নায়ক: নিজের ফ্ল্যাটে ডার্বির গোলদাতা কিংগসলে। নিজস্ব চিত্র
যুবভারতীতে অভিষেকের ডার্বিতেই নায়ক তিনি। তাঁর একমাত্র গোলেই রবিবার ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে আই লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন মোহনবাগান সমর্থকরা। সেই কিংগসলে আবুমানেমে এজের নাটকীয় উত্থানের নেপথ্যে ডার্বির আর এক নায়ক। তিনি— চিমা ওকোরি!
সোমবার দুপুরে কালিকাপুরের পূর্বলোকে নিজের ফ্ল্যাটে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কিংগসলে। হঠাৎই বেজে উঠল মোবাইল ফোন। ইংল্যান্ড থেকে ফোন করে চিমা অভিনন্দন জানালেন সবুজ-মেরুনের নতুন নায়ককে। ফোন ধরেই প্রাক্তন কোচকে কিংগসলের প্রশ্ন, ‘‘স্যার ডার্বি দেখেছেন?’’ অভিভূত কিংগসলে বলছিলেন, ‘‘চিমা স্যারের কোচিংয়েই পুলিশ এসি-তে খেলেছি। তাই স্যার ফোন করায় দারুণ লাগছে।’’
চিমা শুধু কিংগসলের প্রাক্তন কোচই নন, অভিভাবকও। সবুজ-মেরুনের নতুন তারকাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফোনে চিমা বললেন, ‘‘যত দূর মনে পড়ছে গড়িয়ার কাছে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে তিন-চার জনের সঙ্গে থাকত কিংগসলে। আমি ওকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘কিংগসলে কিন্তু খুব ভাল রান্নাও করতে পারে।’’
আরও পড়ুন: জিতে স্বস্তিতে সঞ্জয়, চাপে খালিদ
গত এক বছরে নাটকীয় ভাবে বদলে গিয়েছে কিংগসলের জীবন। আই লিগে আইজল এফসি-র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর তিনি। বছর দু’য়েক আগেও তিন-চার জন বন্ধুর সঙ্গে ছোট্ট ফ্ল্যাটে গাদাগাদি করে থাকতেন। এখন তাঁর ঠিকানা ঝাঁ চকচকে তিন কামরার ফ্ল্যাট। পুলিশ এসি ও পিয়ারলেসে খেলার সময় অনুশীলনের পর ময়দান থেকে একা একাই ফিরতেন ফ্ল্যাটে। কেউ কোনও দিন সেলফির অনুরোধ করেননি। অটোগ্রাফের খাতাও এগিয়ে দেননি। রবিবার যুবভারতী ছাড়ার সময় মোহনবাগান সমর্থকদের আবদার মেটাতে মেটাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন কিংগসলে। চিমা বলছিলেন, ‘‘কিংগসলেকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বললাম, আই লিগ সবে শুরু হয়েছে। উচ্ছ্বাসে ভেসে যেও না। চেষ্টা করো এই ফর্মটা ধরে রাখার।’’
সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার অবশ্য মনে করেন না, তাঁর জীবন বদলে গিয়েছে। বললেন, ‘‘আমি একই রকম আছি। আমার কাজ, মাঠে নেমে নিজের সেরাটা দেওয়া। প্রত্যেকটা ম্যাচেই সেই লক্ষ্য নিয়ে নামি। বাইরে কী হচ্ছে তা নিয়ে আগ্রহ নেই।’’
তবে প্রথম দর্শনে কিংগসলেকে একেবারেই মনে ধরেনি চিমার! হাসতে হাসতে তিনি শোনালেন সেই কাহিনি। চিমা বললেন, ‘‘কিংগসলেকে আবিষ্কার করি ট্রায়াল থেকে। পুলিশ এসি-র দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠিক করেছিলাম, ট্রায়ালের মাধ্যমেই ফুটবলার বেছে নেব। অনেক ফুটবলারের সঙ্গে কিংগসলেও এসেছিল। এত রোগা ডিফেন্ডার আমি কখনও দেখিনি। তাই প্রথমে ওকে নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখাইনি। ভাবলাম, এই চেহারা নিয়ে অন্তত সফল ডিফেন্ডার হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রথম দিনই আমার ভুল ভেঙে দিয়েছিল কিংগসলে। ট্রায়ালে অবিশ্বাস্য খেলেছিল।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘কিংগসলে প্রচণ্ড সৎ। কলকাতা লিগে একটা ম্যাচে ও খুব খারাপ খেলেছিল। যদিও তার জন্য আমি কিছু বলিনি। ম্যাচের পর ও নিজেই আমার ঘরে এসে বলল, স্যার আমার ভুলেই দল গোল খেয়েছে। কথা দিচ্ছি, এই ভুল আর হবে না।’’
চিমার মতে কিংগসলের সাফল্যের নেপথ্যে ফুটবলের প্রতি দায়বদ্ধতা, পরিশ্রম এবং শৃঙ্খলা। বললেন, ‘‘ফুটবল ছাড়া কিংগসলের জীবনে অন্য কিছু নেই। ওকে কখনও দেখিনি, নাইট ক্লাবে যেতে। বন্ধুদের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত পার্টিতে মেতে থাকতে। আশা করি, এখনও একই রকম আছে।’’
চিমার অনুমানই ঠিক। ডার্বি জয়ের পরে রবিবার সন্ধ্যায় চার্চে প্রার্থনা করতে যান কিংগসলে। তার পর ফ্ল্যাটে ফিরে ডিনার সেরে ঘুম। ডার্বি-জয় সেলিব্রেট করলেন না? কিংগসলে বললেন, ‘‘আমি বাড়িতে গান শুনে সময় কাটাতেই ভালবাসি। সারা বছর প্রচুর ম্যাচ খেলতে হয়। তাই ফিট থাকার জন্য বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি। সেটা একমাত্র বাড়িতে থাকলেই সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy