সফল: সোনার পদক নিয়ে উচ্ছ্বসিত মেহুলি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
নেদারল্যান্ডসে জোড়া সোনা জিতে যাঁকে তিনি ছুঁলেন, সেই অভিনব বিন্দ্রার পরামর্শ নিয়েই কলকাতা থেকে বিমানে উঠেছিলেন মেহুলি ঘোষ।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে ‘ইন্টারশুট’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন মেহুলি। চল্লিশ বছরের বেশি পুরনো এই তিন দিনের ক্লাব শুটিংয়ে বিশ্বসেরাদের সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার জোড়া সোনা জিতেছেন বাংলার এই শুটার। শনিবারও তৃতীয় সোনা জয়ের সামনে চলে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু একটু ভুলের জন্য দু’নম্বরে থেমে যেতে হয়। এ ছাড়া দলগত বিভাগে একটি রূপো পেলেন মেহুলি।
বেশ কিছু বছর আগে একই প্রতিযোগিতায় নেমে জোড়া সোনা জিতে বিরল নজির গড়েছিলেন স্বয়ং বিন্দ্রা। যে বিন্দ্রারই পরামর্শ মেহুলি পেয়েছিলেন কলকাতা ছাড়ার আগে।
আরও পড়ুন: দুই শিবিরেই যেন একটা নাম, ধোনি
কী ভাবে? দিন পাঁচেক আগে কলকাতায় এসেছিলেন বিন্দ্রা। ঝটিকা সফরে মেহুলির প্রশিক্ষক জয়দীপ কর্মকারের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। তার আগে অবশ্য জয়দীপের সঙ্গে মেহুলি গিয়েছিলেন বিন্দ্রার সঙ্গে দেখা করতে। শনিবার জয়দীপ বলছিলেন, ‘‘খুব বেশি সময় আমাদের হাতে ছিল না। তারই মধ্যে মেহুলির সঙ্গে কথা হয় বিন্দ্রার। যে ভাবে মেহুলি এগোচ্ছে, তাতে খুব খুশি বিন্দ্রা। বিশেষ করে যখন শোনে নেদারল্যান্ডসের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে মেহুলি। এই প্রতিযোগিতায় বেশ কিছু বছর আগে জোড়া সোনা পেয়েছিল বিন্দ্রা।’’
মেহুলিকে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন বিন্দ্রা? জানা যাচ্ছে, কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে প্রধানত কথা বলেন অলিম্পিক্সের সোনাজয়ী শুটার। প্রতিযোগিতার মান সম্পর্কে মেহুলিকে একটা ধারণা দিয়েছিলেন বিন্দ্রা। পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তুমি খুবই ভাল শুটার। দারুণ ফর্মে আছ। তোমার সঙ্গে অনেক ভাল লোক আছে। যারা তোমাকে সাহায্য করছে। তুমি শুধু নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকো।’’ নেদারল্যান্ডসে যে তিনিও অংশ নিয়ে সোনা জিতেছিলেন, সে কথাও মেহুলিকে মনে করিয়ে দেন বিন্দ্রা। মন্ত্র দেন, ‘‘ওখানে রেঞ্জে নেমে অন্য কিছু ভাববে না। জেতা-হারার কথা ভুলে, নিজের সেরাটা দাও।’’
নেদারল্যান্ডসের এই প্রতিযোগিতা এয়ার রাইফেল এবং এয়ার পিস্তলের। যেখানে ভারত থেকে এ বারে অংশ নিয়েছেন হিনা সিধু, রোনক পণ্ডিত, গগন নারাংয়ের মতো শুটাররা। আছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনেক শুটারও। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে মেহুলি অংশ নিয়েছিলেন জয়দীপ কর্মকার শুটিং অ্যাকাডেমির হয়ে। যেখানে এক চুলের জন্য বিশ্বরেকর্ড করতে পারেননি মেহুলি।
প্রথম দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার যোগ্যতা অর্জন পর্বে ৬৩৩ পয়েন্ট স্কোর করেন মেহুলি। যা বিশ্বরেকর্ডের চেয়ে .৪ কম। জয়দীপ বলছিলেন, ‘‘দুর্ভাগ্য যে, মাত্র .৪ পয়েন্টের জন্য বিশ্বরেকর্ডটা করতে পারল না মেহুলি। তবে আমি বলব, এর চেয়েও কৃতিত্ব হল, যে ভাবে ও শুক্রবার একেবারে ছিটকে যাওয়ার মুখ থেকে ফিরে এসে সোনা জিতেছে।’’
জানা যাচ্ছে, প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিনে যোগ্যতা অর্জন পর্বে মেহুলি একটা শটে মাত্র ৩.৪ পয়েন্ট স্কোর করেন। ধরেই নেওয়া হয়েছিল, ওখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু এর পরে ওই অবস্থা থেকে মেহুলি শুধু ফাইনালেই ওঠেননি, সোনাও জেতেন। জয়দীপ বলছিলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়। মেহুলির ওখান থেকে ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু পরের গুলিগুলো সব নিখুঁত ছুড়ল। এর পরে প্রত্যেকটা পয়েন্ট ও বিশ্বরেকর্ডের ওপর স্কোর করেছিল। যদি প্রথম রাউন্ডে অত খারাপ না করত, তা হলে নিশ্চিত ভাবে বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিত।’’ তবে প্রথম দিন যে ৬৩৩ পয়েন্ট স্কোর করেন মেহুলি, তা যে এই অষ্টাদশীর জীবনের সেরা স্কোর, তা বলছিলেন জয়দীপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy