অদম্য: এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ঋতুর অনুশীলন। নিজস্ব চিত্র।
এ যেন স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতরানোর মরিয়া প্রচেষ্টা!
রাস্তার ধারে বটগাছের পাশে সিমেন্টের ছোট্ট ডিভাইডার। সেখানেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে জিমন্যাস্টিক্সের ব্যালান্সিং বিমের অনুশীলন। হিসাবের ভুলচুকেই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আর ফ্লোর এক্সাসাইজের মহড়া চলছে রাস্তায়! সেটাও প্রবল ঝুঁকি নিয়েই। এ রকম প্রতিকূলতার সঙ্গে অনুশীলন করেই অগস্টে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলার উদীয়মান জিমন্যাস্ট ঋতু দাস। বাছাই পর্বে গোটা ভারতে তিনি প্রথম। কিন্তু তাঁর প্রতিভা এভাবেই অবহেলিত হচ্ছে পরিকাঠামো ও অর্থের অভাবে।
কোচ মৌনা কর্মকারের তত্ত্বাবধানে তাঁর এই মহড়া দেখতেই ইদানীং বাঁশবেড়িয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন পথচলতি মানুষেরা। মৌনার নির্দেশ ও ভোকাল টনিকও চলে সমান তালে, ‘‘তোকে পারতেই হবে। ফাঁকি দিলে কিন্তু দীপা কর্মকারের নামই রেকর্ড বুকে থাকবে। নিজেকে সেখানে দেখতে পাবি না,’’ বলেন ঋতুর কোচ।
বছর খানেক আগে খিদিরপুরের দুই খুদে প্রতিভা আলি ও লাভলি রাস্তায় ভল্ট দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে ভারত ও বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্সের ঘরে ঘরে নিজেদের নাম পৌঁছে দিয়েছিল। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দুই ক্রীড়ামন্ত্রীর প্রচেষ্টাতে শেষ পর্যন্ত সাইয়ে অনুশীলনের জায়গাও পেয়ে গিয়েছিল এই দু’জনে। কিন্তু ঋতুর কাছে এই সুযোগও অধরা! তাঁকে অনুশীলন চালাতে
হয় রাস্তাতেই।
এ রকম বিদপদসঙ্কুল ভাবে অনুশীলন কেন? ঋতুর প্রশিক্ষক বলেন, ‘‘অনুশীলন করানোর কোনও জায়গা পাইনি। পাড়ার ক্লাবে জিম করাই। আর এ ভাবেই তৈরি করছি ছাত্রীকে। মেয়েটার প্রতিভা আছে। ও কিন্তু ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে পদক পেতেই পারে ব্যালান্সিং বিমে। ঋতুর ডিফিকাল্টি ভ্যালু (দক্ষতার সূচক) ৬.৪। ভারতে অনেকের নেই।’’
গত বছর লকডাউন শুরুর আগে ঋতু খেলো ইন্ডিয়া গেমস থেকে বাংলার হয়ে দু’টি সোনা ও একটি রুপোর পদক পেয়েছিলেন। রাজ্য গেমসেও তিনটি সোনা একটি রুপো পেয়েছেন এই উঠতি জিমন্যাস্ট। বাবা নিত্যানন্দ দাস কেওটা বাজারে সব্জি বিক্রি করেন। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাই তাঁর পুলিশকর্মী দিদি (প্রশিক্ষক) নিজের বাড়িতে এনে রেখেছেন ঋতুকে। মৌনা বলছেন, ‘‘খামারপাড়া তরুণ সমিতি ক্লাবে প্রথম দেখেছিলাম ঋতুকে। ওর নমনীয় শরীর ও শক্তি ছিল। কিন্তু টেকনিকে ভুল। তা শুধরে দেওয়ার পর থেকে আমার কাছেই প্রশিক্ষণ নেয় ও।’’ যোগ করেন, ‘‘বাড়িতে পুষ্টিকর খাবার ঠিক মতো পায় না। প্রতিভা নষ্ট হবে বুঝতে পেরে আমার বাড়িতেই রেখে দিয়েছি ওকে। ঋতুকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পদকের
স্বপ্ন দেখি।’’
কিন্তু এতেও প্রতিকূলতা কাটেনি ঋতুর। এ বার তাঁর রাতের ঘুম কেড়েছে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমস। অগস্টের ১৯-২৯ চিনের চেংদুতে বসবে এই প্রতিযোগিতা। সেখানে ভারতের পাঁচ জিমন্যাস্টের তিনজনই বাংলার। ঋতু ছাড়া বাকি দু’জন, উত্তরপাড়ার সৌম্যশ্রী দাস (বাছাই পর্বে দ্বিতীয়) ও বর্ধমানের রোজিনা মির্জা (বাছাই পর্বে পঞ্চম)। এঁদের মধ্যে রোজিনা পঞ্জাবের গুরু নানক দেব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। চিনে যাওয়ার জন্য দু’লক্ষ টাকার পুরোটাই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় দেবে। সেখানে ঋতু ও সৌম্যশ্রী এখনও জানেন না কী ভাবে সেই অর্থ জোগাড় করবেন! তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজ্য সংস্থা এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি। ঋতু বলছেন, ‘‘অনুশীলন করছি পুরোদমে। কিন্তু খরচের কথা ভাবলেই মন খারাপ হচ্ছে। অনুশীলনের ঠিক জায়গা নেই। অর্থ নেই। বাছাই পর্বে প্রথম হয়েও চিন্তা হচ্ছে আদৌ চিনে যেতে পারব তো! অসুবিধার সঙ্গে নিয়েই লড়ছি। প্রস্তুতি আমাদের হাতে রয়েছে। বাকিটা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। ’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy