Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জয়টা একটু হলেও নিতুদাকে আনন্দ দেবে, বলছেন র‌্যান্টি

পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলটা করেই র‌্যান্টি মার্টিন্স হরিণের গতিতে ছুটলেন ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির দিকে। দু’হাত তুলে যেন সমর্থকদের বলতে চাইলেন, “এই গোলটা তোমাদের জন্যই!” নিজের দ্বিতীয় গোলের পর উচ্ছ্বসিত র‌্যান্টি দৌড়ে এসে বার্তোসকে জড়িয়ে ধরেন। কলকাতা ডার্বির অভিষেকে জোড়া গোল পাওয়ার তৃপ্তি তখন চুঁইয়ে পড়ছিল তাঁর চোখেমুখে। ড্রেসিংরুমে ফিরে কোচ, কর্তা, সতীর্থ ফুটবলারদের শুভেচ্ছার জোয়ারে ভেসে যান তিনি। তবে বাকি প্লেয়াররা যখন মরসুমের প্রথম ডার্বি জয়ের সেলিব্রেশন করছেন, র‌্যান্টি তখন একটু চুপচাপই ছিলেন।

৩-১ করছেন র‌্যান্টি। ছবি: উৎপল সরকার

৩-১ করছেন র‌্যান্টি। ছবি: উৎপল সরকার

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৯
Share: Save:

পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলটা করেই র‌্যান্টি মার্টিন্স হরিণের গতিতে ছুটলেন ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির দিকে। দু’হাত তুলে যেন সমর্থকদের বলতে চাইলেন, “এই গোলটা তোমাদের জন্যই!”

নিজের দ্বিতীয় গোলের পর উচ্ছ্বসিত র‌্যান্টি দৌড়ে এসে বার্তোসকে জড়িয়ে ধরেন। কলকাতা ডার্বির অভিষেকে জোড়া গোল পাওয়ার তৃপ্তি তখন চুঁইয়ে পড়ছিল তাঁর চোখেমুখে।

ড্রেসিংরুমে ফিরে কোচ, কর্তা, সতীর্থ ফুটবলারদের শুভেচ্ছার জোয়ারে ভেসে যান তিনি। তবে বাকি প্লেয়াররা যখন মরসুমের প্রথম ডার্বি জয়ের সেলিব্রেশন করছেন, র‌্যান্টি তখন একটু চুপচাপই ছিলেন। নাইজিরিয়ান গোলমেশিন এমনিতেই শান্ত স্বভাবের। তবে এ দিন তাঁর চুপচাপ থাকার কারণ হতে পারে ড্রেসিংরুমে লাল-হলুদের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারের অনুপস্থিতি। যাঁর চেষ্টা আর ইচ্ছেতেই এ মরসুমে ইস্টবেঙ্গলে এসেছিলেন র‌্যান্টি।

এমন সাফল্যের দিনে র‌্যান্টির ‘নিতুদা’ যে মাঠ থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। সারদা-কাণ্ডে আপাতত হাজতে থাকলেও ডার্বির অনেকখানিই দেখেছেন দেবব্রতবাবু। দেখেছেন র‌্যান্টির জোড়া গোলও। কিন্তু দলের সঙ্গে এ রকম মহাখুশির মুহূর্ত ভাগ করে নিতে না পারার আফসোসটা নিশ্চয়ই তাঁর রয়ে গেল। আফসোস করতে শোনা গেল লাল-হলুদের গোলমেশিনকেও। ম্যাচের পর র‌্যান্টি বলছিলেন, “নিতুদাকে খুব মিস করছি। আমি একা নই. আমরা সবাই মিস করছি। আশা করি এই জয়টা ওকে কিছুটা আনন্দ দেবে। ওকে মানসিক ভাবে আরও শক্ত হতে সাহায্য করবে।”

আগের কয়েকটি ম্যাচে সে ভাবে নজর কাড়তে না পারলেও, ডার্বির হাত ধরে কিন্তু পুরনো ছন্দে র‌্যান্টি। এককথায় বলা যেতে পারে মোহনবাগানকে হারানো দিয়েই লাল-হলুদে শুরু হয়ে গেল র‌্যান্টি-জমানা। এত দিন সে ভাবে গোল না পেলেও ভেঙে পড়েননি। বরং নিজেকে নিজেই উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছেন। কী ভাবে?

ডার্বি জয়ের নায়ক বললেন, “মনঃসংযোগের জন্য সবার সঙ্গেই কম কথা বলছিলাম। ডার্বির চাপ যাতে বোঝা না হয়ে যায়, সে জন্য মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। খুব শান্ত মাথায় শুধু মাত্র ম্যাচে ফোকাস করে গিয়েছি। এ দিন সেটার ফলও পেয়েছি। তবে এই জয়ের কৃতিত্ব আমার একার নয়। পুরো টিমের। ইস্টবেঙ্গল আসলে টিম গেম খেলেছে।”

যুবভারতীর রং লাল-হলুদ।

জীবনের প্রথম কলকাতা ডার্বি খেলতে যুবভারতীতে আসার আগে র‌্যান্টির ছেলেমেয়েরা আবদার করেছিল, “বাবা! তোমাকে দশ গোল করতে হবে।” উত্তরে লাল-হলুদের গোলমেশিন নাকি বলে এসেছিলেন, “দশ গোল করা সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করব গোল করে দলকে জেতানোর।” গাড়িতে ওঠার আগে সে কথা জিজ্ঞেস করতেই হেসে ফেললেন র‌্যান্টি। “টিভিতে ওরা আমার সব খেলা দেখে। আর সব ম্যাচের আগেই ওদের আবদার থাকে, আমাকে গোল করতেই হবে। তবে এ দিন গোল করে দলকে জেতাতে পেরে সত্যিই ভাল লাগছে। আমার ছেলেমেয়েরাও নিশ্চয়ই খুশি হয়েছে।”

আগের ম্যাচে কালীঘাট এমএসের সঙ্গে ড্র করার ফলে চাপে পড়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। তা ছাড়া গত কয়েক দিনের মাঠের বাইরের ঘটনায় ক্লাবের উপর একটা অন্য চাপও তৈরি হয়েছে। এ দিনের জয় ইস্টবেঙ্গলকে যে কিছুটা হলেও অক্সিজেন দিল, সে কথা স্বীকার করে নিলেন র‌্যান্টিও। “ক্লাবের যা পরিস্থিতি তাতে ডার্বিতে জয় পাওয়াটা আমাদের কাছে জীবন-মরণের মতো ছিল। জিততে না পারলে লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই থেকেও অনেকটা পিছিয়ে পড়তাম। ম্যাচটাতো আমরা ৫-১ জিততে পারতাম।”

ডুডু-র‌্যান্টি জুটি নিয়ে ডার্বির আগে নানা জল্পনা ছিল। মাঠে দেখা গেল প্রথম ম্যাচেই নাইজিরিয়ান জুটির মধ্যে একটা অদ্ভুত বোঝাপড়া রয়েছে। র‌্যান্টিও বলে দিলেন, “আমরা দু’জনেই নাইজিরিয়ান হওয়ায়, ভাষা এক। একটা বাড়তি সুবিধে তো হচ্ছেই।” ডুডু আবার বলে গেলেন, “দেখে নেবেন, যত দিন যাবে আমার আর র‌্যান্টির বোঝাপড়া আরও বাড়বে।” ইস্টবেঙ্গলও যে এ মরসুমে ট্রফির জন্য তাকিয়ে এই বিদেশি ফরোয়ার্ড জুটির সাফল্যের দিকেই! দেখার, ডার্বি জয়ের পর র‌্যান্টি-ডুডু যুগলবন্দিতে লিগ খেতাব আসে কি না। র‌্যান্টির প্রাথমিক লক্ষ্য তো তাই-ই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE