Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

লেডি মেরিনার্সের প্রেরণা সবুজ-মেরুন ‘দিদিমা’

রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় নৈশালোকের বারাসত স্টেডিয়ামের এক কোণে বসে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে মধ্যমণি করে কোরাসে গলা মেলাচ্ছিলেন জনা পনেরো ঝকঝকে তরুণী। তাঁদের গলায়, ‘‘আমাদের সূর্য মেরুন/ নাড়ির যোগ সবুজ ঘাসে/ আমাদের খুঁজলে পাবে সোনার মো়ড়া ইতিহাসে...’’

‘দিদিমা’ শান্তি চক্রবর্তী।

‘দিদিমা’ শান্তি চক্রবর্তী।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় নৈশালোকের বারাসত স্টেডিয়ামের এক কোণে বসে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে মধ্যমণি করে কোরাসে গলা মেলাচ্ছিলেন জনা পনেরো ঝকঝকে তরুণী। তাঁদের গলায়, ‘‘আমাদের সূর্য মেরুন/ নাড়ির যোগ সবুজ ঘাসে/ আমাদের খুঁজলে পাবে সোনার মো়ড়া ইতিহাসে...’’ শুনে খেলা দেখা ছেড়ে তাঁদের দিকে ঘুরে তাকাচ্ছিলেন আশপাশের দর্শকেরা। সবার একটাই কৌতূহল, ‘এরা কারা?’’

ওঁদের কারও বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুরে, কেউ এসেছেন হুগলির কোন্নগর থেকে। কেউ আবার সল্টলেকের বাসিন্দা। ওঁদের পোশাকি নাম ‘লেডি মেরিনার্স’। মোহনবাগানের প্রথম মহিলা ফ্যান ক্লাব। প্রায় সবার গায়ে একই নকশার সবুজ-মেরুন জার্সি।

কলকাতা ফুটবলের শহর। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ থাকলে এক লাখ লোকের ভিড় অনেক বার দেখেছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। কিন্তু ঘটি হোক কিংবা বাঙাল— কোনও পক্ষের হয়েই মহিলা দর্শকদের সে ভাবে দল বেঁধে মাঠে দেখা যেত না এত দিন। যাঁরা আসতেন তাঁরা হয় ক্লাবের সদস্যা অথবা কোনও ফুটবলারের আত্মীয়া, স্ত্রী-বান্ধবী। গত বছর কয়েক ধরে সেই ধারা ভাঙতে শুরু করেছে। বড় ম্যাচের গ্যালারিতে সবুজ-মেরুন এবং লাল-হলুদ রঙে মুখ রাঙানো তরুণী এখন প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে সক্রিয় ফ্যান ক্লাব এর আগে তৈরি হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না কলকাতা ময়দানের অনেক প্রবীণ।

‘লেডি মেরিনার্স’ তৈরি হয়েছে ২০১৫-তে। তবে ফ্যান ক্লাবটি সক্রিয় ভাবে কাজ শুরু করেছে ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে। এখন সদস্যা সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে বহুজাতিক সংস্থার কর্মী—সবাই রয়েছেন তার মধ্যে। রয়েছেন আশি বছরের বৃদ্ধা শান্তি চক্রবর্তী। মধ্য কলকাতায় হিন্দ সিনেমার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাকে লেডি মেরিনার্সের বাকিরা ‘দিদিমা’ বলে ডাকেন। বারাসত স্টেডিয়ামে রবিবার মোহনবাগান-চার্চিল ব্রাদার্স খেলায় ‘দিদিমা’-ও গ্যালারিতে হাজির ছিলেন।

লেডি মেরিনার্সের সদস্যা সল্টলেকের বাসিন্দা মদালসা বোস একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘দিদিমাই আমাদের অনুপ্রেরণা। এই বয়সে উনি আমাদের নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন! এর থেকে বড় পাওনা আর কিছু হয় না।’’ মদালিসা জানাচ্ছেন, লেডি মেরিনার্সের সদস্যাদের অনেকেরই বাবা-দাদা মোহনবাগানের সদস্য, কারও প্রেমিক মোহনবাগান সমর্থক। তাঁদের হাত ধরেই সবুজ-মেরুনের এই মহিলা সমর্থকদের মোহনবাগান মাঠে আসা। তার পর সবাই মিলে এই মহিলা ফ্যান ক্লাব তৈরির উদ্যোগ। দিন কয়েক আগেই ক্লাব লনে লেডি মেরিনার্সের জার্সি উদ্বোধন করেছেন মোহনবাগান গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার। অনুষ্ঠানে ছিলেন কয়েক জন বাগান কর্তাও।


বারাসত স্টেডিয়ামে হাজির লেডি মেরিনার্স সদস্যরা।—নিজস্ব চিত্র

শান্তিপুরের বাসিন্দা ডোনা মুখোপাধ্যায়, অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, কোন্নগরের সৌমালি মিত্ররা কলেজ পড়ুয়া। তাঁদের কথায়, ‘‘বাড়ির সবাই মোহনবাগান সমর্থক। আমাদের কয়েক জন বান্ধবীর উৎসাহে মাঠে আসতে শুরু করি। এখন ক্লাবের প্র্যাকটিস থাকলেও মাঠে চলে আসি। মোহনবাগানের নাম বললে বাড়িতে কেউ বারণও করে না।’’

পড়শি ক্লাবে মহিলা ফ্যান ক্লাব তৈরি নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একাংশ। তাঁদের কটাক্ষ, ‘‘ওরা এখন মাঠে যেতে শিখেছে, তাই এত লাফাচ্ছে। আমাদের বাড়ির মেয়েরা অনেক দিন আগে থেকেই মাঠে যায়। এ নিয়ে এত হইচইয়ের কী আছে?’’

ইস্ট-মোহনের যুযুধান প্রমীলা সমর্থকদের লড়াইটা কিন্তু উপভোগ করছে ময়দান!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy