ত্রাতা: কোচের সঙ্গে গোলদাতা সুমিত। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বিরতিতে যে মহমেডান সমর্থক গোল না হওয়ার হতাশায় কোচ রঘু নন্দীকে গালাগাল করছিলেন, খেলা শেষে তিনিই বলে ফেললেন, ‘‘ম্যাচটা জিতলাম, রঘুদার ফুটবল-ঈশ্বরের জন্য।’’ বলেই হাসতে হাসতে মাঠ ফেরৎ জনতার ভিড়ে হারিয়ে গেলেন তিনি।
সাদা-কালো শিবিরের ওই সমর্থক মন্দ বলেননি। আগের ম্যাচ হেরেছেন। শনিবার খেলা শুরুর মিনিট দশেক আগে মাঠে ঢুকেছিলেন মহমেডান কোচ। যে জায়গা থেকে এ দিন দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে গোল করেছেন সুমিত দাস, সেখানে দাঁড়িয়েই দু’চোখ বুজে গভীর প্রার্থনা সেরে বেরিয়ে যান তিনি। বিরতির পরে খেলা শুরুর আগেও দেখা গেল রঘু চোখ বুজে বিড়বিড় করছেন। তার পরে দুই হাত কপালে ঠেকিয়ে বসে পড়লেন রিজার্ভ বেঞ্চে।
খেলার পরে ড্রেসিংরুমে মহমেডান কোচকে ওই সমর্থকের কথা বলতেই হেসে ফেললেন। যে হাসি ‘লাইফ লাইন’ পাওয়ার মতোই। বললেন, ‘‘জেতাল আমার বাঙালি ছেলে। চুয়াত্তর মিনিট পর্যন্ত গোল না হওয়ায় সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। সুমিত গোল করে চিন্তা কমাল।’’
মুখ কালো করে তখন নিজেদের রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে রেনবো কোচ তড়িৎ ঘোষ। নিউব্যারাকপুরের ক্লাব রেনবোর প্রচুর সমর্থক রয়েছে বিশরপাড়া, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম অঞ্চলে। এ দিন তাই দলে দলে রেনবো সমর্থকরা ভিড় জমিয়েছিলেন বারাসত স্টেডিয়ামে। মোহনবাগান ম্যাচের মতো এ দিন রেনবো সমর্থকদের সাদা-কালো শিবিরের সমর্থকদের সঙ্গে বসতে হয়নি। তাঁদের জন্য ছিল বসার আলাদা জায়গা। গোল খাওয়ার আগে বাঁশি, বাদ্যযন্ত্র সহকারে রেনবো সমর্থকদের উল্লাস দেখে প্রশ্ন জাগছিল, বড় দল কোনটা—মহমেডান না রেনবো! সেই ম্যাচ হেরে রেনবো কোচের বিলাপ, ‘‘মাঝমাঠে একটা ভুল পাস। আর সেখান থেকেই গোল খেলাম। না হলে আজ পয়েন্ট নিয়ে ফিরতাম।’’
পেন ওরজিকে আক্রমণ ভাগে জোয়েল সানডের সঙ্গে রেখে মহমেডান রক্ষণকে ধাক্কা দিতে চেয়েছিলেন রেনবো কোচ। সঙ্গে অভিজিৎ সরকার, সুজয় দত্তরাও সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু তাঁরা গোল পাননি মহমেডান গোলকিপার প্রিয়ন্ত সিংহের তৎপরতায়।
প্রথমার্ধে মহমেডান গোলের সামনে গিয়ে আগের ম্যাচের মতোই খেই হারিয়ে ফেলছিল। উইং দিয়ে আক্রমণ উঠছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে সুমিত মাঠে নামতেই উইং দিয়ে আক্রমণ শানানো শুরু সাদা-কালো শিবির। এর কিছু পরেই বাজি আর্মান্দের থেকে বল পেয়ে প্লেসিংয়ে গোল সুমিতের।
গত বছর রেনবোর হয়ে মোহনবাগান ম্যাচে গোল করেছিলেন অশোকনগরের এই ছেলেটি। শুক্রবার তাঁর গোলেই হার মানতে হল রেনবোকে। ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরীর কোচিংয়ে এ বার সন্তোষ ট্রফিতে মণিপুরের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সুমিত। এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে কোচকে নিজেই আবেদন করেন, ‘‘আমাকে নামান। গোল করবই।’’ ছেলেটির প্রথম ‘টাচ’ খুব ভাল। বল-সহ বা বল ছাড়া গতিও চমৎকার। আউটসাইড, ইনসাইড দু’দিকেই ড্রিবল করে যেতে পারেন। গতি ভাল হওয়ায় বিপক্ষ সাইডব্যাক এবং স্টপারের মাঝখান দিয়ে দ্রুত বক্সে ঢুকে আক্রমণ শানাতে পারেন। যা এ দিন দেখা গেল। চেষ্টা থাকলে বড় মঞ্চে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে এই বঙ্গসন্তানকে।
বাবা সমীর দাস হাবড়ায় শাড়ির দোকানে কাজ করেন। ছেলের খেলা দেখতে এলে বেতন পাবেন না। তাই দোকানের টিভিতেই ছেলের খেলা দেখেছেন। জিতে মহমেডান কোচও বলছেন, ‘‘আগামী সপ্তাহের মধ্যে ডোডোজ সুস্থ হয়ে যাবে। ও দলে ঢুকলে খেলা তৈরি ও গোল করার লোক পেয়ে যাব আমরা।’’
সেই স্বপ্নে বিভোর হয়েই ঘুমোতে গেলেন রঘু নন্দী।
মহমেডান: প্রিয়ন্ত সিংহ, তন্ময় ঘোষ, প্রসেনজিৎ পাল, ল্যান্সিন ত্যুরে, কামরান ফারুক, বাজি আর্মান্দ, প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী (সুমিত দাস), সত্যম শর্মা (লাল্টু হেমব্রম), রাকেশ কর্মকার (জুয়েল রাজা), রাহুল কেপি, প্রিন্সউইল এমেকা।
কলকাতা লিগ
মহমেডান ১ • রেনবো ০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy