বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের টিকিটের টাকা ফেরতের লাইন মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে।—নিজস্ব চিত্র।
খেলা বাতিলের জেরে জনতার চোখে খলনায়ক হয়ে গিয়েছে মাঠ এবং স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভাঙা হাটে দাঁড়িয়েও খেলা বাতিলের দায় বা কলঙ্ক মানতে নারাজ গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের কর্তারা। তাঁদের মতে, গত কাল ও আজকের চড়া রোদে মাঠ খেলার উপযুক্ত হয়ে উঠত। বিদেশি দলের আশঙ্কাই বঞ্চিত করল গুয়াহাটিকে।
এ যেন অষ্টমীর আগেই বিসর্জনের শূন্যতা! সেমিফাইনালের আগের দিন বিকেল। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক আর শ'য়ে শ'য়ে পুলিশকর্মীর ব্যস্ততা-কোলাহলে জমজমাট থাকার কথা ছিল গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়াম। কিন্তু, খেলা বাতিলের জেরে শ্মশানের নিস্তব্ধতা সেখানে। চার কিলোমিটার দূরে, আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাসে ফিফার কাউন্টারে তখন চলছে মুণ্ডপাত। কিন্তু শূলে কাকে চড়ানো উচিত— ঠিক করতে পারছেন না টাকা ফেরত নিতে আসা ফুটবলপ্রেমীরা। দোষারোপ চলছে বৃষ্টি থেকে ব্রাজিল, ফিফা থেকে রাজ্য সরকার সকলকেই।
২০০৭ সালে ন্যাশনাল গেমসের সময় থেকে ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের মাঠের সঙ্গে জড়িত সাইয়ের আঞ্চলিক অধিকর্তা সুভাষ বসুমাতারি। তাঁর মতে, এখানকার মাঠ, ঘাস দেশের মধ্যে সেরা। ফিফার মান অনুযায়ী সব তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাঠে রয়েছে অতি উন্নতমানের জিও পাইপ নিকাশি ব্যবস্থা। কিন্তু ৪০ ঘণ্টা বৃষ্টির পরে বিশ্বের যে কোনও মাঠে খেলা হলে মাঠের অবস্থা শোচনীয় হতে বাধ্য। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা না হলে সেমিফাইনালে সমস্যা হত না।
মাঠকর্মীদের দাবি, মাঠ তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল। রবিবার থেকে বৃষ্টি হয়নি। সোমবার ও আজ তীব্র রোদ ছিল। অনায়াসে খেলা হতে পারত। রাতদিন পরিশ্রম করে মাঠ প্রায় শুকিয়ে এনেছিলেন তাঁরা। দু’টি অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাও মেরামত হয়েছে। তাঁদের মতে, ফিফার খেলাতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু বিদেশি দলগুলির কোচ-ম্যানেজাররাই অহেতুক ঝুঁকি নিতে চাননি। অবশ্য সুভাষবাবুর মতে, বিদেশি দলগুলির কথাই এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত। কারণ তাদের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন দলেও চুক্তিবদ্ধ। ফিফার পক্ষে মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। কারণ কলকাতাকে খেলার আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হত।
অসম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সচিব অঙ্কুর দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, খেলা বাতিল হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তার জন্য দায়ী একমাত্র বৃষ্টি। খামোকা সরকার বা ফিফাকে দোষারোপ করে লাভ নেই।
ম্যাচ হারিয়ে নিঝুম গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়াম,—নিজস্ব চিত্র
এই মাঠে আইএসএল হয়। বিশ্বের তাবড় ফুটবলাররা ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের মাঠকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় ফুটবল সংগঠন, ফুটবলপ্রেমীদের অভিযোগ, মাঠ উন্নত হলেও পরিকাঠামোয় গলতি থাকার ফলেই সময়মতো জল বেরোয়নি মাঠ থেকে। সম্ভবত সাইডলাইনে কংক্রিট ঢাকতে পাতা নকল ঘাসের গালিচার জন্যই ঠিকমতো জল বেরোয়নি।
কংগ্রেস খেলা বাতিলের জন্য সরকারের অক্ষমতাকে দায়ী করে। অবশ্য রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়, ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপে রাজ্য সরকার ইচ্ছেমতো হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মাঠ শুকোতে হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। ফিফা যখন যা চেয়েছে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাঠে দর্শক কম হওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে সুভাষবাবু জানান, ফিফার নিয়ম মেনেই টিকিট বিক্রি ও বিলি হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তারা ৬ হাজার টিকিট বিক্রি করেনি। তার পরেও দর্শকের উপস্থিতিতে রেকর্ড করতে চলেছে ভারত। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ৬টি স্টেডিয়াম মিলিয়ে ১১ লক্ষ ২৬ হাজারের বেশি দর্শক খেলা দেখেছেন। এ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালে চিনে সবচেয়ে বেশি ১২,৩০,৯৭৬ জন দর্শক খেলা দেখেছিলেন। কলকাতা ও মুম্বইয়ের সেমি ফাইনালেই দর্শকসংখ্যা ১২ লক্ষ ছাড়াবে। ফাইনালের পরে অনায়াসে দর্শকসংখ্যায় সেরা হবে ভারত।
আরও পড়ুন: ক্লাব ছেড়ে ক্লাবকেই বদনাম এই তারকা ফুটবলারদের
আরও পড়ুন: এ ভাবেও গোল খাওয়া যায়?
এ দিকে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের জন্য পাঁচতারা তাজ হোটেলের ২৫টি ঘর বুক করা হয়েছিল। খেলা বাতিল হওয়ায় অতগুলি ঘরের বুকিংও বাতিল হয়। তাজ হোটেলের তরফে ইন্দ্রাণী ফুকন জানান, ফিফার সঙ্গে তাজের সরাসরি এ নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। খেলা বাতিল হওয়ার পরে কলকাতায় গিয়ে তাজ নয় নভোটেলে ওঠেন খেলোয়াড়রা। রুম বুকিংয়ের সময়ই বুকিং বাতিলের শর্তাবলীও চুক্তিতে উল্লেখ থাকে। তা ফিফার তরফে পূরণ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy