Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India Vs New Zealand

ফের টাই, ফের সুপার ওভার, ওয়েলিংটনে রুদ্ধশ্বাস জয়, সিরিজে ৪-০ এগিয়ে কোহালিরা

টাইয়ের পর সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ড তুলেছিল ১৩ রান। ভারতের দরকার ছিল ১৪ রান। এক উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গেল ভারত।

সুপার ওভারেও বিধ্বংসী লোকেশ রাহুল। ছবি: এএফপি।

সুপার ওভারেও বিধ্বংসী লোকেশ রাহুল। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়েলিংটন শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ১২:১৩
Share: Save:

টানটান উত্তেজনার মধ্যে ওয়েলিংটনে সুপার ওভারে জিতল ভারত। হ্যামিল্টনের মতই সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিও হয়েছিল টাই। ফলে ফের সুপার ওভারে গড়িয়েছিল খেলা। আর সেখানে বাজিমাত করল টিম ইন্ডিয়া। এক বল বাকি থাকতে এল জয়। একই সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ এগিয়ে গেল বিরাট কোহালির দল।

হ্যামিল্টনের মত ওয়েলিংটনেও সুপার ওভারে বল করতে এসেছিলেন জশপ্রীত বুমরা। তাঁর প্রথম তিন বলে পড়েছিল দুই ক্যাচ। টিম সেইফার্টের প্রথম ক্যাচ ফসকালেন শ্রেয়াস আইয়ার। দ্বিতীয় ক্যাচ ফেলেছিলেন লোকেশ রাহুল। চতুর্থ বলে সেইফার্টের ক্যাচ ধরেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। এর মধ্যে দ্বিতীয় ও পঞ্চম বলে বাউন্ডারিতে বল পাঠিয়েছিলেন যথাক্রমে সেইফার্ট ও কলিন মুনরো। শেষ বলে এক রান হয়েছিল।নিউজিল্য়ান্ড তুলেছিল ১৩ রান। ভারতের দরকার ছিল ১৪ রান।

টিম ইন্ডিয়ার হয়ে সুপার ওভারে ব্যাট করতে এসেছিলেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহালি। আর নিউজিল্যান্ডের হয়ে সুপার ওভারে বল করতে এসেছিলেন টিম সাউদি। ঠিক হ্যামিল্টনের মতোই। প্রথম বলেই ছয় মেরেছিলেন রাহুল। পরের বলে মারলেন চার। দুই বলে এসেছিল ১০। চার বলে দরকার ছিল চার রানের। কিন্তু তৃতীয় বলেই আউট রাহুল। তিন বলে চাই চার রান, ক্রিজে কোহালি। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অনে ঠেলে দুই রান নিলেন তিনি। দুই বলে চাই দুই। মিড উইকেটে চার মেরে জেতালেন কোহালি।

শেষ দুই ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ১১ রান। শেষ ছয় বলে দরকার ছিল সাত রান। ২০তম ওভারে শার্দুল ঠাকুরের প্রথম বলে লোপ্পা ক্যাচ তুলে ফিরলেন রস টেলর (১৮ বলে ২৪)। পাঁচে বলে চাই সাত রান। ড্যারিল মিচেল মারলেন চার। চার বলে চাই তিন রান। লোকেশ রাহুলের থ্রোয়ে রান আউট হলেন সেইফার্ট (৩৯ বলে ৫৭)। তাঁর ইনিংসে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছয়। তিন বলে চাই তিন। দুই বলে চাই দুই। এ বার তুলে মেরে আউট ড্যারিল মিচেল (তিন বলে ৪)। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। ক্রিজে মিচেল স্যান্টনার। ফের সুপার ওভার হবে নাকি? উত্তেজনায় কাঁপছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। শেষ বলে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হলেন কুগেলেইজিন। ফলে, দুই দলেরই রান হল সমান-সমান। শার্দুলের ওভারে পড়ল চার উইকেট। ভারতের (১৬৫-৮) সঙ্গে একই বিন্দুতে থামল নিউজিল্যান্ড (১৬৫-৭)। ম্যাচ গড়িয়েছিল সুপার ওভারে।

নির্ধারিত ২০ ওভারে জেতার জন্য নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ১৬৬ রান। সেই লক্ষ্যে ধীরে-সুস্থে শুরু করেছিল কিউয়িরা। পঞ্চম ওভারে প্রথম আঘাত হেনেছিলেন জশপ্রীত বুমরা। মারতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ তুলেছিলেন মার্টিন গাপ্টিল (আট বলে ৪)। তার পর কিউয়িদের টানলেন বাঁ-হাতি ওপেনার কলিন মুনরো। ৩৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে ৬৪ রানে ফিরলেন মুনরো। বিরাট কোহালির সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট হলেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ তোলার পর ভাঙল জুটি। মুনরোর ইনিংসে ছিল ছয়টা চার ও তিনটি ছয়। তিনি ফেরার পরের ওভারেই বোল্ড হলেন টম ব্রুস (০)। যুজবেন্দ্র চহালের বলে বোল্ড হলেন তিনি। ৯৭ রানে পড়েছিল কিউয়িদের তৃতীয় উইকেট।

১৫তম ওভারে যুজবেন্দ্র চহালের পর পর দুই বলে পড়ল ক্যাচ। প্রথমে লং অনে নবদীপ সাইনির হাত থেকে ক্যাচ বেরিয়ে গিয়ে হয়ে গেল ছয়। পরের বলেই সেইফার্টের রিভার্স সুইপ শর্ট থার্ডম্যানে দাঁড়ানো জশপ্রীত বুমরার হাত থেকে বেরিয়ে গেল। সেই ওভারে এল ১৭ রান। তৃতীয় উইকেটে টিম সেইফার্ট ও রস টেলরের জুটিই টানল কিউয়িদের। সেইফার্টের পঞ্চাশ এল ৩২ বলে।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আগাগোড়াই চাপে ছিল টিম ইন্ডিয়া। লেগস্পিনার ঈশ সোধির সামনে অস্বস্তিতে দেখাচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু মণীশ পাণ্ডের হাফ-সেঞ্চুরির সুবাদে ভদ্রস্থ রান তুলেছিল ভারত। আট উইকেটে ১৬৫ রানে থেমেছিল টিম ইন্ডিয়া।

এদিন নিয়মিত উইকেট হারিয়েছিল ভারত। শুরুতে রোহিত শর্মার জায়গায় ওপেনিংয়ে নেমে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না সঞ্জু স্যামসন। বৃহস্পতিবার ওয়েলিংটনে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়েছিলেন তিনি। স্কট কুগেলেজিনের ওভারের প্রথম বলে ছয় হাঁকিয়েছিলেন তিনি। সেই মেজাজেই তৃতীয় বলে মারতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ তুললেন। দ্বিতীয় ওভারে ১৪ রানে পড়েছিল প্রথম উইকেট।

বেশি ক্ষণ থাকেননি তিনে নামা বিরাট কোহালি (নয় বলে ১১)। হামিশ বেনেটের বাড়তি বাউন্সি অস্বস্তিতে তাঁর ক্যাচ উঠল। শরীর ছুড়ে যা ধরলেন মিচেল স্যান্টনার। রান পেলেন না শ্রেয়াস আইয়ারও (সাত বলে ১)। লেগস্পিনার ঈশ সোধির বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিলেন তিনি। ৫২ রানে পড়ল তৃতীয় উইকেট। চতুর্থ উইকেট পড়ল নবম ওভারে ৭৫ রানে। ঈশ সোধির আলগা ডেলিভারিকে বাইরে পাঠাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিলেন লোকেশ রাহুল। ২৬ বলে করলেন ৩৯। তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও দুটো ছয়। এর পর ঈশ সোধিকেই ফের উইকেট দিলেন শিবম দুবে (নয় বলে ১২)। ছয় মারতে গিয়ে তুললেন ক্যাচ। সাতে নেমে ওয়াশিংটন সুন্দর (০) তিন বলের বেশি থাকলেন না। মিচেল স্যান্টনারের বলে বোল্ড হলেন তিনি।

৮৮ রানে ছয় উইকেট পড়ার পর সপ্তম উইকেটে মণীশ পাণ্ডে ও শার্দুল ঠাকুর যোগ করলেন ৪৩ রান। মারতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে ১৫ বলে ২০ করে ফিরলেন শার্দুল। হামিশ বেনেটের বলে ক্যাচ ধরেছিলেন টিম সাউদি। দ্রুত ফিরেছিলেন যুজবেন্দ্র চহালও (দুই বলে ১)। তিনি সাউদির শিকার। ১৪৩ রানে পড়েছিল অষ্টম উইকেট। সেখান থেকে দলকে ১৬৫ রানে পৌঁছে দিলেন মণীশ ও নবদীপ সাইনি। ৩৬ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকলেন মণীশ। তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি চার। আর নয় বলে নট আউট ১১ করলেন নবদীপ। নিউজিল্যান্ডের সফলতম বোলার যথারীতি ঈশ সোধি। ২৬ রানে তিন উইকেট নিলেন তিনি।

খেলা শুরুর আগেই ধাক্কা খেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বাঁ কাঁধের চোটের জন্য এই ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। তাঁর অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিলেন টিম সাউদি। তবে অধিনায়ক বদলালেও টস-ভাগ্য বদলাল না। টানা চতুর্থ বার টস জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। এবং টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাউদি।

আরও পড়ুন: ‘বিশ্বের সেরা পেসার’, শামির প্রশংসায় পঞ্চমুখ শোয়েব আখতার​

আরও পড়ুন: বুমরাকে বোলিং টিপস দিয়ে ট্রোলড সঞ্জয় মঞ্জরেকর

এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে টস জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। অকল্যান্ডে দুই ম্যাচেই টস হেরে রান তাড়া করেছিল ভারত। আর হ্যামিল্টনে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করেছিল টিম ইন্ডিয়া। ওয়েলিংটনেও তাই হল। প্রথমে ব্যাট করল ভারত। এদিন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল রোহিত শর্মা, মহম্মদ শামি ও রবীন্দ্র জাডেজাকে। দলে এসেছিলেন সঞ্জু স্যামসন, নবদীপ সাইনি ও ওয়াশিংটন সুন্দর।

হ্য়ামিল্টনেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ পকেটে পুরে ফেলেছিল ভারত (৩-০)। বিরাট কোহালির দলই প্রথম ভারতীয় দল যারা নিউজিল্যান্ডে কুড়ি ওভারের সিরিজ জিতল। সিরিজ ৫-০ করতে চান, সঙ্গে সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক। তার সঙ্গে অবশ্য পরীক্ষার পথে চলার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। এই বছরেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই লক্ষ্যে প্রথম এগারোয় নানা কম্বিনেশন দেখে নেওয়ার পালা চলছে। সেই কারণেই এদিন ভারতীয় দলে তিনটি পরিবর্তন হয়েছিল।

নিউজিল্যান্ড দলেও হয়েছিল পরিবর্তন। উইলিয়ামসনের জায়গায় দলে এসেছিলেন টম ব্রুস। হ্যামিল্টনের দল থেকে ছিলেন না কলিন ডি গ্র্য়ান্ডহোমিও। তিনি সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের জন্যই ছিলেন স্কোয়াডে। তাঁর জায়গায় এগারোয় এসেছিলেন ড্যারিল মিচেল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy