প্রত্যয়ী: নয়াদিল্লিতে প্রশিক্ষক জয়দীপের সঙ্গে মেহুলি। টুইটার
রাজধানীতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু বিশ্বকাপে তাঁর সামনে শুটিং রেঞ্জের টার্গেটই শুধু থাকবে না, থাকবে আরও একটা লক্ষ্য। টোকিয়ো অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের টিকিট। যে টিকিট জোগাড় করার লক্ষ্যে মেহুলি ঘোষের কাছে নয়াদিল্লির এই বিশ্বকাপ হতে চলেছে প্রথম ধাপ।
রাজধানীতে বন্দুক হাতে তুলে নেওয়ার সময় আপনার মাথায় কি অলিম্পিক্সের ব্যাপারটা থাকবে? বুধবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি থেকে অনুশীলন শেষে মেহুলি বললেন, ‘‘অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারটা আমি জানি। সেটা অবশ্যই আমার সামনে একটা লক্ষ্য। কিন্তু যখন রাইফেল হাতে তুলে নেব, তখন এ সব কিছুই মাথায় রাখব না।’’
মেহুলির ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ইভেন্ট শনিবার। যে ইভেন্টের জন্য কলকাতায় অভিনব ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল মেহুলির জন্য। কী সেই ট্রেনিং? মেহুলির প্রশিক্ষক জয়দীপ কর্মকার মনে করেন, টেকনিক্যাল দিক দিয়ে তাঁর ছাত্রীর কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মানসিক ভাবে আরও শক্তপোক্ত হতে হবে। ‘‘যে কারণে অনুশীলনের সময় যতটা সম্ভব মনঃসংযোগ নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে মেহুলির,’’ বলছিলেন জয়দীপ। সেটা কী ভাবে করা হয়েছিল?
প্রথম দফায় মেহুলির শুটিং এরিনায় সাউন্ড বক্স চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গমগম করা আওয়াজের মধ্যেই টার্গেটে লক্ষ্যস্থির করে গুলি চালাতে হয়েছে বঙ্গ শুটারকে। দ্বিতীয় দফায় কাজটা আর একটু কঠিন করে দেওয়া হয়। এ বার মেহুলির কানে লাগিয়ে দেওয়া হয় হেডফোন। যেখানে দর্শকদের চিৎকারের শব্দ শোনানো হয়। তৃতীয় দফার ব্যাপারটা আরও অভিনব। মেহুলিকে নিয়ে মাঝে মাঝে যে সব সমালোচনা হয়েছে, নেতিবাচক কথা বলা হয়েছে, তারই রেকর্ডিং শোনানো হয় হেডফোনের মাধ্যমে। আর এর মধ্যেই মেহুলিকে গুলি চালিয়ে যেতে হয় নিশানায়।
এই অভিনব পদ্ধতিতে অনুশীলন করে কী মনে হচ্ছে? মেহুলির জবাব, ‘‘অবশ্যই ফল পাব বলে আশা করছি। দেশের মাঠে বিশ্বকাপ। চাপ তো থাকবেই, তা ছাড়া মনঃসংযোগ যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, সমস্যা হবে না।’’
যাবতীয় বাধা-বিঘ্নের মধ্যে অষ্টাদশী মেহুলি ট্রেনিংয়ে যে স্কোর করেছেন, তাতে খুশি তাঁর প্রশিক্ষক। জয়দীপ বলছিলেন, ‘‘মেহুলি অনুশীলনে যে স্কোর করছে, তা কিন্তু দুর্দান্ত। বিশ্বরেকর্ড ছুইছুই স্কোর।’’ মেহুলি নিজেও খুশি অনুশীলনে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে এগোচ্ছি, তাতে আমি খুশি। আমার কাজটা হবে ট্রেনিংয়ে যেটা করতে পেরেছি, সেটা প্রতিযোগিতায় করতে পারা। আমি জানি, কাজটা কঠিন। কিন্তু কঠিন কাজটাই করার চেষ্টা করব।’’ নিজের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন? জবাব, ‘‘সেরাটা দিতে পারা।’’
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য চলতি বছরের চারটি বিশ্বকাপ-সহ ছ’টি প্রতিযোগিতার পাঁচটির গড় স্কোর ধরে সেরা শুটারদের বাছা হবে। তাই এখন থেকেই অলিম্পিক্সের দৌড়ে থাকার লড়াই শুরু হয়ে যাচ্ছে। এই বিশ্বকাপে মেহুলি অবশ্য ভারতের প্রথম দলে না থাকায় পদকের লড়াইয়ে নামবেন না। কিন্তু তিনি এখানে কত স্কোর করবেন, তা ঠিক করে দেবে এই বঙ্গ তরুণীর অলিম্পিক্স ভাগ্য। মেহুলি যদি ফাইনালে ওঠা শুটারদের চেয়ে বেশি পয়েন্ট স্কোর করতে পারেন তাঁর রাউন্ডে, তা হলে গড় পয়েন্টেরও ওপরেও বোনাস পয়েন্ট পাবেন। আর বিশ্বরেকর্ড করতে পারলে সেই বোনাস পয়েন্টের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।
বিশ্বকাপে নামার আগে জার্মানিতে বুন্দেশলিগা আর দ্য নেদারল্যান্ডসে ইন্টারশুটিংয়ে অংশ নিয়ে এসেছেন মেহুলি। প্রথমটিতে চারশোয় চারশো পয়েন্ট স্কোর করেছেন। দ্বিতীয়টিতে জোড়া সোনা জিতে ছুঁয়েছিলেন অভিনব বিন্দ্রার রেকর্ড। কতটা উপকৃত হবেন এই দুটো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলে আসার ফলে? মেহুলি বলছেন, ‘‘সব চেয়ে বড় যে লাভটা আমার হয়েছে, সেটা হল চাপ সামলানোর শিক্ষা। এই রকম মানের দুটো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলে এসে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন আমি আর কিছুতেই ভয় পাই না।’’ এই ভয়ডরহীন মানসিকতা মেহুলিকে মিশন অলিম্পিক্সের দিকে কতটা নিয়ে যেতে পারে, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy