Advertisement
E-Paper

বাঙালি ধীরেন্দ্রকুমার সেনের পুত্র অলিম্পিক্স পদকের লক্ষ্যে স্থির, অপেক্ষা রবির ব্যাডমিন্টন সেমিফাইনালের

বাঙালি লক্ষ্য সেন অলিম্পিক্স পদকজয়ের দোরগোড়ায়। রবিবার প্যারিসে বিশ্বের দু’নম্বর ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল খেলতে নামছেন তিনি।

Lakshya Sen

রবিবার অলিম্পিক্সে ব্যাডমিন্টনের সেমিফাইনালে নামছেন লক্ষ্য সেন। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ০০:২২
Share
Save

রবিবার অলিম্পিক্সে ব্যাডমিন্টনের সেমিফাইনালে নামছেন বঙ্গতনয় লক্ষ্য সেন। বিপক্ষে ভিক্টর অ্যাক্সেলসেন। বিশ্বের দু’নম্বর। ডেনমার্কের এই খেলোয়াড়কে হারিয়ে লক্ষ্য যদি ফাইনালে ওঠেন, সোনা বা রুপো নিশ্চিত। হেরে গেলেও তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে ব্রোঞ্জ জয়ের সুযোগ থাকবে লক্ষ্যের সামনে। ঠিক যেমন ২০২১ সালে পি ভি সিন্ধু সেমিফাইনালে হেরেও ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে জিতে দ্বিতীয় অলিম্পিক্স পদক পেয়েছিলেন।

লক্ষ্য অলিম্পিক্স পদক জিতলে গোটা দেশ যখন উৎসব করবে, বঙ্গের উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই হবে। কারণ, লক্ষ্য আদতে বাঙালি। তাঁর বাবার নাম ধীরেন্দ্রকুমার সেন। যিনি ‘ডিকে সেন’ বলেই পরিচিত। তাঁর পুরো নাম সে ভাবে কেউই জানেন না। কেউ জানতেও চাননি বা চান না।

পদবি ‘সেন’ হলে বাঙালি যোগ অনিবার্য। তেমনই লক্ষ্যও বাঙালি। যেমন তাঁর বাবা ধীরেন্দ্রকুমার। যদিও তাঁদের সঙ্গে বাংলা বা বাঙালির কোনও যোগাযোগও নেই। বস্তুত, লক্ষ্য নিজেও জানেন না তাঁর বাঙালি পরিচয়। অতীতে একাধিক বার তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে বাংলার কোনও যোগ নেই। শনিবার লক্ষ্যের বাবার সঙ্গে এই প্রশ্ন নিয়ে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ধীরেন্দ্রকুমার জানান, তাঁর পরিবারের বাংলায় শিকড় থাকলেও থাকতে পারে। তিনি সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বাংলা বা বাঙালির যোগসূত্র ছিল কি না, তা তাঁর জানা নেই।

লক্ষ্যের ‘বাঙালিয়ানা’ নিয়ে জল্পনা চলছে তিন বছর ধরে। ২০২১ সালে বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে যখন তিনি ব্রোঞ্জ জিতে প্রথম প্রচারের আলোয় আসেন, তখন থেকে সেই জল্পনা শুরু হয়। সেন পরিবারের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাঁরা বরাবরই নিজেদের ‘বাঙালি নই’ বলেই বর্ণনা করেছেন। ‘সেন’ পদবি কোথা থেকে এল বা ডিকে-র পুরো নাম যে ধীরেন্দ্রকুমার (যা সাধারণত বাঙালি ছাড়া হয় না), তা-ও কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। উইকিয়াপিডিয়া-সহ সর্বত্র লক্ষ্যের বাবার নাম ‘ডিকে সেন’ বলেই উল্লেখ করা আছে। ছেলের সঙ্গে কোচ হিসাবে অলিম্পিক্সে গিয়েছেন ‘ডিকে’। প্যারিস থেকে ফোনে বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগসূত্র আছে কি না বলতে পারব না। আমরা বাঙালি কি না, তা-ও জানি না। সেটা জানতে গেলে অনেক পিছনে যেতে হবে। অনেক তথ্য নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। সেই সুযোগ আমাদের পরিবারে নেই। আর এখন তো লক্ষ্যকে নিয়েই আমরা সবাই ব্যস্ত। সময় কোথায়?’’

লক্ষ্যকেও এই প্রশ্ন একাধিক বার করা হয়েছিল। তিনিও বাবার মতোই এ ব্যাপারে নিজের অজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি বাঙালি কি না। আমরা উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন থেকে এসেছি। বাঙালি যোগের কথা কখনও শুনিনি।’’

‘সেন’ পদবির উৎস কী? এটিই কি তাঁদের আসল পদবি? না কি অন্য কোনও পদবি থেকে এটা এসেছে? লক্ষ্যের বাবা বললেন, ‘‘না না, এটাই আমাদের পদবি। অন্তত আমি তা-ই জানি। আমরা বাঙালি কি না জানি না। তবে লক্ষ্যের মা একেবারেই বাঙালি নন। ওঁর নাম নির্মলা ধীরেন সেন।’’

রবিবার যদি অ্যাক্সেলসেনকে হারিয়ে লক্ষ্য ফাইনালে ওঠেন, তা হলে ‘বাঙালির পদকজয়’ বলে উল্লসিত হওয়ার যুক্তি একেবারে ফেলে দেওয়া যাবে না। রবিবার হেরে গেলেও ব্রোঞ্জ পদক জেতার সুযোগ থাকবে লক্ষ্যের সামনে।

বাঙালি লক্ষ্য পদক পেলে নাম লিখিয়ে ফেলবেন লেসলি ক্লডিয়াস, কেশব দত্ত, যশবন্ত সিংহ রাজপুত, ভেস পেজ এবং লিয়েন্ডার পেজের তালিকায়। এঁরা প্রত্যেকেই জন্মসূত্রে বাঙালি না হয়েও বাঙালি। বিলাসপুরের ক্লডিয়াসের হকিতে তিনটি অলিম্পিক্স সোনা এবং একটি রুপো আছে। তাঁর প্রায় গোটা জীবনটাই কেটেছে কলকাতায়। ক্লডিয়াসের সতীর্থ কেশবও আদপে লাহোরের মানুষ। কিন্তু তিনি অনেক বেশি বাংলার, অনেক বেশি মোহনবাগানের। দিল্লির যশবন্তকেও আপন করে নিয়েছিল মোহনবাগান, ভবানীপুর ক্লাব। অলিম্পিক্স ব্রোঞ্জজয়ী টেনিস তারকা লিয়েন্ডারের সঙ্গে বাংলার যোগ তুলনায় গভীরতর। তাঁর মা জেনিফার পেজ মাইকেল মধুসূদন দত্তের বংশধর। মিউনিখ অলিম্পিক্সে হকিতে ব্রোঞ্জজয়ী লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজ এখনও কলকাতাতেই থাকেন।

ধীরেন্দ্র কুমারের ছেলে ‘বাঙালি’ লক্ষ্য যে অ্যাক্সেলসেনের বিরুদ্ধে নামছেন, তিনি টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা জিতেছিলেন। ২০১৬ সালে রিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। ডেনমার্কের নাগরিক হলেও অ্যাক্সেলসেন থাকেন দুবাইয়ে। কারণ, পরিবেশ দূষণে তাঁর ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যায়। নিজের খেলা নিয়ে এতটাই সিরিয়াস যে, ব্যাডমিন্টন দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ চিনা খেলোয়াড় এবং কোচদের সঙ্গে কথা বলার জন্য নিজে উদ্যোগী হয়ে ‘মান্দারিন’ ভাষা শিখেছেন।

এর আগেও লক্ষ্য-অ্যাক্সেলসেন মুখোমুখি হয়েছেন। একসময় একসঙ্গে অনুশীলনও করেছেন তাঁরা। টমাস কাপের দল থেকে বাদ পড়ার পর দুবাইয়ে গিয়ে অ্যাক্সেলসেনের সঙ্গে অনুশীলন করতেন লক্ষ্য। ভারতীয় শাটলারের কোচ বিমল কুমার বলেন, “অ্যাক্সেলেসনের সঙ্গে অনুশীলন করে অনেক কিছু শিখেছে লক্ষ্য। বিশেষ করে অনেক বেশি পেশাদার হয়েছে। অনুশীলনে অনেক বেশি একাগ্রতা দেখিয়েছে।”

প্যারিস অলিম্পিক্সে অ্যাক্সেলসেন নেমেছেন আরও এক বার সোনা জয়ের লক্ষ্যে। পর পর দু’বার ব্যাডমিন্টনের সিঙ্গলসে সোনা জিততে চান তিনি। ৩০ বছরের অ্যাক্সেলসেনের বিরুদ্ধে লড়াই যে কঠিন হবে তা জানেন লক্ষ্য নিজেও। এখনও পর্যন্ত আট বার একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছেন তাঁরা। এর মধ্যে সাত বার হেরেছেন লক্ষ্য। তবে তাঁর কাছে অ্যাক্সেলসেন হেরেছিলেন ২০২২ সালে। সেই ম্যাচে লক্ষ্য জিতেছিলেন ২১-১৩, ১২-২১, ২২-২০ গেমে।

Paris Olympics 2024 Lakshya Sen badminton

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।