প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোল করলেন অ্যামিন গইরি।
ফ্রান্স ৭ : নিউ ক্যালেডোনিয়া ১
জিনেদিন জিদানের মতো তিনিও আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত। কিন্তু জন্ম ফ্রান্সে হওয়ায় ‘লে ব্লুজ’-দের জার্সি গায়েই খেলেন।
অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরো কাপে বছরের শুরুতে আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন সেই অ্যামিন গইরি। রবিবার গুয়াহাটির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ফরাসিদের নিউ ক্যালেডোনিয়ার বিরুদ্ধে ৭-১ জয়ের ম্যাচেও নায়ক তিনিই। লিয়ঁ-র এই ফুটবলারকে ফরাসিরা এখন থেকেই ডাকতে শুরু করেছে ‘নতুন জিদান’।
রবিবার গুয়াহাটির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোল করলেন। করালেন একটি গোল। গরম এবং আর্দ্রতার কারণে ফরাসি কোচ তাঁকে দ্বিতীয়ার্ধে তুলে না নিলে এ দিন হ্যাটট্রিকও করে ফেলতে পারতেন। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে সুদর্শন এই ফরাসি ফুটবলার বলে গেলেন, ‘‘জন্মের পর থেকে যে দিন ফুটবল বুঝতে শিখেছি, সে দিন থেকেই জিদান আমার আদর্শ। এই টুর্নামেন্টে ভাল খেলে দ্রুত সিনিয়র টিমে জায়গা করে নিতে চাই। তার পরের লক্ষ্য জিনেদিন জিদানের কোচিং-এ খেলতে।’’ তা হলে কি রিয়াল মাদ্রিদ? এ বার আর কোনও উত্তর দেন না ফরাসিদের নয় নম্বর জার্সিধারী ‘নতুন জিদান’ অ্যামিন গইরি। হাঁটা দেন টিমবাসের দিকে।
ভারতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ফরাসিদের যোগ্যতা অর্জন এই অ্যামিনের সৌজন্যেই। চলতি বছরের শুরুতে ক্রোয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউরো অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের কাছে হেরেছিল ফ্রান্স। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালের সেরা টিম হিসেবে তাঁরা ভারতে আসার ছাড়পত্র পায় নয় অ্যামিন গইরি-র গোলে হাঙ্গেরিকে হারিয়ে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে ৮ ফুটবলার, তবুও মণিপুরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জেমসের
এই বিশ্বকাপ কভার করতে সুদূর নিউ ক্যালেডোনিয়া থেকে এসেছেন সাংবাদিক। মার্টিন শার্মেসন। এমনিতেই নিউ ক্যালেডোনিয়া ফরাসি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল। ম্যাচ শুরুর আগে সেই শার্মেসন বলছিলেন, ‘‘২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগালের দুর্দান্ত ফুটবল খেলে ফ্রান্সকে হারানোর পর সেনেগালের সাংবাদিকরা আনন্দ করেছিল। দেখি আজ আমিও সে রকম আনন্দ করতে পারি কি না।’’
গুয়াহাটিতে ফ্রান্সের ম্যাক্সেন্স ক্যাকারে-র উৎসব। ছবি: গেটি ইমেজেস
কিন্তু প্রথমার্ধেই ৬-০ হয়ে যাওয়ার পর সেই ফর্মেশনের দিকে এগোতেই তাঁর বিলাপ, ‘‘কী হল বুঝতেই পারলাম না। চেহারাতেই মার খেল আমাদের ছেলেগুলো।’’
তাঁদের কোচ দমেনেখ ওখালিও বলছিলেন, ‘‘এই ফলে অবাক হইনি।ফ্রান্সের সঙ্গে ফুটবল মানে আমাদের আকাশ-পাতাল তফাৎ।’’
আসলে ম্যাচের শুরু থেকেই জয়ের খিদে নিয়ে তাঁদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ফরাসিরা। যার নেতৃত্বে অ্যামিন গইরি ও নেমারের ক্লাব প্যারিস সঁ জারমঁ-র ইসিন অ্যাডলি। এই দু’জনের সঙ্গে ডানদিক থেকে উঠে এসে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়াচ্ছিলেন ভিনসেন্ট কোলঁ। বল নিউ ক্যালেডোনিয়ার মাঝমাঠ এবং রক্ষণ ভাগে থাকলে এদের সঙ্গে এসে আবার জুড়ছিলেন চতুর্থজন। তিনি দলের দশ নম্বর ফুটবলার ক্যাকোরে ম্যাক্সিন। ফরাসিদের এই চতুর্ভূজ আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ম্যাচের শুরু থেকেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল বিপক্ষের রক্ষণ। আর সেখান থেকেই প্রথমে আত্মঘাতী গোল খাইয়ে বসেন বার্নাড ইওয়া। সেখান থেকেই অ্যামিন, অ্যাডলিদের গোলের সুনামি শুরু। পাঁচ মিনিটে ওই আত্মঘাতী গোলের পরেই জোড়া গোল অ্যামিনের। গোল করলেন অধিনায়ক ক্লদিও গোমেজও। গোল করলেন ম্যাক্সিনও। শনিবারই মামা হয়েছেন তিনি। তাই গোলের পর নবজাতকের জন্য বিশেষ সেলিব্রেশনও করতে দেখা গেল ফরাসিদের।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ফরাসিদের সেই মরিয়া ভাব দেখা যায়নি। হয়তো ক্লান্তি ও জয় নিশ্চিত হওয়ায়। এই অর্ধে ফের আত্মঘাতী গোল করেন নিউ ক্যালেডোনিয়ার কিয়ান ওয়ানিস। ম্যাচের একদম শেষ লগ্নে ফ্রান্সের সপ্তম গোল উইলসন ইসিদর-এর।
ম্যাচ শেষে ফরাসি কোচ বলছিলেন, ‘‘এই ম্যাচ সাত গোলে জিতে আনন্দের কিছু নেই। আসল ম্যাচ তো জাপানের বিরুদ্ধে। এ দিন কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা গোল বাড়াতে পারিনি। পেনাল্টিও মিস করলাম। আর বিপক্ষও রক্ষণের ফাঁক খুঁজে গোল করে গেল। পরের ম্যাচের আগে এগুলো বন্ধ করতেই হবে।’’
ফ্রান্স: ইয়াহিয়া ফোফানা, ভিনসেন্ট কোলঁ, অ্যান্ডি পেমার্দ, ওউমার সোলেঁ, উইলিয়াম বিয়ান্দা, ক্লদিও গোমস, ইসিন অ্যাডলি (লেনি পিতরঁ), অরেলিয়েঁ শুমেনি, অ্যামিন গইরি (উইলসন ইসিদর), ক্যাকোরেঁ ম্যাক্সিন (মাথিস পিকোলিউ), উইলিয়াম গুবেলস।
নিউ ক্যালেডোনিয়া: উনে কেসিন, কিয়াম ওয়ানিস, সিদরি ওয়েডেনজস, নিল ওয়াহিবো (লিওনেল থানেনা), জেকব জেনো (জওসা লেমু), পিয়েরঁ বাকো, সিরিল নিপি, তিতোয়াঁ রিচার্ড, গেল লিউয়েদিয়া, বার্নার্ড ইউওয়া, নত্রা এনোকা (রাউল ওয়েনিসো)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy