সংশয়: ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের এই লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ ঘিরেই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা । ফাইল চিত্র
মোহনবাগানের সঙ্গে এটিকের গাটছড়ার পরে কলকাতার ফুটবল ভক্তদের মনে এখন প্রশ্ন— ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ কী? তারা কি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের মতো নতুন লগ্নিকারী বা স্পনসরের মাধ্যমে আইএসএলে নাম লেখাবে?
বর্তমান লগ্নিকারী সংস্থা কোয়েসের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের। দু’তরফে সম্পর্ক এমনই তিক্ত হয়ে পড়েছে যে, মাঝপথেই বিচ্ছেদের সুর বাজছে। নতুন তরজা শুরু হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে থাকা ফুটবলারদের নিয়ে। কর্তারা লগ্নিকারী সংস্থাকে জানিয়েছেন, দু’বছরের চুক্তি থাকা ফুটবলারদের হিসাবনিকাশের কী ভাবে নিষ্পত্তি করা হবে, তা যেন তারাই চূড়ান্ত করে দেন।
দেশি এবং বিদেশি মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গলের কয়েক জন ফুটবলার লকডাউনের মধ্যেও কলকাতায় পড়ে আছেন। উদ্দেশ্য, নিজেদের ভবিষ্যৎ জেনে নেওয়া। কিন্তু না লগ্নিকারী সংস্থা, না কর্তারা কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন। কিছু মাঝারি মানের ফুটবলার সই করানো চলছে কিন্তু ক্লাবই যেখানে ঠিক করে উঠতে পারেনি কোন লিগে খেলবে, এঁদের সই করিয়ে কী হবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় দলের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে অনুশীলন শুরু শার্দুলের
ফুটবল প্রিয় কলকাতার ধড়ফড়ানি বাড়িয়ে দিতে পারে অন্য এক প্রশ্ন। ঐতিহ্যের ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বিরই বা ভবিষ্যৎ কী? মোহনবাগান এটিকের সঙ্গে মিলে গিয়ে আইএসএলে খেলা নিশ্চিত করেছে। ইস্টবেঙ্গল এখনও তা করে উঠতে পারেনি। যদি এ বারও তাদের আই লিগেই থাকতে হয়, তা হলে কলকাতার দুই প্রধানের হাইওয়েই তো আলাদা হয়ে যাচ্ছে। অনেকের মতে, যা শুধু দু’টি ক্লাবের জনপ্রিয়তারই ক্ষতি করবে না, লক্ষ লক্ষ ভক্তদের জন্যও বড় ধাক্কা হবে।
মোহনবাগান যদি আইএসএলে খেলে আর ইস্টবেঙ্গল আই লিগে, তা হলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথ সর্বভারতীয় স্তরে হওয়ার আর সম্ভাবনা থাকবে না। দু’দলের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে একমাত্র কলকাতা লিগ ফুটবলে। কিন্তু তা নিয়েও একাধিক জটিলতা রয়েছে। প্রথমত, মোহনবাগান এবং এটিকে আলাদা ক্লাব হিসেবে আইএফএ পরিচালিত কলকাতা ফুটবল লিগে নথিবদ্ধ। মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব হিসেবে সর্বোচ্চ ডিভিশনে খেলে, এটিকে রয়েছে প্রিমিয়ার ‘বি’-তে। কলকাতা লিগে কি তারা আলাদা আলাদা ভাবেই থাকবে, নাকি এখানেও মিলিত শক্তি হিসেবে মাঠে নামবে? লিগের নিয়ম অনুযায়ী, দু’রকমই করা যেতে পারে। আইনত কোনও বাধা নেই। কিন্তু একটি ক্লাব মোহনবাগান-এটিকে নামে খেলতে গেলে যে কোনও একটি ক্লাব বন্ধ করে নতুন করে আইএফএ-তে নথিবদ্ধ হতে হবে। অন্যটা করতে গেলেও চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। জানা গিয়েছে এটিকে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রিমিয়ার ‘বি’-তে দল না নামানোর। প্রথম বোর্ড মিটিংয়ের পরেই আইএফএ-তে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবে, এটিকে-মোহনবাগান নামে একটি দল হিসেবেই কলকাতা লিগে খেলবে।
উদ্বেগের কথা হচ্ছে, করোনাভাইরাস অতিমারির জেরে চলতে থাকা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে স্থানীয় কলকাতা ফুটবল লিগ চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে। লিগে অংশ নেওয়া অনেক ছোটখাটো ক্লাব এবং অফিস টিম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। তারা দল নামাতে পারবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এমন অবস্থায় শুধু কলকাতা লিগের উপর ভরসা করে কী করে স্বপ্ন দেখবেন ভক্তরা?
চিরকাল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান মানে সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটাই সব চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। আমাদের এতগুলো আই লিগ, তোদের ক’টা? আমাদের এতগুলো ফেডারেশন কাপ, তোদের ক’টা? কতগুলো ডুরান্ড আছে? কতগুলো রোভার্স? চিরকাল এমন সব তরজা নিয়েই তো মেতে উঠেছেন দু’দলের ভক্তেরা। ফুটবল আবেগের ঘ্রাণ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার গনগনে উত্তাপ ছড়িয়ে তৈরি হয়েছে ফুটবল দুনিয়ার সেরা এক দ্বৈরথ। ওয়াসিম আক্রমের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটার পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং পরামর্শদাতা হিসেবে এসে জানতে চেয়েছেন, ফুটবল ডার্বি কবে দেখা যাবে? ইস্টবেঙ্গল ভক্ত এস ডি বর্মণের নামে মুম্বইয়ে কুপারেজের মাঠে আলাদা দু’টি সিট ফাঁকা রাখা থাকত প্রিয় ক্লাবের ম্যাচ দেখার জন্য। সর্বোচ্চ স্তরে যদি দুই ক্লাবের ঝনঝনানি না-থাকে, ডার্বির সেই আকর্ষণ কী করে ধরে রাখা যাবে?
লাল-হলুদের কর্তারা ঠারেঠোরে দাবি করে চলেছেন, বর্তমান লগ্নিকারী চলে গেলে তাদের নতুন স্পনসর তৈরি। কিন্তু কারা সেই স্পনসর, এখনও হদিশ পাওয়া যায়নি। আইএসএল খেলতে গেলে বছরে ৪০ কোটি টাকার খরচ রয়েছে। অগস্টের মধ্যে সব কিছু সেরে ফেলতে হবে, না হলে এ বারের আইএসএলের দরজা বন্ধ। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তরফে ফেডারেশন প্রধান প্রফুল্ল পটেলের কাছে ফোনও গিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়েছে বলে খবর নেই। উল্টে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে, ক্লাবের একাংশ রাজ্য বিজেপি-র শীর্ষ কর্তাদের কাছেও পৌঁছেছেন। অর্থাৎ, আইএসএল খেলা নিয়ে লাল-হলুদ জার্সিতে রাজনীতির দুই রং লাগার আশঙ্কা দেখছেন ক্লাবের অসংখ্য ভক্ত।
সবুজ-মেরুন ভক্তদের মনে অবার প্রশ্ন, এটিকের সঙ্গে চুক্তিতে মাত্র কুড়ি শতাংশ উপস্থিতি রেখে মোহনবাগানের এই বিশাল ভক্তসংখ্যার যথাযথ প্রতিফলন ঘটবে না। এটিকের ভক্ত সংখ্যা মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় অনেক কম। জার্সি বা নাম না হয় মিলিয়ে দেওয়া গেল কিন্তু গ্যালারিতে মোহনবাগান-এটিকে ভক্তের মেলবন্ধন কী করে ঘটবে?
কেউ জানে না। যেমন কারও জানা নেই, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাবের পরের ডার্বি ফের কবে দেখা যাবে!
আরও পড়ুন: ‘টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়া হোক রোহিতকে’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy