অলিম্পিক্স চলাকালীন প্যারিসে একটি অনুষ্ঠানে অভিনব বিন্দ্রা। ছবি: রয়টার্স।
২০২১ টোকিয়ো থেকে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক্সের মাঝে ভারতের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য খরচ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিদেশে অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পরেও প্যারিস অলিম্পিক্সে সোনা আসেনি। সব মিলিয়ে মাত্র ছ’টি পদক জিতেছে ভারত। ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত সোনাজয়ী অভিনব বিন্দ্রার মতে, টাকা খরচ করলেই পদক জেতা যায় না। তার জন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে পদক জয়ের খিদে থাকতে হয়।
অলিম্পিক্সের সময় প্যারিসে ছিলেন বিন্দ্রা। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটির অ্যাথলিট’স কমিশনের সদস্য হিসাবে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাঁকে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, কেন ভারত এত কম পদক জিতল। তার জবাব দিয়েছেন বিন্দ্রা। তাঁর মতে, শুধুমাত্র প্রতিভা থাকলেই অলিম্পিক্সে পদক জেতা যায় না।
বিন্দ্রা বলেন, “অলিম্পিক্সে দু’রকম চাপ কাজ করে। এক হল বাইরের চাপ। দেশের মানুষ, অনুরাগীরা আপনার কাছে পদক দেখতে চান। আবার প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মনে ভিতরে একটা চাপ থাকে। সেটা নিজের প্রত্যাশার চাপ। এই দুই চাপ যে ভাল ভাবে সামলাতে পারবে সে পদক জিতবে। শুধু প্রতিভা থাকলেই হবে না। আমার তো মনে হয়, অলিম্পিক্সে প্রতিভার তেমন জায়গা নেই। কঠিন পরিস্থিতিতে চাপ সামলে যে সেই দিনকে নিজের করতে পারবে, সেই পদক জিততে পারবে। হাজার অনুশীলন করেও তা হয় না।”
খেলোয়াড়দের নিজেদের মধ্যে পদক জেতার খিদে না থাকলে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও পদক আসবে না বলে মনে করেন বিন্দ্রা। শুটিংয়ে সোনাজয়ী তারকা বলেন, “আমাদের টাকার দিকটাও দেখতে হবে। খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা দিতে টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু শুধু টাকা খরচ করলেই হবে না। এটা তো কোনও যন্ত্র নয় যে, বেশি টাকা খরচ করলে বেশি পদক আসবে। তার জন্য ঘাম, রক্ত, চোখের জল ঝরাতে হবে। খিদে থাকতে হবে। কোনও দেশের সরকার হয়তো খেলোয়াড়দের পদক জেতার রাস্তা কিছুটা সহজ করতে পারে। কিন্তু পদক নিজেদেরই জিততে হবে।”
উল্লেখ্য, টোকিয়োর পর থেকে মিশন প্যারিসের জন্য খরচ করা হয়েছে মোট ৪৭০ কোটি টাকার বেশি। এ বারের অলিম্পিক্সের বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ হয়েছে তারকা খেলোয়াড়দের জন্য। নীরজ চোপড়ার জন্য ৫.৭২ কোটি টাকা। সাত্ত্বিক-চিরাগ যাঁরা ব্যাডমিন্টনে প্রথম নক-আউটে হারলেন, তাঁদের জন্য ৫.৬২ কোটি টাকা। নক-আউটে প্রথমেই হেরে যাওয়া পিভি সিন্ধুর জন্য ৩.১৩ কোটি টাকা। চতুর্থ হওয়া মীরাবাই চানুর জন্য ২.৭৪ কোটি টাকা। শুটিংয়ে জোড়া পদক জেতা মনু ভাকেরের জন্য ১.৬৮ কোটি টাকা। টেনিসে হেরে যাওয়া রোহন বোপান্নার জন্য ১.৫৬ কোটি টাকা। তিরন্দাজিতে অঙ্কিতা ভকতের সঙ্গে চতুর্থ হওয়া ধীরজ বোম্মাধেরাভার জন্য ১.০৭ কোটি টাকা। বক্সিংয়ে নিখাত জ়ারিন ও লভলিনা বরগোহাঁইয়ের জন্য যথাক্রমে ৯১.৭৯ লক্ষ ও ৮১.৭৬ লক্ষ টাকা। প্রথম রাউন্ডে হেরে যাওয়া পুরুষ বক্সার অমিত পঙ্ঘালের জন্য ৬৫.৯০ লক্ষ টাকা।
২০২১-এ টোকিয়োর পর থেকে তিন বছরের অলিম্পিক্স প্রকল্পে সব চেয়ে বেশি লগ্নি করা হয়েছে অ্যাথলেটিক্সে। মোট ৯৬.০৮ কোটি টাকা। ব্যাডমিন্টনে খরচ করা হয়েছে মোট ৭২.০৩ কোটি টাকা। বক্সিংয়ে মোট ৬০.৯৩ কোটি টাকা। তিরন্দাজিতে মোট ৩৯.১৮ কোটি টাকা। অথচ একমাত্র নীরজ পদক জিতেছেন। ভারোত্তোলনে খরচ হয়েছে মোট ২৭ কোটি টাকা। সাঁতারে মোট ৩.৯০ কোটি টাকা। প্যারিসে ৩৫টি ফাইনাল হয়েছে সাঁতারের ইভেন্টে। ভারত যোগ্যতা অর্জন করেছে মাত্র দু’টিতে। একটিতেও পদক আসেনি। তুলনায় হকিতে ৪১ কোটি টাকা খরচ করে ব্রোঞ্জ পাওয়া গিয়েছে। সেই কথাটাই বলতে চাইলেন বিন্দ্রা। শুধু টাকা খরচ করলেই পদক আসবে না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
গত দুই অলিম্পিক্সে শুটিং থেকে কোনও পদক আসেনি। এ বার ছ’টি পদকের মধ্যে তিনটিই শুটিং থেকে। তাতে খুশি বিন্দ্রা। তিনি বলেন, “শুটারেরা অনেক উন্নতি করেছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও সেটা দেখা গিয়েছে। ভাগ্য কিছুটা সঙ্গে থাকলে শুটিং থেকে অন্তত আরও দুটো পদক আসত। তবে এখনও শুটিং থেকে ১০টা পদক আনার জায়গায় যেতে পারিনি। তার জন্য আরও পরিশ্রম করতে হবে।”
টোকিয়োর থেকে ভাল ফল হয়নি প্যারিসে। একটিও সোনা আসেনি ভারতে। তাতে মন খারাপ হলেও এই পদক না পাওয়ার যন্ত্রণা পরের অলিম্পিক্সে কাজে লাগতে পারে বলে মনে করেন বিন্দ্রা। তিনি বলেন, “অলিম্পিক্স চলাকালীন প্যারিসে প্রতি দিন এই প্রশ্নের মুখে আমাকে পড়তে হয়েছে। সকলে জিজ্ঞাসা করেছে, কেন টোকিয়োর থেকে বেশি পদক এল না। আমার মনে হয়, এতে এক দিক থেকে ভাল হয়েছে। খেলোয়াড়েরা দেশে ফিরে এখন থেকেই নিজেদের তৈরি করা শুরু করবে। ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জলসে লক্ষ্য থাকবে ১০-এর বেশি পদক জেতা। এ বার খারাপ হওয়ায় সেই তাগিদ আরও বাড়বে বলে মনে করি।”
এ বার জ্যাভলিনে রুপো জিতেছেন নীরজ চোপড়া। গত বার টোকিয়োয় সোনা জিতেছিলেন তিনি। শুটিংয়ে মনু ভাকের দু’টি পদক জিতেছেন। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ব্যক্তিগত ও মিক্সড ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি। মিক্সড ইভেন্টে মনুর জুটি ছিলেন সরবজ্যোৎ সিংহ। স্বপ্নীল কুসালেও ৫০ মিটার থ্রি পজিশনসে ব্রোঞ্জ জিতেছেন শুটিংয়ে। ভারতের হকি দলও ব্রোঞ্জ জিতেছে। কুস্তিগির আমন শেরাওয়াত পুরুষদের ৫৭ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। কুস্তিগির বিনেশ ফোগাট মহিলাদের ৫০ কেজি বিভাগে ফাইনালে উঠেছিলেন। কিন্তু ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় বাতিল করা হয় তাঁকে। রুপো দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আবেদন করেছেন বিনেশ। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হবে মঙ্গলবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy