প্রত্যয়ী: নিজের উপরে কখনও বিশ্বাস হারাননি ফেডেরার। ফাইল চিত্র
কথাটা তিনি আগেও বলেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীরাই আমায় এক জন খেলোয়াড় হিসেবে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে। তবে এই কথাটাই যখন তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল সম্পর্কে ফের বলতে শোনা গেল তাঁর মুখে, আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি— রজার ফেডেরার।
একটি অনুষ্ঠানে ফে়ডেরার বলেন, ‘‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে ধন্যবাদ দিতে চাই। গত মরসুমটা অবিশ্বাস্য কেটেছে ওর। আমাদের মধ্যে দারুণ দ্বৈরথ হয়েছে। ওর জন্যই আজ আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি। রাফা এক জন দুরন্ত খেলোয়াড়, দুরন্ত বন্ধু এবং দুরন্ত অ্যাথলিট।’’ বলতে বলতে ফে়ডেরারের চোখে জল।
শুধু নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়েই নয়, ফেডেরার কথা বলেন নানা প্রসঙ্গে। গত মরসুমে ছ’মাস হাঁটুর চোটে ছিটকে যাওয়ার পরে কী ভাবে তিনি প্রত্যাবর্তন ঘটালেন টেনিস কোর্টে, কী ভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন দিনের পর দিন, সব উঠে আসে তাঁর কথায়। ‘‘প্রতিটা ম্যাচের আগে আমায় একই প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। কখন আমি অবসর নেব? আমার কি মনে হয় ফের জিততে পারব? আমি কি হারাতে পারব এই প্রতিদ্বন্দ্বীকে? উত্তরগুলো প্রত্যেকটা ম্যাচে দিতে হতো। যেন আমি ২০ সেকেন্ড আগে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘তখন মনে হতো যেন একটা একটা দরজার উপর বার বার হাতুড়ি মারছে কেউ। মনে হতো, আমায় এই দরজাটা ভেঙে বেরোতে হবে। এই ব্যাপারটা আমাকে মানসিক দিক থেকে খুব শক্তপোক্ত করে তুলেছিল,’’ বলেন তিনি।
এর পরে যখন সাফল্য পেতে শুরু করলেন, তখনকার ছবিটাও তুলে ধরেছেন সুইস কিংবদন্তি, ‘‘যখন আপনি ভাল খেলতে শুরু করবেন ওই সব প্রশ্নগুলো আর থাকবে না। তখন সব প্রশ্নই থাকে ফোরহ্যান্ড আর ব্যাকহ্যান্ড সংক্রান্ত। আমার কাছে এটাই বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। মাথায় আর কিছু না রেখে নিজের কথা আর আমার টিমের কথা মতো চলা।’’
গত মরসুমে দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে চলতি মরসুমে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামও জিতে অনন্য রেকর্ড গড়া ফেডেরার এর পরে নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দেন, ‘‘আমি কি এখনও জিততে পারি? প্রশ্নটার উত্তর হল, যতদিন আমার মধ্যে সত্যি সত্যি বিশ্বাসটা থাকবে, ততদিন প্রত্যাবর্তনটা উপভোগ করব। আমি এটাই বিশ্বাস করি। কখনও নিজের মধ্যে নেতিবাচক কোনও চিন্তা আসতে দিইনি।’’
খেলাধুলোর জগতে অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন ঘটানো সুইস মহাতারকা এর পরে তাঁর ফিরে আসার নেপথ্যে চোট পেয়ে ছ’মাস বাইরে থাকার সময়টাকে তুলে ধরেছেন। ফেডেরারের মতে ওই সময়টায় তিনি যে ভাবে দ্বন্দ্বে না ভুগে পরিষ্কার একটা দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন সেটাই তাঁকে সাফল্য পেতে সাহায্য করেছে। ফেডেরার বলেন, ‘‘মানুষকে ভুল প্রমাণ করে নয়, নিজেকে ঠিক প্রমাণ করে দারুণ লেগেছে। অবশ্যই আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। বিশ্বাস ছিল আমি সেরা খেলোয়াড়দের হারাতে পারি। আরও একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারি। সেটা যে স্ল্যামই হোক।’’ সঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিনয়ী ফেডেরার আরও যোগ করেন, ‘‘আমি একাই নয়, বহু অ্যাথলিট আছে যারা প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। সেটা আমি জানি। তবে আমার কাছে এই সাফল্যটা এত মধুর কারণ শুধু সাফল্য পাওয়াটাই নয়, এটা আমার প্রত্যাবর্তনও তো। আমি খুব খুশি, পরিশ্রমের মূল্যটা শেষ পর্যন্ত পেয়েছি।’’
এ বার তাঁর লক্ষ্য কী?
ফেডেরার বলেন, ‘‘আমি ৯৭টা খেতাব জিতেছি কেরিয়ারে। এক হাজারের উপরে ম্যাচ জিতেছি। আমার কোনও লক্ষ্য ঠিক করার আর প্রয়োজন নেই। তবে ১০০টা ট্রফি জিততে পারলে দারুণ লাগবে। ভাবিনি কখনও এমন একটা জায়গায় আসব। এখনও মনে আছে ২০০১-এ মিলানে আমার প্রথম টুর্নামেন্ট জেতার কথা। ভেবেছিলাম বাকি জীবনে অন্তত সন্তানদের বলতে পারব, টেনিস খেলতে নেমে আমি একটা ট্রফি জিততে পেরেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy