Advertisement
E-Paper

অলিম্পিক্সে বিতর্ক, ‘পুরুষ’ হয়েও মহিলাদের বিভাগে? প্যারিস তোলপাড় বক্সার খেলিফকে নিয়ে

সমাজমাধ্যমে খেলিফকে ‘জিনগত ভাবে পুরুষ’, ‘রূপান্তরকামী’ বলা হচ্ছে। সত্যিই কি তাই? শুধু খেলিফ নন, আরও এক জন ‘পুরুষ’ রয়েছেন এ বারের অলিম্পিক্সে।

Khelif

আলজেরিয়ার বক্সার ইমান খেলিফ। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ১৮:১১
Share
Save

কোর্টের মধ্যে কাঁদছেন ইটালির বক্সার অ্যাঞ্জেলা কারিনি। তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। ম্যাচ শুরুর ৪৬ সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন, আর খেলবেন না। আর তাঁর সেই সিদ্ধান্তের পরেই আলোচনায় আলজেরিয়ার বক্সার ইমান খেলিফ। তাঁর ঘুষিতেই রিং ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কারিনি। যা এ বারের অলিম্পিক্সের সবচেয়ে বড় বিতর্ক বলে মনে করা হচ্ছে। তবে শুধু খেলিফ নন, আরও এক জন ‘পুরুষ’ রয়েছেন মহিলাদের বিভাগে।

কারিনি যে ৪৬ সেকেন্ড রিংয়ে ছিলেন, তাতে দু’বার ঘুষি লাগে তার। তাতেই নাকে লাগে। নাক ভেঙেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রিংয়ের মধ্যেই নাক থেকে রক্ত পড়তে দেখা যায়। যার পরেই নাম তুলে নেন কারিনি। সেই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে খেলিফকে ‘জিনগত ভাবে পুরুষ’, ‘রূপান্তরকামী’ বলা হতে থাকে। সত্যিই কি তাই?

২০২৩ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলিফকে বাদ দেওয়াও হয়েছিল। দিল্লিতে হয়েছিল সেই প্রতিযোগিতা। জানা গিয়েছিল খেলিফের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বেশি। একই কারণে বাদ পড়েছিলেন তাইওয়ানের লিন ইউ টিং। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিক্সে তাঁরা দু’জনেই রয়েছেন। খেলিফের লিঙ্গপরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা যায় তাঁর শরীরে এক্সওয়াই ক্রোমোজ়োম রয়েছে। যা ছেলেদের শরীরে থাকে। বেশির ভাগ মেয়েদের শরীরে থাকে এক্সএক্স ক্রোমোজ়োম। আন্তর্জাতিক বক্সিং সংস্থার সভাপতি উমর ক্রেমলেভ বলেন, “খেলিফ মহিলা হওয়ার ভান করছেন। সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।”

অলিম্পিক্সে কেন খেলতে দেওয়া হচ্ছে?

অলিম্পিক্স কমিটি এবং বিশ্ব বক্সিং সংস্থার নিয়ম আলাদা। সেই কারণেই প্যারিস অলিম্পিক্সে খেলতে পারছেন খেলিফ এবং ইউ টিং। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজক আন্তর্জাতিক বক্সিং সংস্থা। কিন্তু সেই সংস্থাকেই নির্বাসিত করা হয়েছে। আর্থিক কারচুপির কারণে নির্বাসিত করা হয়েছে তাদের। প্যারিসে তাই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বক্সিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। অলিম্পিক্স কমিটি জানিয়েছে খেলিফেরা খেলতে পারবেন। মুখপাত্র মার্ক অ্যাডামস বলেন, “মেয়েদের খেলায় যারা যারা খেলতে নেমেছে, তারা সকলে মহিলা। প্রত্যেকের পাসপোর্টে সেটাই লেখা আছে। সেই কারণেই তাদের খেলতে দেওয়া হয়েছে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সেও তারা খেলেছিল। অনেক বছর ধরেই খেলছে।”

অলিম্পিক্স কমিটির নিয়মেও বদল হয়েছে। তাদের নিয়ম অনুযায়ী, পুরুষ বা মহিলা নির্ধারণের জন্য টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দেখা প্রয়োজনীয় নয়। খেলোয়াড়দের কোনও হরমোন পরীক্ষাও দিতে হয় না। অলিম্পিক্স কমিটির দাবি, টেস্টোস্টেরন বেশি হলেই কেউ বাড়তি সুবিধা পাবে এমনটা নয়।

সমাজমাধ্যমে আক্রমণের মুখে পড়েছেন খেলিফ। হ্যারি পটারের লেখিকা জেকে রাওলিং সমাজমাধ্যমে লেখেন, “এক জন পুরুষ এক জন মহিলাকে মারছে, বিনোদনের জন্য সেটা সকলের ঠিক মনে হবে? এটার ব্যাখ্যা দেওয়া হোক। এটা খেলা নয়। যে আয়োজকেরা এটা হতে দিচ্ছে তাদের ধিক্কার। এটা মহিলাদের উপর পুরুষদের শক্তি দেখানো।” ইংল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রুস বলেন, “এই পাগলামি কখন শেষ হবে? পুরুষ কখনও মহিলা হতে পারে না।”

খেলিফের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভারতের দ্যুতি চন্দ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে আমি অলিম্পিক্সের নিয়মের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। টেস্টোস্টেরন বেশি থাকলেই কেউ বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে এমনটা হয় না। সুইৎজ়ারল্যান্ডে কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টে আমি মামলা করেছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিল হরমনের মাত্রার কারণে খেলায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় না। বার বার আমাকে এই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। আমার লিঙ্গ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার অলিম্পিক্সে কারিনি আপত্তি জানিয়েছে খেলিফের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ে। অলিম্পিক্স খেলতে হলে অনেক রকম পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সমাজমাধ্যমে এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করার কোনও মানে নেই।”

ডিফেরেন্সেস অফ সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট (ডিএসডি)

খেলিফের শরীরে এক্সওয়াই ক্রোমোজ়োম এবং টেস্টোস্টেরনের উপস্থিতির ঘটনাকে খুবই দুর্লভ বলে দেখছে অলিম্পিক্স কমিটি। কিন্তু এক্সওয়াই ক্রোমোজ়োম এবং টেস্টোস্টেরন যে মহিলাদের শরীরে থাকে, তাঁদের পেশির শক্তি বেশি হয়, হারের জোর বেশি হয়। অনেক তাড়াতাড়ি নড়াচড়া করতে পারেন তাঁরা। অনেকের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ হয় পুরুষের মতো। বক্সিংয়ের মতো খেলায় যা প্রতিপক্ষের জন্য খুবই সাংঘাতিক হতে পারে। কিন্তু অলিম্পিক্স কমিটি এই ধরনের মহিলাদের বাদ দিতে রাজি নয়। তারা বলছে, এক জন মহিলাকে তখনই বাদ দেওয়া হবে, যখন নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, নিরাপত্তার অভাব হচ্ছে।

এই বিতর্ক নতুন নয়। ২০১২ এবং ২০১৬ সালের অলিম্পিক্সে সোনার পদকজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাস্টার সেমেনিয়ার বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ উঠেছিল। ২০২০ অলিম্পিক্সে সেই কারণে তাঁকে নামতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু খেলিফের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তিনি শুক্রবার নামবেন হাঙ্গেরির অ্যানা লুকা হামোরির বিরুদ্ধে। ৬৬ কেজি বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনালে লড়বেন তাঁরা।

অলিম্পিক্সে যদিও বিতর্ক থামবে না। বিশেষ করে রিংয়ের মধ্যে কারিনির কান্না এবং নাম তুলে নেওয়ার পর এই ঘটনাকে অলিম্পিক্সের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিতর্ক হিসাবেও দেখছেন অনেকে। প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিংহ বলেন, “এই ম্যাচটা অলিম্পিক্স কমিটির রিভিউ করা উচিত। আমার মতে খুব অনুচিত হল।” হরভজন সেই সঙ্গে একটু ছবিও পোস্ট করেন। তাতে লেখা, “অলিম্পিক্সের ইতিহাসে অন্ধকারতম দিন।”

Paris Olympics 2024 boxing Imane Khelif

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}