Advertisement
E-Paper

আল্পস পর্বতে শিবির, দলে মনোবিদ, এল ব্রোঞ্জ পদক, প্যারিস অলিম্পিক্সে পুনর্জন্ম ভারতীয় হকির

অলিম্পিক্সে রেকর্ড আটটি সোনা জেতা হকি দলের দুরবস্থা দেখে কিছু দিন আগেও কপাল চাপড়াতেন অনেকে। সেই দিন অতীত। প্যারিস অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পুনর্জন্ম ঘটাল ভারতীয় হকির।

sports

ব্রোঞ্জ জেতার পরে ভারতীয় হকি দলের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ১৯:৪৪
Share
Save

একটি-দু’টি নয়, আট-আটটি সোনা!

অলিম্পিক্সে কোনও খেলাধুলোয় ভারতের সর্বাধিক সাফল্য বলতে গেলে সবার আগে আসবে হকির নাম। ক্রিকেট নয়, ভারতকে সর্বপ্রথম গোটা বিশ্বে পরিচিতি দিয়েছিল যে খেলা, তা হকি। সেই হকিতে একটা দীর্ঘ সময় ছিল শুধুই হতাশা। তার পর নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল টোকিয়োয় ব্রোঞ্জ জিতে। তা আরও বাড়ল প্যারিসে ব্রোঞ্জ জেতায়।

স্বাধীনতার আগে এবং পরে হকিতে ভারতের অভূতপূর্ব সাফল্য নজর এড়ায়নি কারওরই। বেশির ভাগ খেলার মতো এটিও ব্রিটিশদের থেকেই শিখেছিল ভারত। তবে ভারতীয়েরা এটি রপ্ত করে নিয়েছিলেন নিজের মতো করে। সেই খেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য দেখানোর পর সত্তরের দশক থেকে ভারত হকিতে দুর্বল হতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে শেষ বার সোনা। তার পরে ৪১ বছরের খরা কাটিয়ে টোকিয়োয়। প্যারিসের সাফল্য প্রমাণ করল, ভারতীয় হকি আবার ঠিক দিকেই এগোচ্ছে।

টোকিয়ো থেকে প্যারিস, এই যাত্রাপথ একেবারেই সহজ ছিল না। টোকিয়োয় যে সাফল্য ভারতীয়েরা দেখিয়েছিলেন, তা প্যারিসে ধরে রাখাই আসল কাজ ছিল। মাঝের এই তিন বছরে উত্থান-পতন দুই-ই রয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক্সে কেমন সাফল্য থাকে, তার উপরে নির্ভর করে অনেক কিছু। সেই পরীক্ষায় পাশ করে গিয়েছেন হরমনপ্রীত সিংহেরা। হকির হৃত গৌরব অনেকটাই ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।

কী ভাবে পুনর্জন্ম হল ভারতীয় হকির?

খেলাধুলোর টেকনিক্যাল দিকগুলির কথা বাদ দিলে বলতে হয়, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনাই ভারতের সাফল্যের অন্যতম কারণ। ১৯৭৫ হকি বিশ্বকাপের একটি ঘটনা অনেকেই জানেন না। সে বার ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামার আগের দিন বেশ কয়েক জন খেলোয়াড় পেটের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন।

ভারতীয় দলের সঙ্গে চিকিৎসক হিসাবে গিয়েছিলেন রাজেন্দ্র কালরা। খেলোয়াড়দের অবস্থা দেখে তিনি ডাক্তারি কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে মনোবিদ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যাঁরা অসুস্থ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁদের খেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যে আত্মবিশ্বাসের অভাবেই খেলতে চাইছিলেন না, সেটাও বুঝতে পেরেছিলেন। দ্রুত সেই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর।

আয়োজকদের বলে তিনি কিছুটা গুড় এবং তিলের বীজ আনান। গুড় গলিয়ে তাতে কিছুটা তিলের বীজ মিশিয়ে ছোট ছোট বড়ি বানান। খেলোয়াড়দের বলেন, ম্যাচে নামার আগে সেগুলি খেতে। পরের দিন চমকের মতো কাজ হয়। পাকিস্তানকে ভারত শুধু হারায়ইনি, মাঠে দেখা গিয়েছিল ১১ জন আত্মবিশ্বাসী খেলোয়াড়।

প্যারিসে ভারতের সাফল্যের নেপথ্যেও রয়েছে সেই আত্মবিশ্বাসই। প্যারিসে যাওয়ার আগে ভারতীয় দল তিন দিন কাটিয়ে এসেছে আল্পস পর্বতে। বিখ্যাত অভিযাত্রী মাইক হর্নের অনুপ্রেরণা শুনেছেন মনপ্রীত সিংহেরা। জীবনের কঠিনতম সময়েও কী ভাবে বেঁচে থাকা যায়, সেই গল্প তিরের মতো গেঁথে যায় প্রত্যেকের হৃদয়ে। সঙ্গে ছিলেন মনোবিদ প্যাডি আপটন। দু’জনেই অতীতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে কাজ করেছেন। হকিতে এই জুটি ভারতীয় খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসই বদলে দিয়েছে।

খেলোয়াড়দের দিয়ে এমন কাজ করানো হয়েছিল, যেখানে সামান্য ভুলচুক বা মনঃসংযোগ বিক্ষিপ্ত হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। প্রত্যেকেই সফল ভাবে নিজেদের কাজ করেছেন। এক সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকারে আপটন বলেছেন, “সুইৎজারল্যান্ডে গিয়ে খেলোয়াড়দের এমন একটা পরিবেশে নিয়ে গিয়েছিলাম, যার অভিজ্ঞতা ওদের কারওরই ছিল না। শরীরে অ্যাড্রিনালিন বেড়ে যাওয়া, ভয় সব কিছু একসঙ্গে আসতে বাধ্য। সুরক্ষার বিষয়টি ছিলই। কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর খিদেটাও থাকা দরকার ছিল। এ ছাড়া, সবাই মিলে কাজ করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল।”

মূল লক্ষ্য ছিল, নিজেদের পছন্দের পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে কিছু করা। অলিম্পিক্সে যে কাজ বার বার করতে হয়। নিজেকেই নিজে ছাপিয়ে যেতে হয়। সেটা কেমন? আপটন বলেছেন, “ধরুন, প্রথম বার অলিম্পিক্সে খেলতে এসে কেউ ফাইনালে উঠেছে। তার মানে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি তারা কোনও দিন হয়নি। সেই পরিবেশে কী ভাবে মানিয়ে নিতে হয় সেটাই শেখানো হয়েছে।”

এ বারের অলিম্পিক্সে অন্তত দু’টি ম্যাচে ভারতের আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক কাঠিন্য বোঝা গিয়েছে। প্রথমটি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে। যে দেশকে ১৯৭২ অলিম্পিক্সের পর কখনও হারাতে পারেনি ভারত, তাদের বিরুদ্ধেই গোটা ম্যাচে আধিপত্য রেখে জয় ছিনিয়ে নেয়। দ্বিতীয় উদাহরণ গ্রেট ব্রিটেন ম্যাচ। সেই ম্যাচে ৪২ মিনিট ভারতকে খেলতে হয়েছে দশ জনে। অতীতে কখনও অলিম্পিক্সে কোনও দেশের কোনও খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখেননি। সাধারণত বিরল ঘটনার ক্ষেত্রেই লাল কার্ড দেখানো হয়। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে থাকা দলের বিরুদ্ধেও কেঁপে যায়নি ভারত। দশ জন হয়ে যাওয়ার পরে গোল দেয়, গোল খায় এবং পেনাল্টি শুটআউটে ম্যাচ বার করে নেয়। ভারতের হকির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম সেরা জয়।

আপটন মনে করেন, অতীতে বিপক্ষকে বড্ড বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভুল করছিল ভারত। ফলে মাঠে নামার আগেই কেঁপে যাচ্ছিল তারা। মনের ভিতরে ভয় থাকছিল। এক বার গোল খেয়ে গেলেই পরিকল্পনা ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছিল। গোটা ম্যাচে ভাল খেলেও শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হারতে হচ্ছিল। এই ভারত এখন শেষ মুহূর্তে গোল খায় না, গোল দেয়। নিউ জ়‌িল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার এক মিনিট বাকি থাকতে গোল করে দেশকে জেতান হরমনপ্রীত। তিনিই পরের ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে একই সময়ে গোল করে ড্র করেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়া এই দলের মজ্জায় গেঁথে গিয়েছে।

তবে অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদক পেলেও কাজ এখনও শেষ হয়নি। যে সাফল্য ভারতীয় দল পেয়েছে, সেটা ধরে রাখাই আপাতত তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। হকিতে ভারতের যে পুরনো গৌরব ছিল, তা এখনও পুরোপুরি ফিরে পাওয়া যায়নি। সাফল্যের পর এ বার হরমনপ্রীতদের লক্ষ্য, হকি বিশ্বে ভারতের দাপট পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা।

Paris Olympics 2024 Hockey Harmanpreet Singh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।