Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Paris Olympics 2024

সাত ম্যাচে যে ভাবে ভারতের গোল আগলেছেন, হারার পর হরমনদেরও একাই সামলালেন শ্রীজেশ

প্যারিস অলিম্পিক্সেও হকিতে সোনা হাতছাড়া হল ভারতের। তবে সুযোগ রয়েছে ব্রোঞ্জ জেতার। সেই লড়াইয়ের আগে সেমিফাইনালে হারের পরে সতীর্থদের সামলালেন পিআর শ্রীজেশ।

সাতটি ম্যাচে ভারতের গোলের নীচে ‘দেওয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পিআর শ্রীজেশ।

সাতটি ম্যাচে ভারতের গোলের নীচে ‘দেওয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পিআর শ্রীজেশ। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ০০:৫২
Share: Save:

গ্রুপ লিগ থেকে শুরু করে সেমিফাইনাল, সাতটি ম্যাচে শক্ত হাতে ভারতের গোল সামলেছেন তিনি। তার পরেও হাতছাড়া হয়েছে সোনা। আশা জাগিয়েও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ভারতীয় দলের। সেমিফাইনালে হারতে হয়েছে জার্মানির কাছে। সাতটি ম্যাচে ভারতের গোলের নীচে ‘দেওয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পিআর শ্রীজেশ। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। ২০ বছরের কেরিয়ার তাঁর। যেখানে অনেক খেলোয়াড় নিজেদের প্রথম অলিম্পিক্স খেলছেন, সেখানে শ্রীজেশের এটি তৃতীয়। সেই কারণেই হয়তো বাকিদের থেকে আবেগ বেশি সামলাতে পারেন তিনি। সেটাই দেখালেন শ্রীজেশ। হারের পরে যেখানে দলের সব খেলোয়াড়েরা বিধ্বস্ত, সেখানে শ্রীজেশকে দেখাল বড় দাদার মতো। তাঁদের পিঠ চাপড়ে দিলেন। বোঝালেন, এখনও পদক জেতার সুযোগ রয়েছে। নিজের শেষ অলিম্পিক্সে প্যারিস থেকে খালি হাতে ফিরতে চাইছেন না তিনি।

জার্মানির কাছে হারার পরই দেখা যায়, মাটিতে শুয়ে পড়েছেন হার্দিক সিংহ, ললিত উপাধ্যায়েরা। তাঁদের চোখে জল। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এ ভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাবে। সোনা হাতছাড়া হওয়ার দুঃখ পেয়েছিলেন শ্রীজেশও। কিন্তু বাইরে সেটা দেখালেন না। একে একে সকলকে মাটি থেকে টেনে তুললেন। তাঁদের বেঞ্চে ফেরত পাঠালেন। তার পরে মিক্সড জ়োনে সাংবাদিকের সামনে এসে বললেন, “সোনা জেতার জন্য এসেছিলাম। চার বছর আগে সেমিফাইনালেই হারতে হয়েছিল। শেষ পর্যম্ত ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। এ বার পদকের রং বদলাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না।” গলায় হতাশা ধরা পড়লেও ভেঙে পড়েননি শ্রীজেশ। জানিয়ে দেন, এ বার ব্রোঞ্জ জেতার চেষ্টা করবেন। বলেন, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সুযোগ নষ্ট করেছি। ডিফেন্সও ভাল হয়নি। জার্মানিকে হারানো কঠিন ছিল। ভেবেছিলাম পারব। কিন্তু পারিনি। তবে এখনও পদক জেতার সুযোগ রয়েছে। ফিরে তার প্রস্তুতি শুরু করব। খালি হাতে ফিরতে চাই না।”

শ্রীজেশের পরেই সাংবাদিকের মুখোমুখি হন হকি দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংহ। তাঁকে দেখে স্পষ্ট বোধা যাচ্ছিল, ভেঙে পড়েছেন তিনি। হরমনপ্রীত বলেন, “খুবই হতাশ লাগছে। ভাবিনি হেরে যাব। ভাবিনি এ ভাবে স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।” কী কারণে হেরেছেন তা নিয়েও মুখ খুলেছেন হরমনপ্রীত। তিনি বলেন, “সুযোগ নষ্ট হয়েছে। আরও গোল করতে পারতাম। আমরা জানতাম জার্মানির বিরুদ্ধে ভাল করে ডিফেন্স করতে হবে। সেই পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু কিছু জায়গায় ভুল করেছি।”

শ্রীজেশের ২০ বছরের লড়াই কিন্তু সহজ ছিল না। ‘এমএস ধোনি, দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ দেখতে গিয়ে চমকে গিয়েছিলেন শ্রীজেশ। কেরলের কোচির ছেলের মনে হয়েছিল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জীবনের সঙ্গে তাঁর জীবনটা মিলে যাচ্ছে। ধোনি যেমন পরিবার চালাতে বাবাকে সাহায্য করার জন্য খড়্গপুরে টিকিট কালেক্টরের চাকরি নিয়েছিলেন, শ্রীজেশকেও তেমনই ব্যাঙ্কে চাকরি করতে হয়েছিল। ধোনি যেমন চাকরির ফাঁকে খেলতেন, শ্রীজেশও তাই। কৃষক পরিবারে জন্ম শ্রীজেশের। অভাবী পরিবার ছিল। সে জন্য সংসার চালাতে চাকরি করা ছাড়া উপায় ছিল না। ব্যাঙ্কের চাকরি সামলেই ছুটতে হত প্র্যাকটিসে। ছুটি নিয়ে খেলতে যেতেন প্রতিযোগিতা। একটা সময় পরে ধোনির মতোই চাকরি ছেড়ে শুধু খেলাতেই মন দেন। তার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

অথচ ছোটবেলায় শ্রীজেশ কিন্তু প্রথমে হকি খেলোয়াড় হতে চাননি। তিনি শুরু করেছিলেন স্প্রিন্টার হিসাবে। তাতে বেশি দিন মন বসেনি। তার পর লং জাম্প, ভলিবল খেলেন। কোনও খেলাতেই বেশি দিন মন বসত না। ১২ বছর বয়সে প্রথম হকি স্টিক হাতে তুলে নেন শ্রীজেশ। অল্প দিনেই এই খেলা ভাল লেগে যায় তাঁর। ঠিক করে নেন, হকিই খেলবেন। তার জন্য অনেক লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে।

২০০৪ সালে ভারতের সিনিয়র হকি দলে অভিষেক শ্রীজেশের। ধীরে ধীরে দলের অধিনায়ক হন। তাঁর নেতৃত্বেই ২০১৬ রিয়ো অলিম্পিক্সে নামে ভারত। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়। হতাশ হননি শ্রীজেশ। চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। সাফল্য মেলে ২০২১ টোকিয়ো অলিম্পিক্সে। ব্রোঞ্জ জেতে ভারত। পদক জেতার পরে গোলপোস্টের উপরে শ্রীজেশের উঠে পড়ার ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। দেশে ফেরার পরে এর্নাকুলামে তাঁর নামে রাস্তার উদ্বোধন করে কেরল সরকার। তাঁর নাম লেখা টি-শার্ট বিলি করা হয়। এমনকি, কারও নাম শ্রীজেশ হলে তাঁকে বিনামূল্যে পেট্রল দেওয়ার ঘোষণা করে এর্নাকুলামের একাধিক পেট্রল পাম্প।

টোকিয়োর সাফল্যের পরে থেমে যেতে পারতেন শ্রীজেশ। থামেননি। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সেও ভারতের গোলপোস্টের নীচে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। গত বছরও ভারত ম্যাচের চারটি কোয়ার্টারের মধ্যে দু’টিতে শ্রীজেশকে খেলাচ্ছিল। পুরো ৬০ মিনিট খেলানো হচ্ছিল না তাঁকে। তবে এ বার অলিম্পিক্সে প্রতিটি ম্যাচ পুরো খেলেছেন তিনি। দায়িত্ব নিয়েছেন দলের গোল সামলানোর।

এ বারের অলিম্পিক্সের আগেই শ্রীজেশ ঘোষণা করেছিলেন, এটাই তাঁর শেষ অলিম্পিক্স। তাই সোনা জিতে ফিরতে চান। সেই রাস্তাতেই এগোচ্ছিলেন তিনি। সুযোগও এসেছিল। শেষ ধাপ গিয়ে হার মানতে হল। তবে এখনও পদক জয়ের সুযোগ রয়েছে। পর পর দু’টি অলিম্পিক্স থেকে ব্রোঞ্জ জিততে পারেন শ্রীজেশ। প্রতিপক্ষ স্পেন। যা হয়ে গিয়েছে তা নিয়ে ভাবছেন না। শুধু খালি হাতে ফিরতে চাইছেন না তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy