জুটি: ওভালেড়ানোর লড়াই। আগ্রাসী ক্রিকেটের ভঙ্গি ছাড়তে নারাজ কোহলী-শাস্ত্রী। ফাইল চিত্র।
বহির্বিশ্বে যতই তর্ক-বিতর্ক চলুক, যতই বিশেষজ্ঞদের মত-পাল্টা মতের স্রোত বয়ে যাক, ভারতীয় দলের হেড কোচ তাঁদের অবস্থান ঘোষণা করে দিলেন। মঙ্গলরার রাতে লন্ডনের অভিজাত হোটেলে রবি শাস্ত্রীর প্রথম বই ‘স্টারগেজ়িং: দা প্লেয়ার্স ইন মাই লাইফ’ প্রকাশিত হয়। অধিনায়ক বিরাট কোহলী-সহ গোটা ভারতীয় দল যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। ২০১৪-তে প্রথম বার শাস্ত্রীকে ডিরেক্টর হিসেবে পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ভারত অধিনায়ক।
সেখানে ধারাভাষ্যকার অ্যালান উইলকিন্স চলতি সিরিজ়ের প্রসঙ্গ টেনে শাস্ত্রীকে বলেন, ‘‘দারুণ ঝাঁঝালো আর মশলাদার একটা সিরিজ় হচ্ছে, রবি। তুমি নিজে খুব আগ্রাসী ভঙ্গিতে ক্রিকেট খেলতে। অস্ট্রেলীয়দের মুখের উপরে জবাব দিতে। তোমার সেই মনোভাবটাই কি ছেলেদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে?’’ শাস্ত্রী বলেন, ‘‘মশলাদার সিরিজ়ই হচ্ছে আর সেটাই তো হওয়া উচিত। আমি শুধু বলতে পারি, আগামী দু’সপ্তাহে ঝাঁঝের পরিমাণটা আরও বেড়ে যাবে!’’
এর আগে তাঁর উদ্বোধনী ভাষণেই অবশ্য শাস্ত্রী স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে দিয়েছেন, ‘‘গত সাত বছর ধরে এই দলটার সঙ্গে যুক্ত থাকাটা জীবনের সব চেয়ে উপভোগ্য যাত্রা। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনে প্রতিপক্ষের গায়ে ঠিক মাত্রায় নুন ছিটিয়ে দিতে পারবে ওরা। ছেলেরা অবশ্যই সেই চেষ্টা করবে। আমরা এ ভাবেই ক্রিকেটটা খেলি।’’ অনুষ্ঠান ঘরে তখন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মহলের
প্রতিনিধিরাও উপস্থিত।
চিকেন ভিনদালুতে প্রচুর ঝাঁঝ আর মশলা থাকে। চলতি সিরিজ়ে কি তা হলে চিকেন ভিনদালু রেসিপি অনুসরণ করছে ভারতীয় দল? প্রশ্ন করা হলে শাস্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘‘ভুলে যাবেন না আমি মুম্বই থেকে আসছি। মশলার সঙ্গে অভ্যস্ত আমরা।’’ তাঁর ক্রিকেট জীবনের আগ্রাসনের সঙ্গে কোহলীদের মনোভাব মেলার ব্যাপারে হেড কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘অধিনায়ক যখন একই মনোভাবের হয়, অনেক কাজই সহজ হয়ে যেতে বাধ্য। ছেলেদের অধিকাংশেরই মনোভাব এক।’’ এর পরেই জোরালো বার্তা, ‘‘শুনুন, আমরা এখানে কিছু সংখ্যা তুলে ধরতে আসিনি। আমরা এখানে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে এসেছি। জিততে এসেছি। আমি মনে করি, জেতার জন্য খেলতে গিয়ে যদি ম্যাচ হেরে যাও, তাতে লজ্জার কিছু নেই।’’
কাছ থেকে দেখা পঞ্চাশ জন ক্রিকেটার সম্পর্কে বইতে লিখেছেন শাস্ত্রী। নিজের যাত্রার কথা নয় কেন? তাঁর জবাব, ‘‘এই ছেলেরা গত কয়েক বছর ধরে দুর্ধর্ষ ক্রিকেট খেলে চলেছে। যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রত্যেক দিন ওরা আমাকে নতুন একটা অধ্যায় উপহার দিচ্ছে লেখার জন্য। হয়তো এই দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পরে
সে সব লিখব।’’
শাস্ত্রীর বই প্রকাশের সন্ধ্যাকে অবশ্য আরও আলোকিত করে তোলেন কোহলী। ২০১৪-তে এই ইংল্যান্ডেই জিমি অ্যান্ডারসনের সামনে দুঃস্বপ্নের সিরিজ় গিয়েছিল তাঁর। পুরো ভারতীয় দলই চূর্ণ হয়েছিল টেস্ট সিরিজ়ে। তার পরে শাস্ত্রীকে যোগ করা হয় ডিরেক্টর হিসেবে।
ফিরে তাকিয়ে সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কোহলী বলেন, ‘‘প্রথম যখন রবি ভাই বললেন, বয়েজ়, পুরো শরীর কেঁপে উঠেছিল। এমন পরিষ্কার কণ্ঠ এর আগে আর কখনও শুনিনি। এত দৃঢ়, ইতিবাচক বক্তব্য কখনও শুনিনি।’’ শাস্ত্রী-কোহলী সুসম্পর্কের কথা ক্রিকেট মহলে একেবারেই অজানা নয়। ভারত অধিনায়ক বলে চলেন, ‘‘এর পরে আমরা অনেক একান্ত আলাপচারিতায় বসেছি। অধিনায়ক হওয়ার পরে যেটা আরও বেড়েছে। আমি একটাই কথা বলতে পারি, মাঠে-মাঠের বাইরে আমাদের এই সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস আর দু’জনের একই স্বপ্ন দেখার উপরে ভর করে। আর সেই স্বপ্ন হচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও উচ্চ শৃঙ্গে নিয়ে যাওয়া।’’ আবেগতাড়িত কোহলী এর পরে যোগ করেন, ‘‘আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, বিশ্বের সেরা দল হব। গোটা দলের অসামান্য দক্ষতায় শক্তিশালী হয়েছি আমরা। সব সময় বিশ্বাস করেছি, বিশ্বের সেরা দল হওয়ার যোগ্যতা আমাদের আছে। এক মুহূর্তের জন্যও আমি বা রবি ভাই এ নিয়ে সংশয়ে ভুগিনি। আজ আমরা সেই দল, যাদের প্রত্যেকে হারাতে চায়। এটা আমাদের সকলের কাছে অসীম গৌরবের ব্যাপার।’’ যখন বলছেন কোহলী, সতীর্থরা দাঁড়িয়ে শুনছেন। হেডিংলেতে হারের পরে কোচের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অধিনায়কের এই দল নিয়ে স্বপ্ন দেখার কাহিনি সিরাজ-ঋষভদের উদ্বুদ্ধ করে তুলতেই পারে।
হেড কোচকে জিজ্ঞেস করা হল, দু’টি টেস্ট বাকি। কী বিশ্বাস করেন? সিরিজ় জিতে ফিরতে পারবে ভারত? শাস্ত্রী সম্ভবত ছেলেদের উপরে বাড়তি চাপ যাতে না আসে, সে কথা মাথায় রেখে তাঁর বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের মন্ত্রকে স্মরণ করলেন। অপ্রতিরোধ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে যিনি তিরাশি লর্ডসের ফাইনালে সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেটকে উপভোগ করি চলো।’’ শাস্ত্রী ফাইনালে না খেললেও তিরাশি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। ওভালে নামার আগে ছেলেদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, আগামী দু’সপ্তাহ ক্রিকেট উপভোগ করা। প্রক্রিয়াগুলো ঠিকঠাক করে যাও। তা হলেই দেখবে হয়তো ইতিহাসের চৌকাঠে উপস্থিত হয়ে গিয়েছ। একই বছরে যদি অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মাটি থেকে সিরিজ় জিতে ফিরতে পারো, তা হলে অসামান্য প্রাপ্তি। আমি জানি ছেলেরা যদি ওদের দক্ষতা অনুযায়ী খেলে, যে কোনও রকম ফল সম্ভব।’’
গাড়ির সামনের আসনে যখন শাস্ত্রী-কোহলী, টপ গিয়ার থেকে নেমে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মঙ্গলবার রাতের তারা ঝলমলে অনুষ্ঠান যা বুঝিয়ে দিয়ে গেল। তাই বিরাট ঝাঁঝওয়ালা ভারতীয় চিকেন ভিনদালু আর মুম্বই মশলার জন্য তৈরি
থাকো, ওভাল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy