Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Cricket

রোহিতের সেঞ্চুরি, কোহালির ৮৯, সাত উইকেটে জিতে সিরিজ ভারতের

একসময় মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানের জুটি তিনশোর ওপারে পৌঁছনোর ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়নি ভারতীয় বোলারদের জন্য।

একদিনের ক্রিকেটে ২৯তম সেঞ্চুরির পর রোহিত শর্মা। রবিবার বেঙ্গালুরুতে। ছবি: এপি।

একদিনের ক্রিকেটে ২৯তম সেঞ্চুরির পর রোহিত শর্মা। রবিবার বেঙ্গালুরুতে। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:০০
Share: Save:

সাত উইকেটে এল জয়। সেটাও ১৫ বল বাকি থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজ পিছিয়ে পড়েও ২-১ জিতল ভারত। এই জয় সেই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। শিখর ধওয়নকে পাওয়া যায়নি ব্যাট হাতে, মাথায় রাখতে হবে সেটাও। ২৮৭ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতকে (৪৭.৩ ওভারে ২৮৯-৩) জেতাল রোহিত শর্মা, বিরাট কোহালি, শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাট।

স্টিভ স্মিথের ১৩১ রানের ইনিংসের জবাব দিলেন রোহিত শর্মা, অনবদ্য ১১৯ রানের ইনিংসে। তিন নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন স্মিথ। রবিবার বেঙ্গালুরুতে পাল্টা সেঞ্চুরি করলেন ওপেনার রোহিত। তাঁর ওয়ানডে কেরিয়ারের ২৯তম শতরান এল ১১০ বলে, আটটি চার ও পাঁচটা ছয়ের সুবাদে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে ফরম্যাটে এটা তাঁর অষ্টম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত হিটম্যান ১২৮ বলে ১১৯ রানে থামলেন। লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকে মারতে গিয়ে তুললেন ক্যাচ। যা ধরলেন মিচেল স্টার্ক।

তার আগে এদিন একদিনের ক্রিকেটে ৯০০০ রান পূর্ণ করে ফেলেছিলেন রোহিত। তিনি তৃতীয় দ্রুততম। চলতি সিরিজের প্রথম দুই একদিনের ম্যাচে রান পাননি। এদিন বড় রানের জন্য বদ্ধপরিকর দেখাল আগাগোড়া। পঞ্চাশে পৌঁছেছিলেন ৫৬ বলে। সেই ছন্দেই ব্যাট করে গেলেন। এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। এদিন এই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আর একটা মনে রাখার মত ইনিংস উপহার দিলেন।

বিরাট কোহালিও খেললেন নিজস্ব মেজাজে। ৬১ বলে পৌঁছেছিলেন পঞ্চাশে। যাতে ছিল চারটি চার। দ্বিতীয় উইকেটে রোহিতের সঙ্গে যোগ করলেন ১৩৭ রান। এই ফরম্যাটে রান তাড়ায় সাত হাজারের বেশি রান করে ফেললেন তিনি। ৯১ বলে ৮৯ রানে যখন জোশ হ্যাজলেউডের বলে বোল্ড হলেন, তখন জয়ের থেকে মাত্র ১৩ রানের দূরত্বে ভারত। তাঁর ইনিংসে ছিল আটটি চার। একসময় মনে হচ্ছিল, কোহালির সেঞ্চুরিও হতে চলেছে। কিন্তু রাজকোটের পর আরও একবার সেঞ্চুরি হারালেন তিনি।

তবে তার আগে রোহিত ফেরার পর শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রান যোগ করেছিলেন কোহালি। শ্রেয়াস এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে রান পাননি। এদিন চার নম্বরে নেমে দুর্দান্ত পরিণত মানসিকতার পরিচয় রাখলেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৩৫ বলে ৪৪ রানে। মণীশ পাণ্ডে অপরাজিত থাকলেন চার বলে ৮ রানে।

নির্ণায়ক একদিনের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে নয় উইকেটে ২৮৬ তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফলে, সিরিজ ২-১ করতে বিরাট কোহালির দলকে করতে হত ২৮৭ রান। তবে রান তাড়া করতে নামার আগেই ছিল দুঃসংবাদ। ফিল্ডিং করার সময় চোট পেয়েছিলেন শিখর ধওয়ন। এক্সরে করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি ব্যাট করতে নামলেন না ওপেনিংয়ে।

তাই শুরুতে রোহিত শর্মার সঙ্গী হয়েছিলেন লোকেশ রাহুল। রাজকোটে আগের ম্যাচেই যিনি পাঁচ নম্বরে নেমে ঝড় তুলেছিলেন। বেঙ্গালুরুতে এদিন অবশ্য বেশি ক্ষণ টিকলেন না। ২৭ বলে ১৯ করে অ্যাশটন অ্যাগারের বলে হলেন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তাতেই এল উইকেট।

একসময় মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানের জুটি তিনশোর ওপারে পৌঁছনোর ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়নি ভারতীয় বোলারদের জন্য। মহম্মদ শামি ৬৩ রান দিয়ে নিলেন চার উইকেট। ডেথ ওভারে নিয়মিত দিলেন ইয়র্কার। কোনও উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে জশপ্রীত বুমরা দিলেন মাত্র ৩৮।

রাজকোটে ফিরেছিলেন সেঞ্চুরির দোরগোড়া থেকে। মাত্র দুই রানের জন্য পৌঁছতে পারেননি তিন অঙ্কে। সেই আক্ষেপ বেঙ্গালুরুতে মিটিয়ে নিলেন স্টিভ স্মিথ। যা এল ১১৭ বলে, ১১টি চারের সাহায্যে। শেষ পর্যন্ত ১৩১ রানে থামলেন তিনি। মহম্মদ শামির বলে ডিপ মিডউইকেটে স্মিথের ক্যাচ দুরন্ত ভাবে ধরলেন শ্রেয়াস আইয়ার। তাঁর ১৩২ বলের ইনিংসে রয়েছে ১৪টি চার ও একটি ছয়।

রাজকোটে ৩০ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে উইকেট হারানোকে পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন স্মিথ। রবিবারও ওই সময়েই অজি ইনিংসে জোড়া ধাক্কা দিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাডেজা। একইসঙ্গে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন ভারতকে। ৩২তম ওভারে তিন বলের ফারাকে বাঁ-হাতি স্পিনার আউট করেছিলেন জমে যাওয়া মার্নাস লাবুশানে ও পিঞ্চহিটার হিসেবে নামানো মিচেল স্টার্ককে। তবে লাবুশানের আউটের জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য বিরাট কোহালির। সামনে ঝাঁপিয়ে অসামান্য দক্ষতায় ক্যাচ ধরেছিলেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে ১২৭ রান যোগ করে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানে। বিরাটের ক্যাচ ভেঙেছিল সেই জুটি। তিন বল পরেই আউট মিচেল স্টার্ক। ঝড় তুলতে নামানো হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু মারতে গিয়ে জাডেজার বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। ১০ ওভারে ৪৪ রানে দুই উইকেট, জাডেজা নিজের দায়িত্ব পালন করেছিলেন দারুণ ভাবে।

টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে প্রথম আঘাত হেনেছিলেন মহম্মদ শামি। ম্যাচের চতুর্থ ওভারে ফিরিয়েছিলেন বাঁ-হাতি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে। শামির বলে খোঁচা দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। যা সহজেই ধরেছিলেন উইকেটকিপার লোকেশ রাহুল। ১৯ রানে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট।

দ্বিতীয় উইকেট পড়েছিল ৪৬ রানে। তিন নম্বরে নামা স্টিভ স্মিথের সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় ফিঞ্চকে দেখা গেল রীতিমতো ক্ষিপ্ত। দুই উইকেট পড়ার পর স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানে তৃতীয় উইকেটের জুটিতে টানছিলেন দলকে। রাজকোটে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচেও দু’জনে বড় জুটি গড়েছিলেন। এদিনও সেই জুটি হতাশ করে চলছিলেন ভারতীয় বোলারদের। লাবুশানে শেষ পর্যন্ত ৬৪ বলে ৫৪ রানে ফিরেছিলেন। আর স্টার্ক ফিরেছিলেন কোনও রান না করেই।

স্মিথের হাফ-সেঞ্চুরি এসেছিল ৬৩ বলে, আটটি চারের সাহায্য়ে। আর লাবুশানের পঞ্চাশ এসেছিল ৬০ বলে, পাঁচটি চারের সাহায্য়ে। এটাই একদিনের আন্তর্জাতিকে লাবুশানের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি। স্মিথ আবার কেরিয়ারের নবম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে পৌঁছলেন সহজাত মেজাজে। ভারতের বিরুদ্ধে এই ফরম্যাটে এটি তাঁর তৃতীয় শতরান। তবে তার আগেই কুলদীপ যাদবের বলে শ্রেয়াস আইয়ারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন অ্যালেক্স ক্যারি (৩৫)। বেশি ক্ষণ থাকেননি অ্যাশটন টার্নারও (৪)। নবদীপ সাইনির বলে তাঁর ক্যাচ ধরেন উইকেটকিপার লোকেশ রাহুল। স্মিথ ফেরার পর শামির সেই ওভারেই গেলেন প্যাট কামিন্স। ইয়র্কারে বোল্ড হলেন তিনি, রাজকোট ম্যাচের মতই। তার পর অ্যাডাম জাম্পাকেও বোল্ড করলেন শামি।

পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। মঙ্গলবার বিশ্বজয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডে-তে ভারতকে মাটি ধরিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শুক্রবার রাজকোটে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারত। সিরিজ নিষ্পত্তির জন্য রবিবার চিন্নাস্বামীর তৃতীয় ওয়ানডের দিকে তাকিয়ে সবাই।

টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। দলে একটিই পরিবর্তন। কেন রিচার্ডসনের বদলে এসেছেন জোশ হ্যাজলেউড। প্রথমে ব্যাট করে রানের পাহাড় চাপিয়ে ভারতের উপরে চাপ বাড়ানোই লক্ষ্য ফিঞ্চের। অন্যদিকে, ভারতীয় দল অপরিবর্তিত রয়েছে। রোহিত শর্মাকে নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকলেও তিনি খেলছেন। খেলছেন আর এক ওপেনার শিখর ধওয়নও। সুস্থ হলেও প্রথম এগারোয় জায়গা হল না উইকেটকিপার ঋষভ পন্থের।

এই চিন্নাস্বামীতেই ওয়াকার ইউনিসকে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিলেন অজয় জাদেজা। সে অবশ্য অনেক দিন আগের কথা। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জাদেজার সেই মারমুখী ব্যাটিং অনেকেরই মনে আছে। তার পরে অবশ্য গঙ্গা দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে অনেক জল। চিন্নাস্বামী এখন বিরাট কোহালির ঘরের মাঠ। সেই মাঠেই এই সিরিজের ফয়সলা হবে।

আরও পড়ুন: দ্রাবিড়ের চেয়ে ভাল কিপার বলেও রাহুলকে দিয়ে উইকেটকিপিংয়ে নারাজ প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার

সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচের আগে রোহিত শর্মাকে নিয়ে চিন্তা ছিল। রাজকোটে লাগা কাঁধের চোট সারিয়ে কি তিনি নামতে পারবেন কি না সন্দেহ ছিল। হিটম্যান অবশ্য খেলছেন। গত বছর আইসিসি-র বিচারে ওয়ানডে-র সেরা হয়েছিলেন। নতুন বছরের শুরুতে সময়টা ভাল যাচ্ছে না তাঁর। প্রথম দুটো ওয়ানডেতে গর্জে ওঠেনি তাঁর ব্যাট। তৃতীয় ওয়ানডেতে সবার চোখ রোহিতের ব্যাটের দিকে। রাজকোটে জয়ের পর ভারতীয় দল ফুটছে। এই সিরিজ শেষ হলেই কোহালিরা উড়ে যাবেন নিউজিল্যান্ড। সেখানে আবার কঠিন পরীক্ষা।

অন্য বিষয়গুলি:

India Australia India vs Australia 3rd ODI Bengaluru ODI Steve Smith Rohit Sharma Virat Kohli Cricket Cricketer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy