নজরে: পুজারার দুর্ভেদ্য রক্ষণ প্রশংসিত ক্রিকেট দুনিয়ায়। ফাইল চিত্র।
তাঁর মানসিক কাঠিন্য এবং ধৈর্যের জন্য ক্রিকেট দুনিয়ায় একটা আলাদা পরিচিতি আছে চেতেশ্বর পুজারার। কিন্তু এই মানসিক কাঠিন্য তৈরি হওয়ার নেপথ্য কাহিনিটা কী? নিজেকে কী ভাবে এই জায়গায় নিয়ে এলেন পুজারা? জানা গিয়েছে, এর পিছনে রয়েছে দুটো মন্ত্র। এক, যোগব্যায়াম এবং ধ্যান। দুই, গুরুর পরামর্শ।
একটি ইউটিউব চ্যানেলে পুজারা জানিয়েছেন, যাবতীয় নেতিবাচক ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিতে তিনি যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের সাহায্য নেন। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘প্রাচীর’ বলে পরিচিত পুজারার মন্তব্য, ‘‘একবার যদি আপনি নেতিবাচক ভাবনার শিকার হন, তা হলে দেখবেন, সব কিছুই খুব নিরাশাজনক লাগবে। সব কিছুর মধ্যেই একটা নেতিবাচক ভাবনার প্রভাব পড়বে। আমি রোজ যোগব্যায়াম করি, ধ্যান করি। রোজ প্রার্থনায় বসি। এ সবই আমাকে ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কতটা চাপের মুখে পড়তে হয়, তা ভালই জানেন পুজারা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই যে তাঁকে চাপের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল, তা এ দিন জানিয়েছেন ভারতীয় টেস্ট ব্যাটিংয়ের এই স্তম্ভ। এমনকি, কখনও কখনও ছোট্ট পুজারার মনে হয়েছিল, ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দেন। সাক্ষাৎকারে পুজারা বলেছেন, ‘‘আমার জীবনে একটা সময় এসেছিল, যখন মনে হয়েছিল আর চাপ সামলাতে পারব না। ছোটবেলায় এমন পরিস্থিতিতে মায়ের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করতাম। বলতাম, এই চাপ নিয়ে আর ক্রিকেট খেলতে পারছি না। ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দেব।’’ কিন্তু সেই ছবি এখন বদলে গিয়েছে। ৮৫ টেস্টে ৬২৪৪ রানের মালিক বলেছেন, ‘‘এখন আমি জানি কী ভাবে চাপ সামলাতে হয়।’’
মাত্র ১৭ বছর বয়সে মা মারা যাওয়ার পরে এক আধ্যাত্মিক গুরুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন পুজারা। তাঁর কথায়, ‘‘মানসিক স্বাস্থ্যটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি মাথা পরিষ্কার না থাকে, তা হলে সব কিছু নিয়েই প্রশ্ন জাগে মনে। আবার যদি মনটা হাসিখুশি থাকে, তা হলে সুস্থ, হাসিখুশি জীবন যাপন করা যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার মা মারা যাওয়ার পরে আমি এক আধ্যাত্মিক গুরুর কাছে গিয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন, এই ধাক্কাটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। উনি এও বলেন, বিশ্বাসটা রেখে যেতে হবে। এই বিশ্বাসটাই আমাকে এগিয়ে
নিয়ে চলেছে।’’
নিজের প্রতি এই বিশ্বাসটাই এর পরে ধীরে ধীরে খেলার মধ্যে ফুটিয়ে তোলেন পুজারা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারি, এই বিশ্বাসটা নিজের খেলাতেও ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। জীবনে তো বটেই। ঈশ্বরের প্রতি এই বিশ্বাসই আমার জীবনের সব চেয়ে বড় বস্তু।’’
লাল বলের ক্রিকেটে তিনি ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও সাদা বলের ক্রিকেট থেকে ক্রমে ব্রাত্য হয়ে পড়েন। যখন প্রচুর ক্রিকেটার বিশাল অঙ্কের বিনিময় চুক্তি করছে আইপিএল দলগুলোর সঙ্গে, তখন তিনি ছিলেন অন্তরালে। পুজারা স্বীকার করেছেন, আইপিএলে দল না পাওয়াটা তাঁকে কষ্ট দিয়েছিল। সৌরাষ্ট্রের এই ব্যাটসম্যানের কথায়, ‘‘ওই সময়টা খুব কঠিন ছিল। নিলামে উঠে বার বার দল না পাওয়াটা আঘাত করত আমাকে। কিন্তু সেটা আমার হাতে ছিল না। পরে বুঝলাম, আমাকে সেই কাজগুলো ঠিকঠাক করতে হবে, যা আমার হাতে আছে। তাই সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করে গিয়েছি।’’ যার ফলও তিনি পেয়েছেন। এ বারের নিলামে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস কিনে নিয়েছিল পুজারাকে। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে আইপিএল মাঝপথে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় মাঠে নামার সুযোগ হয়নি পুজারার।
এক জন ক্রীড়াবিদকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কতটা চাপ সামাতে হয়, তা ভালই জানেন পুজারা। যে কারণে তিনি মনে করছেন, ক্রিকেটারদের উচিত ক্রীড়া মনোবিদদের সাহায্য নেওয়া। এবং, সেটা শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেট যাঁরা খেলেন, তাঁদেরও একই পরামর্শ দিচ্ছেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। পুজারা বলেছেন, ‘‘আমি দেখেছি, অনেক ঘরোয়া স্তরের ক্রিকেটার যখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখছে, তখন আর চাপ সামলাতে পারছে না। আমি এও দেখেছি, সেরা ক্রীড়াবিদরাও মনোবিদের পরামর্শ নিচ্ছে এবং তাতে উপকৃতও হচ্ছে।’’
নিজের উদাহরণ দিয়ে পুজারা বলেছেন, ‘‘আমি নিজেও অনেক মনোবিদের সঙ্গে কথা বলেছি। এতে উপকারও পেয়েছি। মানসিক সমস্যায় পড়লে সব সময় মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে। সে সব দূর করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। মনোবিদদের সঙ্গে কথা বলার পরে আমার দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গিয়েছিল।’’ সবার জন্য পুজারার পরামর্শ, ‘‘পদ্ধতিটার উপরে জোর দাও। ফল নিয়ে চিন্তা কোরো না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy