নায়ক: মহমেডানের গোলদাতা প্রসেনজিৎ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মহমেডান ১ • এফসিআই ০
টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে কলকাতায় এসে এফসিআই-এর বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেই খাতা খুলেছিলেন তিনি।
সেই দীপেন্দু বিশ্বাস এখন মহমেডানের সহ-সভাপতি ও ফুটবল সাব কমিটির কর্তা। দলের খেলা দেখতে এ দিন মাঠে ছিলেন তিনি। বিদেশিহীন এফসিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে বাজি আর্মান্দ, মহম্মদ আমিরুলরা একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট করছিলেন। আর হতাশায় ছটফট করছিলেন দীপেন্দু। পারলে যেন নিজেই মাঠে নেমে পড়েন। শেষ পর্যন্ত হাসি মুখেই বারাসত স্টেডিয়াম ছাড়লেন তিনি। নেপথ্যে, আশি মিনিটে বাঁ পায়ের জোরালো শটে প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীর গোল।
আগরপাড়ার উসুমপুরের ছেলে প্রসেনজিতের বাবা কানু চক্রবর্তী বাজারে সব্জি বিক্রি করেন। ছেলের খেলা দেখতে এ দিন মাঠে এসেছিলেন। বড় দলের জার্সি গায়ে গোল করে ম্যাচ জেতানোর পরে অনূর্ধ্ব-১৪ ভারতীয় দলে খেলে আসা প্রসেনজিৎ বলছিলেন, ‘‘আমাকে ফুটবলার তৈরি করতে বাবার অবদান প্রচুর। মহমেডান সমর্থকদের সঙ্গে বাবার মুখেও হাসি ফোটাতে পেরে তাই ভাল লাগছে।’’ বিধাননগর ফুটবল অ্যাকাডেমিতে শ্যামল ঘোষের কাছে ফুটবলে হাতেখড়ি। স্বল্প মেয়াদে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ফরাসি ক্লাব এফসি মেতজ় থেকেও। ছেলেটির গতি ভাল। রাহুল কেপি-র বাড়ানো বল ডান দিকে ধরে এফসিআই রক্ষণকে বোকা বানিয়ে প্রসেনজিৎ গোল না করলে হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরতে হত, বর্ষণমুখর বিকেলে মাঠে হাজির হাজার সাতেক মহমেডান সমর্থককে।
ম্যাচ শেষে মহমেডান কোচ রঘু নন্দীও বলছিলেন, ‘‘গোল না হওয়ায় চাপ বাড়ছিল। গোলটার পরে স্বস্তি ফিরল।’’ অন্য দিকে, এফসিআই কোচ বিকাশ পাঁজির গলায় তখন হতাশা। বলছিলেন, ‘‘গোলটার সময় আমার লেফ্ট ব্যাক প্রবীর ‘ফাইনাল ট্যাকল’ করতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনল!’’
তবে এই একটা ভুল করলেও এফসিআই-এর পারফরম্যান্স মন্দ নয়। প্রথমার্ধে ভালই খেলছিলেন সুবোধ কুমাররা। কিন্তু ৩৫ মিনিটে নিজের গোলকিপারকে ট্যাকল করে দীপক মন্ডল চোট পেয়ে বাইরে যেতেই ছন্দ হারায় এফসিআই।
৭৯ মিনিট পর্যন্ত মহমেডানের আটকে থাকার কারণ তাঁদের দুই উইঙ্গার দীপেন্দু দোয়ারি এবং জুয়েল রাজার ছন্দে না থাকা। জুয়েল এখন অতীতের ছবি। গতি কমেছে। তাই দ্রুত প্রতি-আক্রমণে যেতে পারছেন না। ফলে চাপ বাড়ছিল দলের। মহমেডান কোচ রঘু নন্দী গত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ছোট দলের কোচ হিসেবে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলিয়ে বড় দলের পয়েন্ট কেড়েছেন। কিন্তু তাঁকে বুঝতে হবে, বড় দলে এই নীতির বদলে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে হয়। কেন তিনি বাজি আর্মান্দকে দুই স্টপারের সামনে না রেখে দুই ফরোয়ার্ডের পিছনে খেলালেন না তা বোঝা গেল না। যার ফলে মহমেডান আক্রমণ ও মাঝমাঠের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া ছিল না। সমস্যা সেখানেই।
মহমেডান কোচকে বুঝতে হবে, বিদেশিহীন এফসিআইকে তিনি রোজ পাবেন না। বিপক্ষ গোলকিপার প্রথম পোস্টে দাঁড়িয়ে কিন্তু রোজ গোলও খাবেন না।
মহমেডান: প্রিয়ন্ত সিংহ, তন্ময় ঘোষ, ল্যানসিং ত্যুরে, প্রসেনজিৎ পাল, কামরান ফারুক, দীপেন্দু দোয়ারি (রাহুল কেপি), লাল্টু হেমব্রম, বাজি আর্মান্দ, জুয়েল রাজা (মহম্মদ আমিরুল, রাকেশ কর্মকার), প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী, প্রিন্সউইল এমেকা।
এফসিআই: ধনঞ্জয় অধিকারী, অমিত চক্রবর্তী, দীপক মণ্ডল (বিকাশ মল্লিক), সুনীল মল্লিক, প্রবীর বীর, শেখ ফিরোজ আলি (সৈকত দত্ত), সুবোধ কুমার, সাদ্দাম হুসেন মন্ডল (শুভম ভৌমিক), লক্ষ্মীকান্ত দে, গোপাল পোদ্দার, শেখ সরাফ আলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy