখির চোখ করছেন অলিম্পিককে। আর সেই সঙ্কল্পের কথাই ফুটে উঠল আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে। অকপট আলাপচারিতায় উঠে এল লড়াকু শাটলারের নানা দিক।

ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’ আপনি। এত ভালবাসা, ভক্তদের শুভেচ্ছা কোথাও গিয়ে কি বাড়তি চাপ হয়ে ওঠে?

সিন্ধু: আমাকে ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’ বলা হয়, এটা সব সময়ই শুনতে ভাল লাগে। উপভোগ করি। প্রচুর ভালবাসা পাই। সমর্থন পাই। এটার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ। তবে এটা আমার কাছে কখনই বাড়তি চাপের নয়। আমি বরং এটাকে পজিটিভ ভাবে দেখি। ভাবি যে, এত মানুষের সমর্থন আছে আমার পিছনে, এত মানুষ ভালবাসেন আমাকে। এটা একটা সুন্দর অনুভূতি। যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। টের পাই এত মানুষ চান আমার জয় দেখতে। না, এটাকে চাপ হিসেবে সেই কারণেই মনে করি না। বরং এটা আমার কাছে বাড়তি শক্তির মতো।

যাঁর কোচিংয়ে ‘সিন্ধু’ হয়ে ওঠা, সেই গোপীচন্দের সঙ্গে। —ফাইল চিত্র।

অল ইংল্যান্ড ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের পর প্রায় পাঁচ মাস কেটে গিয়েছে। কোভিড, লকডাউনের এই কয়েক মাস বিশেষ করে ক্রীড়াবিদদের কাছে আরও বেশি কঠিন। প্র্যাকটিসবিহীন এই সময়ের রুটিনে কী কী পরিবর্তন এল?

সিন্ধু: এই করোনা কালে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে সবার জীবনই কার্যত থেমে গিয়েছে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে দুনিয়া। ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা সত্যিই আরও কঠিন। আমরা প্র্যাকটিস করতে পারিনি বেশ কিছু দিন। ট্র্যাভেল তো করতেই পারিনি। তবে আমরা এখন প্র্যাকটিস শুরু করেছি। ট্রেনিংও শুরু করেছি। হ্যাঁ, গত পাঁচ মাস ছিল বিষাদময়। তবে আমি বাড়িতেই ট্রেনিং করে অভ্যস্ত। তাই বাড়ির বাইরে বেরনোর দরকার পড়েনি সে ভাবে। যদিও ব্যাডমিন্টন খেলতে পারিনি। কারণ, তখন সবকিছুই বন্ধ ছিল। আমি অবশ্য ট্রেনিং চালিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ট্রেনার একটা শিডিউল দিয়েছিলেন। সেটাই মেনে চলেছি। যখন কোর্টে ফিরলাম র‌্যাকেট হাতে, তখন একটু সময় লেগেছিল। আড়ষ্টতা কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছি ক্রমশ। এখন আমি একদম ঠিক আছি। দ্রুত ফর্মে ফিরছি।

আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করাতে আগ্রহী বিখ্যাত স্পেনীয় কোচ, পাঠালেন জীবনপঞ্জী

থমকে যাওয়া জীবন কবে চালু হবে সেটা বোঝা না যাওয়ায় কখনও হতাশা গ্রাস করেনি?

সিন্ধু: আমি খুব ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছি। খুব পজিটিভ ছিলাম যে, সবকিছু এক সময় ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। আমি বাড়িতে এক্সারসাইজ চালিয়ে গিয়েছি। শ্যাডো প্র্যাকটিস করে গিয়েছি। আমি এখন পুরোদস্তুর অনুশীলন করছি। ফলে, চেনা রুটিন সঙ্গী হচ্ছে। এটাই স্বস্তির।

২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে রুপো পেয়েছিলেন। এ বার অলিম্পিকে সোনার লক্ষ্যে এক বছরের বাড়তি সময় কতটা সাহায্য করবে?

সিন্ধু: আগের বার রুপো পেয়েছিলাম। এ বার অবশ্যই সোনা জেতা লক্ষ্য। তবে কাজটা একেবারেই সহজ নয়। আমি নিশ্চিত যে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। আর আমি তা করবও। যখন পিছিয়ে গেল, তখন অলিম্পিকের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি ছিল। এখন এক বছরের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে। আমি এটাকে পজিটিভ দৃষ্টিকোণে দেখছি যে, বাড়তি এক বছর সময় পাচ্ছি। সেই সময়টা কাজে লাগাতে হবে। আমি ঘাম ঝরাব কোর্টে। স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমি সে ভাবেই ভাবছি। যে, এর ফলে আরও শিখতে পারব। আরও অনেকগুলো স্ট্রোকস আয়ত্তে আনতে পারব।

গত বছর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। সেটা কতটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে?

সিন্ধু: হ্যাঁ, ওই সোনা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেক অপেক্ষার পর ওই জয় এসেছিল। এর আগে দুটো ব্রোঞ্জ ও দুটো রুপো জিতেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সোনা জিতেছিলাম গত বছর। খুব খুশি হয়েছিলাম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পেরে। ফিরে তাকালে মনে হয় যেন, সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছিলাম।

ওই জয় নিশ্চয়ই অনেক স্বস্তি এনেছিল যে ফাইনালে হারের তকমা আর বইতে হবে না।

সিন্ধু: (হেসে) ওই তো বললাম! ফাইনালে আর হারতে হচ্ছে না, এটাই প্রথম মাথায় এসেছিল। অবশেষে ফাইনালে জিততে পারা ছিল বিশাল স্বস্তির। জিততে মরিয়া ছিলাম। প্রচণ্ড ভাবে চেয়েছিলাম ফাইনালে সোনা পেতে। আগের দু’বারই রুপো পেয়েছিলাম। আরও একটা রুপো চাইনি একেবারেই। আর সেই কারণেই উজাড় করে দিয়েছিলাম। নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছিলাম। দিয়েওছিলাম।

ক্যারোলিনা মারিনের সঙ্গে আপনার ডুয়েল তো অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।

সিন্ধু: মারিন আমার খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু, কোর্টে তো দু’জনেই জেতার জন্য নামি। জেতার জন্য আগ্রাসী থাকতেই হয়। আর খেলায় তো দু’জন একসঙ্গে জিততে পারে না। কাউকে হারতেই হয়। এক জনই জেতে শেষ পর্যন্ত। তাই সেটা মাথায় রেখেই আমি ও ক্যারোলিনা মারিন একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলি। তবে খেলা শেষের পর আমরা ফের বন্ধু হয়ে উঠি।

যে কোনও সফল ছাত্রের পিছনেই থাকেন গুরু। আপনার যেমন আছেন গোপীচন্দ।

সিন্ধু: হ্যাঁ, ওর অবদান অবশ্যই বিশাল। উনি যে ভাবে আমাকে ট্রেনিং করিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এই মুহূর্তে কোরীয় কোচ পার্ক ট্রেনিং করাচ্ছেন আমাকে। দু’জনকেই আমার ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। যিনি যখনই আমাকে কোচিং করেছেন, তাঁর কাছেই অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। ধাপে ধাপে আমার খেলায় উন্নতি এনেছেন তাঁরা। নানা কোচের থেকেই নানা কিছু শিখেছি।

আরও পড়ুন: দেশের হয়ে অলিম্পিক পদক জিততে চাই, এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বললেন সানিয়া মির্জা​

আপনার বাবা পিভি রামান্না এশিয়াডে ব্রোঞ্জ জয়ী ভলিবল দলের সদস্য। অর্জুনও পেয়েছেন। মা বিজয়াও ভলিবল খেলতেন। বাবা-মা দু’জনেই ক্রীড়াবিদ হওয়ায় কতটা সুবিধা হয়েছে?

সিন্ধু: আমি খুবই ভাগ্যবান যে এমন বাবা-মা পেয়েছি। দু’জনেই গাইড করেছেন আমাকে। দু’জনেই ক্রীড়াবিদ ছিলেন। ফলে, জানতেন যে খেলোয়াড় হিসেবে বড় হয়ে ওঠার পথে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাঁরা সব রকম পরিস্থিতিতেই পাশে থেকেছেন, আমাকে মোটিভেট করেছেন। বড় হওয়ার দিনগুলোয় তাঁদের অভিজ্ঞতা আমার বর্ম হয়ে উঠেছিল। তাঁরা জানতেন কী পরামর্শ দিতে হয়, কোন পর্যায়ে কী ভাবে এগোতে হয়। ওঁরা নিজেরাও এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমাকে বলতেন। হ্যাঁ, এটা মস্ত বড় অ্যাডভান্টেজ ছিল। কোর্টে কোনও ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সেটা ধরিয়ে দিয়েছেন। বলতেন যে, তুমি এটা করেছো, এটা এ ভাবে করা উচিত ছিল। সেই কথা শুনে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করেছি, ভুলগুলো শুধরে নিয়েছি।

ফোর্বসের মতে আপনি বিশ্বের ত্রয়োদশ ধনী মহিলা অ্যাথলিট। এটা কী ভাবে দেখছেন?

সিন্ধু: (হেসে) বিশ্বের সেরা তারকাদের সঙ্গে আমি রয়েছি। অবশ্যই আমি খুশি। ওই তালিকায় নিজের নাম দেখতে পেয়ে ভালই লেগেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

PV SINDHU Carolina Marin Badminton Pullela Gopichand Olympics Tokyo Olympics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy