যোদ্ধা। বেজিংয়ের রাজপথে পোস্টারে। ছবি: টুইটার
নেইমার দ্য সিলভা সত্যিই ক্ষমতা রাখেন!
বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের ফুটফুটে ছেলের মতো রসবোধ ক’জন রাখেন, তর্ক উঠতেই পারে। উঠতে পারে কারণ, নেইমারের ঠাট্টা-ইয়ার্কিগুলো আর পাঁচটা সাধারণ যুদ্ধের আগে মোটেও হচ্ছে না।
হচ্ছে— ব্রাজিল বনাম আর্জেন্তিনার চব্বিশ ঘণ্টা আগে। জাগতিক নিয়ম বলে, প্রতিভাবানরা বরাবরের ব্যতিক্রমী, তাঁদের সেটাই নিয়ম। তাই বলে এতটা?
লিওনেল মেসিকে আটকানোর স্ট্র্যাটেজি বার করে ফেলেছেন ব্রাজিল বোমা! এত পর্যন্ত পড়লে বিশ্বের যে কোনও ফুটবল কোচের মুখের হাসিটা চওড়া হবে এবং দুঃখের হল, পরমুহূর্তেই সেটা নিভেও যাবে।
লিওনেল মেসিকে নাকি বল ধরতে দেওয়া যাবে না! ওটাই এলএম টেনকে আটকানোর সেরা উপায়। নেইমার দ্য সিলভার তাই মনে হচ্ছে!
“সিরিয়াসলি বলছি। মেসিকে বল ছুঁতে দেওয়া যাবে না। তা হলেই ও ভাবার সময় পাবে, আর ড্রিবল করতে শুরু করবে। বল ছুঁতে না দিলে মেসি কিছুই করতে পারবে না। আমরাও জিতে যাব!”
নেইমারের সিরিয়াস কথাবার্তা শোনার পর সাংবাদিকরাও সিরিয়াস থেকেছেন বলে খবর নেই। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে যে ক্রমাগত ইয়ার্কি-ফাজলামি চালিয়ে যাওয়া নেইমারের পছন্দের একটা বিষয়। রিও হোক বা বেজিং নিয়মটা একই থাকে। আর চিনের সাংবাদিককুল দু’মিনিট আগেই একই লোককে বলতে শুনেছে, সে কিছুতেই মেসির বিরুদ্ধে খেলতে চায় না। চার বারের ব্যালন ডি’অরের সঙ্গে একই টিমে খেলাটাই বরং তিনি বেশি পছন্দ করেন। “মনে মনে তো ভাবছি মেসির যাতে কাল দিনটা খারাপ যায়। ওর বিরুদ্ধে খেলাটা খুব একটা ভাল ব্যাপার না!” সিরিয়াস মুখচোখে নেইমার থামলেন এবং আবার হাসির ঢেউ সাংবাদিককুলে।
বেজিংয়ের সাংবাদিক মহলে নেইমার জিতে গেলে কী হবে, হেরে গেলেন চিনের আবেগের কাছে। বেজিংয়ের মানুষের আবেগের ব্যালট-বক্সে অনেক পিছনে থেকে গেলেন ব্রাজিল-বোমা। সেখানে মেসি অবিসংবাদী এক। কাকা, দুই। নেইমার, তারও পিছিয়ে থাকা তিন।
সুপারক্লাসিকো নিয়ে (বেজিংয়ে শনিবারের ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা যুদ্ধকে যে নামে ডাকা হচ্ছে) একটা ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে চিনে। সেখানে সমর্থকদের ভোটাভুটিতে মেসি ক্লিন-সুইপ নিয়েছেন দু’লক্ষ বারো হাজার ভোটে। কাকা পেয়েছেন ছিয়াত্তর হাজার ভোট। নেইমার মাত্র চব্বিশ হাজার। কাকার চেয়ে নেইমার এত পিছিয়ে কেন? দু’টো যুক্তি দিচ্ছে চিন। কাকা ফুটবল-জীবনে অবাঞ্ছিত কোনও ঘটনায় জড়াননি। দেবতার মতো ভাবমূর্তি। নেইমারের চেয়ে তিনি মিষ্টভাষী, পাশের বাড়ির ছেলের মতো।
এবং গত কয়েক দিন ধরে মেসি-কাকাকে নিয়ে যা চলছে, দেখলে হিংসে হতে পারে নেইমারের। সুদর্শন মহাতারকা ফুটবলার এর আগে চিন দেখেনি, এমন নয়। ডেভিড বেকহ্যাম যাওয়ার সময় পদপিষ্ট হয়ে আহত হয়েছিলেন পাঁচ জন। মেসির আর্জেন্তিনা এ বার বেজিং আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে নামার পরেও একটা দুর্ঘটনা প্রায় ঘটতে বসেছিল। এক অত্যুত্সাহী সমর্থকের পাগলামিতে। যে পাগলামি এক যুবককে সাড়ে চারশো কিলোমিটার টেনে এনেছে। যাঁর হৃদয়ে কাকা আর চোখে ব্রাজিলের জয়ের স্বপ্ন।
আবহ দেখলে পুরোটাই দুই দেশকে নিয়ে এশীয়বাসীর উন্মত্ততার ছবি বলে মনে হবে। যেটা ভ্রমাত্মক। মাঠ, মাঠের বাইরে দু’জয়াগাতেই। বেজিংবাসীরা চিন্তিত দেশজোড়া দূষণ নিয়ে। বেজিংয়ের আকাশে দূষণের মাত্র এতটাই যে, পরিষ্কার করে কিছু দেখা যাচ্ছে না। মেসিকে মুখোশ পরে নামার পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ। মাঠে আবার নেইমারের ইয়ার্কি যেমন আছে, তেমন আছে দাভিদ লুইজের যন্ত্রণা। “মনে হয়, ১-৭-এর ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি আমরা,” বলে ফেলেছেন লুইজ। আর্জেন্তিনার নতুন কোচ জেরার্দো মার্টিনো আবার চান, বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজিটা আরও এক বার পরীক্ষা করে দেখতে। জেভিয়ার পাস্তোরেকে আবার বহু দিন পর ফেরাচ্ছেন আর্জেন্তিনা কোচ। ঠিক যেমন আঠারো মাসের অভিশাপ কাটিয়ে আবার ব্রাজিল সংসারে ফিরছেন কাকা। স্কোলারির ব্রাজিল তাঁকে ভাবেনি, দুঙ্গা ভেবেছেন। কাকা কথা দিয়েছেন, ব্রাজিলের ভাবমূর্তিকে টেনে তুলবেন।
আর তাই, ১৯১৪ থেকে বিশ্ব যে গনগনে যুদ্ধটা দেখছে, ২০১৪-র বেজিংয়ের ‘বার্ডস নেস্ট’ স্টেডিয়ামও একই আগুনটা দেখবে।
আজ আবার দেখা দু’দেশের, দেখা এ বার ‘পাখির বাসায়’, আজ আবার ব্রাজিল বনাম আর্জেন্তিনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy