Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
শামিদের আগুনের সামনে বাংলাদেশ

আমাদের পেসাররাই বিশ্বসেরা, বলে দিলেন কোহালি

গতি ও সুইং থাকলেও মহম্মদ শামির সমস্যা ছিল লাইন-লেংথ ও ফিটনেসে। ভুবনেশ্বর কুমারের সুইং থাকলেও গতিতে পিছিয়ে পড়ছিলেন। আর উমেশ যাদব পিছিয়ে পড়েন ফিটনেস সমস্যায়। কিন্তু কোহালি একটি পরিষ্কার লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছিলেন।

ত্রয়ী: শামি-ইশান্ত-উমেশের গতি এবং সুইং দিয়েই প্রথম টেস্টে জয়ের ভাবনা ভারতীয় শিিবরের। ফাইল চিত্র

ত্রয়ী: শামি-ইশান্ত-উমেশের গতি এবং সুইং দিয়েই প্রথম টেস্টে জয়ের ভাবনা ভারতীয় শিিবরের। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
ইনদওর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৩
Share: Save:

জাহির খানদের যুগ শেষ হওয়ার পরে টেস্টে কী ভাবে বিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়া যায়, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটমহলে। ২০১৪ সালে ভারতীয় টেস্ট দলের নেতৃত্ব হাতে পাওয়ার পরে বিরাট কোহালিকে কাজ শুরু করতে হয়েছিল মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবদের নিয়েই। কিন্তু ক্রিকেটবিশ্ব তখনও কল্পনা করতে পারেনি এই শামি, উমেশই বিশ্বক্রিকেটের ত্রাস হয়ে উঠবেন।

গতি ও সুইং থাকলেও মহম্মদ শামির সমস্যা ছিল লাইন-লেংথ ও ফিটনেসে। ভুবনেশ্বর কুমারের সুইং থাকলেও গতিতে পিছিয়ে পড়ছিলেন। আর উমেশ যাদব পিছিয়ে পড়েন ফিটনেস সমস্যায়। কিন্তু কোহালি একটি পরিষ্কার লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছিলেন। দলের প্রত্যেকে যেন একশো শতাংশ ফিট হয়েই মাঠে নামেন। ভারতীয় ক্রিকেট সংস্কৃতির খোলনলচে বদলে দিয়েছেন তিনি। সব চেয়ে আগে পরিবর্তন করেছেন ক্রিকেটারদের খাদ্যাভ্যাসে।

ফিটনেস ধরে রাখতে তিনি নিজে মাছ, মাংস ছেড়ে দিয়েছেন। শামি, উমেশদের খাদ্য তালিকায় নেই তেল, মশলা যুক্ত খাবার। আলু পরোটা, মাখন ছেড়ে পাতে তুলেছেন ঝলসানো চিকেন ও স্যালাড। যার ফল মাঠেও পেতে শুরু করেছেন তাঁরা। ওজন কমিয়ে শামি এখন ভয়ঙ্কর। অ্যাকশন পরিবর্তন করে আরও ধারালো উমেশ। বিশ্বের সেরা পেস আক্রমণ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতেও শুরু করে। হয়তো সেই কারণেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিন গর্বের সঙ্গে বিরাট বলে দিলেন, ‘‘যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারতীয় পেস আক্রমণকে বিশ্বের সেরা তিনের মধ্যে রাখা যায় কি না, অবশ্যই বলব আমরা সব চেয়ে এগিয়ে। আমাদের পেস আক্রমণই শ্রেষ্ঠ। ওদের এই সম্মানই প্রাপ্য।’’ যোগ করেন, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে জীবন শুরু করার সময় এই বার্তাই ওদের দেওয়া হয়েছিল। এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। ব্যাটিং নিয়ে কখনওই সমস্যা ছিল না। স্পিন বিভাগ নিয়েও কখনও ভাবতে হয়নি। কিন্তু জ্যাকদের (জাহির) অবসরের পরে আমাদের ভাবতে হয়েছিল, কী করে ফের ক্রিকেট বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পেস বোলিং আক্রমণ গড়ে তোলা যায়। কী করে বিপক্ষের ২০টি উইকেট তোলা যায়। কিন্তু শামিদের এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরে এখন বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয় না, বিশ্বের যে কোনও পিচ ও পরিস্থিতিতে বিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করার ক্ষমতা এই পেসারদের রয়েছে।’’

কোহালিই বোধহয় প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক যিনি ঘরের মাঠে ঘাসে ভরা উইকেট দেখে ঘাবড়ে যান না। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন-আপকে রাঁচীর নিষ্প্রাণ উইকেটেই সুইং ও গতিতে পরাস্ত করেছিলেন শামি, উমেশরা। ইনদওরের হোলকার স্টেডিয়ামের ঘাসে ভরা উইকেটে বাংলাদেশের অবস্থা কী হতে পারে, তা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটমহলে আগ্রহ তুঙ্গে। তা হলে কি তিন পেসার নিয়েই নামতে চলেছেন ভারতীয় দল? অধিনায়ক কোহালির ঘোষণা, ‘‘উইকেট দেখে মনে হচ্ছে সেই সম্ভাবনাই বেশি। উমেশ গত সিরিজে অসাধারণ বোলিং করেছে। শামিও দুর্ধর্ষ। আর ইশান্ত শেষ দু’বছরে আমাদের দলে সব চেয়ে ধারাবাহিক বোলার। আমার সঙ্গে ওর বোঝাপড়াও খুব ভাল। অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট থেকে একসঙ্গে খেলছি আমরা। কী মনোভাব নিয়ে আমাদের পেসাররা মাঠে নামে, সেটা পারফরম্যান্স দেখলেই বোঝা যায়।’’

বুধবার ম্যাচের আগের দিন নেটে অবশ্য দেখা যায়নি শামি, ইশান্তদের। কারণ টেস্টে একেবারে তরতাজা বোলিং আক্রমণ চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাডেজা যদিও পুরো দমেই বল করে গেলেন। বিরাটের প্রথম একাদশে স্পিন বিভাগ সামলানোর দায়িত্ব হয়তো তাঁদের হাতেই থাকবে। শামি, ইশান্তরা বিশ্রামে থাকায় স্থানীয় পেসারদের নিয়েই অনুশীলন সারল ভারত। বিশেষ জোর দেওয়া হল বাঁ-হাতি পেসারদের বিরুদ্ধে। তিন জন স্থানীয় বাঁ-হাতি পেসারের বিরুদ্ধে ব্যাট করলেন অজিঙ্ক রাহানে, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, ঋদ্ধিমান সাহারা। বেশ কয়েকবার পরাস্তও হলেন। ভারতকে বরাবরই সমস্যায় ফেলেছে বাঁ-হাতি পেসারেরা। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও ট্রেন্ট বোল্টের সুইংয়ে ধরাশায়ী হয়েছিল ভারতের উপরের দিককার ব্যাটিং। বিপক্ষে মুস্তাফিজুর রহমানই যে ভারতের পথে কাঁটা হতে পারেন, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল ভারত অধিনায়ক। কেন প্রত্যেক বার বাঁ-হাতি পেসাররা ভারতের বিরুদ্ধে সমস্যা তৈরি করেন? কোহালির উত্তর, ‘‘বাঁ-হাতি পেসারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত খেলার সুযোগ হয়ে ওঠে না। এক জন বাঁ-হাতি পেসার আমাদের অলআউট করে গিয়েছে, সেটাও কিন্তু নয়। তবে সমস্যায় ফেলেছে, সেটা ঠিক।’’ সেখানে না থেমে আরও যোগ করেন, ‘‘মুস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু এটা টেস্ট। ওকে সামলাতে একটু বেশিই মনোনিবেশ করতে হবে।’’

মুস্তাফিজুর আদৌ খেলবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক তাঁর ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। এবাদত হোসেন ও আল আমিন হোসেনের অভিজ্ঞতার চেয়ে মুস্তাফিজুরের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। অনুশীলন দেখে মনে হল, বাংলাদেশও হয়তো তিন পেসারেই নামতে চলেছে। স্পিন বিভাগে বাঁ-হাতি তাইজুল ইসলাম ও অফস্পিনার মেহদি হাসান মিরাজ। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক সিরিজ মোমিনুলের। বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বললেন, ‘‘প্রত্যেক দলই মাঠে নামে জেতার উদ্দেশ্য নিয়ে। ভারতীয় পেস ত্রয়ীকে সামলানোর দায়িত্ব নিতে হবে। ভয় পেয়ে কাজটা আর কঠিন করতে চাই না।’’

অনুশীলনে স্থানীয় বোলারদের বিরুদ্ধেই একাধিক বার পরাস্ত হতে দেখা গিয়েছে মুশফিকুর, মাহমুদুল্লাদের। শামি, উমেশদের আগুন তাঁরা কী ভাবে সামলান, দেখতে চাইবে ক্রিকেট মহল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy