এক জন ছোট শহরের ছেলে। অন্য জন ছোট শহর নয়, ছোট্ট এক গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন। পঞ্জাবের অনামী ফাজিলকা গ্রামের সেই ছেলেটি বৃহস্পতিবার ৬৫ হাজার দর্শকের সামনে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে শুধু জেতালেন, তা নয়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো কিংবদন্তিকেও অবাক করলেন।
বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁর দেওয়া ক্যাচ শুভমানকে ফেলতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ধোনি। সেই শুভমানই যখন তাঁর হাত থেকে ম্যাচ বার করে নেন, তখনও অবাক চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ককে।
বৃহস্পতিবার যে মঞ্চ আসলে ছিল ধোনির, সেই মঞ্চ মাতিয়ে দিলেন ১৯ বছরের ছেলেটি। নিজের সেই শুরুর দিনগুলোর কথাই বোধহয় মাহিকে মনে করিয়ে দিলেন শুভমান। আর সেই জন্যই ইডেনে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে স্টাম্পের পিছন থেকে এসে আগে তাঁকেই অভিনন্দন জানালেন বিশ্বকাপজয়ী ভারত অধিনায়ক। কিছু বললেনও।
কী বললেন, তা জানা গেল না ঠিকই। তবে ফাজিলকার ‘শুভি’ যে কিংবদন্তির কথা শুনে চাঙ্গা, তা বোঝাই গেল। আগের ম্যাচগুলোতে তাঁকে নামানো হচ্ছিল সাত নম্বরে। এ দিন নামেন চারে। নীতীশ রানার চোটের জন্যই সুযোগটা পেয়ে গেলেন। তা দুর্দান্ত ভাবে কাজে লাগালেন শুভমান। ম্যাচের পরে টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘চার নম্বরে নামতে হবে শুনে খুব আনন্দ পাই। দীনেশভাই বলে দেয়, মাঝের ওভারগুলোতে আমাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলতে হবে। স্পিনারদের ঠিক মতো সামলানো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যে রকম বল আসছিল, সেই হিসেবেই খেলেছি। ঠিক করে নিয়েছিলাম মারার বল হলে মারব। মারার মতো না হলে মারব না। তবে ঠিক করে নিই, রান তুলে যেতেই হবে।’’
মেজাজ: গ্যালারি থেকে নাইটদের জয় দেখলেন জুহি। উদ্বেগে সাক্ষী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ইডেন ও বাংলা বরাবরই পয়া তাঁর কাছে। বাংলার বিরুদ্ধেই রঞ্জি ট্রফি অভিষেক তাঁর। এই বাংলারই আইপিএল দলে অভিষেকও হল। আর সেই বাংলার সেরা ক্রিকেট মঞ্চেই নিজের সেরা আইপিএল ইনিংসটা খেললেন। তাই ধন্যবাদ দিলেন বাংলার মানুষ, ইডেনের দর্শকদের। বলেন, ‘‘ইডেনের দর্শকরা দারুণ। এত সমর্থন করেছে আমাদের। এমন সমর্থক আমি কোথাও দেখিনি।’’ তবে তার চেয়েও রোমাঞ্চিত জাক কালিস, সাইমন কাটিচদের সান্নিধ্য পেয়ে। বলেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে অনুশীলন করা, কথা বলা, এগুলো আমার কাছে সেরা প্রাপ্তি। হারি, জিতি আইপিএলের এই অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকবে।’’
এ দিন দীনেশ কার্তিকও হিসাব কষে দুর্দান্ত ব্যাট করেন। কিন্তু শুভমানের দু’টো ছয় ও আধ ডজন চারে ভরা ৩৬ বলে ৫৭ রানের ইনিংসের চর্চাই বৃহস্পতিবার রাতের ইডেনে ঘুরছিল সবার মুখে মুখে। ম্যাচ শেষে বিপক্ষের সবাই এসে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে যান। ধোনিদের কোচ স্টিভন ফ্লেমিং সাংবাদিক বৈঠকে এসে বলেই দিলেন, ‘‘ছেলেটা যে ভাবে সুযোগটা কাজে লাগাল, তার প্রশংসা করতেই হবে। অসাধারণ কয়েকটা শট খেলেছে শুভমান। অধিনায়কের সঙ্গে ওর বোঝাপড়াও ছিল অসাধারণ। দুর্দান্ত এক প্রতিভা উঠে এল আজ ইডেনে।’’
আর তাঁর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক বললেন, ‘‘ও আমাদের বিশেষ প্রতিভা। তবে আমি ওকে বেশি চাপে ফেলতে চাই না। আজ শুভমান যা ব্যাট করল, তাতে তো ওকে ভারতের নীল জার্সিতে দীর্ঘদিন দেখতে পাব বলেই মনে হচ্ছে।’’ অধিনায়কের মুখে যখন এই কথা, তখন এর চেয়ে বড় প্রশংসা আর কী হতে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy