নজির: জাতীয় ভারোত্তোলনে সোনা জয়ের পথে চানু। মঙ্গলবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
যত বার ওজন তোলার জন্য মঞ্চে উঠছিলেন, প্রত্যেক বারই নিজেকে তাতানোর জন্য মুখে অদ্ভুত একটা আওয়াজ করছিলেন তিনি। তার পরে স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ‘বারবেল সেটে’-র দিকে।
আর যখন চার ফুট এগারো ইঞ্চির মেয়ে মঙ্গলবার বিজয়মঞ্চে উঠলেন, তখন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের সব দর্শক, ভারোত্তোলকরা উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সের অন্যতম আশার প্রদীপ সাইখোম মীরাবাই চানুকে।
তিন-তিনটি রেকর্ড। সঙ্গে মেয়েদের ৪৯ কেজি বিভাগে নজির গড়ে সোনা। ভেবেছিলেন নিজের করা এতগুলো রেকর্ড এক দিনে ভাঙতে পারবেন? ‘‘রেকর্ড নিয়ে ভাবিনি। তবে আমি ঠিক করে এসেছিলাম সব মিলিয়ে ২০৭ কেজি ওজন তুলব। একটু কম হয়েছে। নিজের পারফরম্যান্সে খুশি। আরও ভাল লাগছে নিজেকে ছাপিয়ে যেতে পেরেছি বলে,’’ চানুর মুখে যেন সোনার আলো ঝরে পড়ে। গত বছর তাইল্যান্ডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তুলেছিলেন ২০১ কেজি ওজন। তা টপকে গিয়ে এ দিন তুললেন ২০৩ কেজি। সবমিলিয়ে সেটা তো রেকর্ডই। সঙ্গে স্ন্যাচে তুলেছেন ৮৮ কেজি। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১৫। দু’টো ক্ষেত্রেই নিজেকে ছাপিয়ে গিয়ে বিজয় শর্মার ছাত্রী বলছিলেন, ‘‘এপ্রিলে কাজ়াখস্তানে এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আছে। সেখানে ২১০ কেজি ওজন তোলার লক্ষ্য নিয়ে যাব,’’ অদ্ভুত একটা জেদি মনোভাব ধরা পড়ে কথা বললেই।
অলিম্পিক্সে তাঁর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী চিনের জিয়াং হুইহুয়া (২১২ কেজি) ও হাউ জিহুই (২১১ কেজি) এবং কোরিয়ার রি সং গুম (২০৯ কেজি)। চানু বুঝে গিয়েছেন, ২১০ কেজি তুললে টোকিওর বিজয় মঞ্চের তিনটি ধাপের একটিতে উঠবেনই। বলছিলেন, ‘‘আমি দুটো ব্যাপারে সতর্ক। খাওয়া-দাওয়া এবং চোট। মশলাদার খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি বহু দিন। প্রিয় ‘ইরোম্বা’ খাইনি বহু দিন। পদক জিতে সব কিছু খাব।’’ এশীয় মিটে নামার আগে বিদেশের কোনও ঠান্ডা জায়গায় শিবির করা হবে চানুদের জন্য। বলে দিলেন, ‘‘যে পরিবেশে নামব, সেখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা জরুরি। বিজয় শর্মা আমার কোচ। সব ব্যবস্থা উনিই করছেন।’’ চানু যে নিজের লক্ষ্যে কতটা স্থির, সেটা ধরা পড়ে যায় পদক জেতার পরের কয়েক ঘন্টায়। রাত সাতটাতেও দেখা গেল ফিজিয়ো এবং ডাক্তাররা তাঁর পেশি স্বাভাবিক করার কাজ করছেন। চানুর বিভাগে দ্বিতীয় হলেন সঞ্জিতা চানু (১৮৫ কেজি)।
মমত্ব: অচিন্ত্যকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁর মা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
চানুর সোনার দিনে বাংলার অচিন্ত্য শিউলির চোখে জল। হাওড়া দেউলপুরের ছেলেকে ঘিরেও ছিল প্রত্যাশার পারদ। পুরুষদের ৭৩ কেজি বিভাগে ক্লিন অ্যান্ড জার্ক ইভেন্টের শেষ বারের ওজন তুলতে গিয়ে সোনা জেতার সুযোগ হারিয়ে কেঁদে ফেললেন এক সময় জরির কাজ করা ছেলে। ৩০৬ কেজি (স্ন্যাচে ১৩৮, ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৬৮) তুলে রুপোতে সন্তুষ্ট থাকতে হল অচিন্ত্যকে। সেই সঙ্গে অলিম্পিক্সের টিকিট পাওয়ার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল। কমনওয়েলথ গেমসে জোড়া সোনা (সিনিয়র ও জুনিয়র) জিতেও বয়স আঠারো না হওয়ায় চাকরি পাননি। বাবা নেই। মা জরির কাজ করেন। অচিন্ত্য অভিযোগ করলেন, ‘‘বাংলার হয়ে আটটি পদক এনেছি, তা সত্ত্বেও কোনও সাহায্য পাইনি।’’ রাজ্য সংস্থার চেষ্টায় এ দিনই অচিন্তের জন্য এগিয়ে এসেছে একটি স্টিল প্রস্তুতকারক সংস্থা। তবে অলিম্পিক্সের ব্যাপারে এগিয়ে গেলেন মিজোরামের জেরিমি লালরিনিুঙ্গা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy