নায়ক: সেঞ্চুরি করেও সংযত উচ্ছ্বাস মায়াঙ্কের। পিটিআই
পুণের শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে গাহুঞ্জে স্টেডিয়াম। বৃহস্পতিবার থেকে যেখানে শুরু হয়ে গিয়েছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টেস্ট। আইসিসি টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের অঙ্গ হলেও পুণের ক্রিকেট সমর্থকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়তো হতে পারেনি এই টেস্ট। গ্যালারির একাধিক চেয়ার ফাঁকা। বিশেষ করে ‘নর্থ স্ট্যান্ড’ ও ‘সাউথ স্ট্যান্ড’-এর দর্শক সংখ্যা হাতে গোনা।
এই হাতে গোনা দর্শকদের মাঝেই নতুন রূপকথা লিখে গেলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। সিরিজের প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির পরে এ দিনও সেঞ্চুরি এল তাঁর ব্যাটে। ১৯৫ বলে তাঁর ১০৮ রানের ইনিংসে ছিল ১৬টি চার ও দু’টি ছয়। এই দু’টি ছয়ের সৌজন্যেই ৮৭ থেকে ৯৯ রানে পৌঁছন ভারতীয় ওপেনার। ৫৬তম ওভারের পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে কেশব মহারাজকে স্টেপ আউট করে লং-অফ অঞ্চলের গ্যালারির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন মায়াঙ্ক। সেঞ্চুরি পূরণ করেন ফিল্যান্ডারকে কাট করে বাউন্ডারি মেরে।
ছোটবেলায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তরুণ ওপেনার। কিন্তু কর্নাটকের হয়ে খেলার পর থেকে ক্রিকেটকেই তাঁর পেশা হিসেবে বেছে নেন। মায়াঙ্কের বাবা যদিও ছেলের উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করেননি। বরং পরামর্শ দিয়েছিলেন, ভালবাসার বিষয় বেছে নিতে। পাইলট হতে না পারলেও বিমানের গতিতেই ছুঁটছেন মায়াঙ্ক।
দিনের দশম ওভারে রাবাডার আউটসুইং রোহিতের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় কুইন্টন ডি ককের হাতে। ১৪ (৩৩ বল) রানে ফিরে যান হিটম্যান। যে উইকেটে পেসাররা সামান্য সাহায্য পেলেন, সেখানেই ব্যর্থ রোহিত। হিটম্যান আউট হওয়ার পরের ওভারেই নর্ৎজের ঘণ্টায় ১৪২ বাউন্সার হেলমেটে আছড়ে পড়ে তরুণ ওপেনারের উপর। পরের বলে দুরন্ত কভার ড্রাইভে নর্ৎজেকে জবাব দেন মায়াঙ্ক। পেসারদের তৈরি করা চাপ যেন সেখানেই শেষ করে দেন মায়াঙ্ক। চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে ১৩৮ রানের জুটি ক্লান্ত করে তোলে বিপক্ষ শিবিরের বোলারদের। ১১২ বলে ৫৮ রান করে রাবাডার স্বীকার হন পূজারা। আরও এক বার তাঁর ধৈর্যের সামনে ব্যর্থ বিপক্ষ শিবির।
পুণের শহরতলির এই স্টেডিয়ামের তিনটি দিক ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট পাহাড়। সেই স্টেডিয়ামেই দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন আশঙ্কার পাহাড় তৈরি হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে। অধিনায়ক হিসেবে ৫০তম টেস্টে টস করতে নেমে যখন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন বিরাট কোহালি, বিপক্ষ অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসির মুখে অসহায় হাসি। পুণের লাল মাটির পিচে শেষ ইনিংস ব্যাট করার আশঙ্কাই হয়তো ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে ডুপ্লেসিদের। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পিচ এবং কিউরেটরকে নিয়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। প্রথম দিনের শেষে হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন বিতর্কিত পিচ প্রস্তুতকারক পাণ্ডুরং সালগাওকর। কারণ, তাঁর বানানো পিচেই ২৭৩-৩ স্কোরে দিন শেষ করে ভারত।
গাহুঞ্জে স্টেডিয়ামের পিচে প্রথম দিনের দ্বিতীয় সেশন থেকেই বল ঘুরতে শুরু করেছে। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি কেশব মহারাজ। ২০তম ওভারে প্যাভিলিয়ন প্রান্ত থেকে তিনি বোলিং শুরু করেছেন। থেমেছেন ৭৬তম ওভারে। এক দিক থেকে টানা ২৯ ওভার বল করার পরেও কেশব উইকেটহীন। তাঁর একঘেয়ে বোলিংয়ে কোনও বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়নি। একজন বাঁ-হাতি স্পিনার সব সময় বিস্ময় সৃষ্টি করেন। ব্যাটসম্যানকে কখনওই বুঝতে দেন না, পরের বল কী হতে চলেছে। কেশব তা পারেননি। একই গতিতে দিনের বেশির ভাগ সময় বল করে গেলেন। শুরুর দিকে যখন দেখছিলেন বল ঘুরছে না, গতি কমিয়ে বল ঘোরানোর চেষ্টা করতেই পারতেন। কিন্তু তিনি করলেন না। কেশবকে সঙ্গ দেওযার মতো স্পিনারও দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নেই। অফস্পিনার ডেন পিয়েডকে বসিয়ে অতিরিক্ত পেসার খেলিয়েছেন ডুপ্লেসি। সেই সিদ্ধান্তই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াল অতিথি অধিনায়কের।
মায়াঙ্ক-পূজারা জুটি যে মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল, তার সদ্ব্যবহার করে গেলেন বিরাট। অধিনায়কের আক্রমণাত্মক ভঙ্গির সামনে ম্লান রাবাডাদের গতি। ১০৫ বলে ৬৩ রানে তিনি অপরাজিত। কেশব, রাবাডাদের বিরুদ্ধে রীতিমতো শাসন করে গেলেন বিরাট। ৬০-এর স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে ইনিংস গড়লেন ১০ বাউন্ডারির সৌজন্যে। ১৮ রানে তাঁকে ক্রিজে সঙ্গ দিচ্ছেন রাহানে। ৫১তম ওভারে পূজারা ফিরে যাওয়ার পরে ড্রেসিংরুম থেকে কোহালিকে বেরোতে দেখে প্রাণবন্ত হয়ে উঠল গাহুঞ্জে স্টেডিয়াম। অধিনায়ক হিসেবে ৫০তম টেস্টে নামার সময় তাঁকে অভ্যর্থনায় ভরিয়ে দেয় গ্যালারি। এ দিন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে পেরিয়ে গেলেন কোহালি। অধিনায়ক হিসেবে ৪৯টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সৌরভ। বিরাটের চেয়ে দশ টেস্টে বেশি নেতৃত্ব দিয়েছেন ধোনি।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে রাহানে ও কোহালির এই জুটির উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে টেস্টের ভাগ্য। পুণেতে এক ব্যাটসম্যান কমিয়ে পাঁচ বোলারে খেলছে ভারত। হনুমা বিহারীর পরিবর্তে দলে নেওয়া হয়েছে উমেশ যাদবকে। তাই অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ককে দায়িত্ব নিতে হবে ৫০০ রানের ভিত গড়ে তোলার। দ্বিতীয় দিনের শেষেই তা হলে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেওয়া যাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনারদের। গাহুঞ্জে স্টেডিয়ামে বিকেলের পাহাড়ি হাওয়া কাজে দু’টি উইকেট তুলে নিতে পারলেই সিরিজ জয়ের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy