আত্মবিশ্বাসী: কঠোর পরিশ্রমেই সাফল্য ছিনিয়ে নিতে চান বিরাট কোহালির ভক্ত মানসী। নিজস্ব চিত্র
সুইৎজ়ারল্যান্ডের রাজধানী বাসেল থেকে প্যারা-ব্যাডমিন্টন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সোনা জিতে ভারতে ফিরেছেন গত সপ্তাহেই। পেশায় সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সেই মানসী জোশীর এখন লক্ষ্য দু’টি।
এক, কোচ গোপীচন্দ ও দুই বান্ধবী সাইনা নেহওয়াল ও পি ভি সিন্ধুর সঙ্গে সোনা জয়ের উৎসবের দিনক্ষণ ঠিক করা। দুই, সিঙ্গলস থেকে মিক্সড ডাবলসে খেলা সরিয়ে আসন্ন টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করা।
প্রথম লক্ষ্য সম্পর্কে সেরিনা উইলিয়ামস ও বিরাট কোহালির ভক্ত মানসী বলছেন, ‘‘গোপী স্যরকে পাওয়া যাবে। কিন্তু সাইনা ও সিন্ধুকে এক সঙ্গে পাওয়াটাই কষ্টকর। তাই পার্টির দিনক্ষণ খুঁজছি। বাসেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যাওয়ার আগে সাইনা-সিন্ধুই প্রথম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছিল, এ বার তুই সোনা জিতেই ফিরবি। তাই ওদের বাদ দিয়ে পার্টি হতেই পারে না।’’
আর দ্বিতীয় লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গেলেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় বছর তিরিশের এই মহিলা প্যারা-ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের। বলেন, ‘‘আমার ইভেন্ট সিঙ্গলস এসএলথ্রি নেই টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে। তাই মিক্সড ডাবলসের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেখানে আমার সঙ্গী হরিয়ানার রাকেশ পাণ্ডে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘কিন্তু কাজটা খুব কঠিন। এই মুহূর্তে আমাদের জুটির র্যাঙ্কিং ১৩। টোকিয়োর জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে গেলে র্যাঙ্কিং ছয় নম্বরে নিয়ে আসতে হবে। হাতে রয়েছে ছ’টি প্রতিযোগিতা। এটাও একটা চ্যালেঞ্জ।’’
জীবনের প্রথম বাইশ বছর সে ভাবে ব্যাডমিন্টন খেলেননি। কলকাতায় প্রো-কবাডির আসরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করতে আসা মানসী বলেন, ‘‘স্কুল, কলেজ, অফিসে সময় কাটাতে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। কিন্তু কোনও প্রতিযোগিতায় নামিনি। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে গাড়ি দুর্ঘটনার পরে বাঁ পা বাদ যায়। অস্ত্রোপচারের পরে কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে রি-হ্যাব করার জন্য চিকিৎসকের নির্দেশে ব্যাডমিন্টন খেলতাম।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ধীরে ধীরে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আলাপ হয়েছিল দেশের কয়েকজন প্যারা-অ্যাথলিটের সঙ্গে। এদেরই একজন কেরলের নীরজ জর্জ। সেই আমাকে বলে প্যারা-ব্যাডমিন্টনে খেলতে। তার পর থেকে কর্পোরেট দুনিয়ার কাজের পাশাপাশি খেলাটাও চালিয়ে যাচ্ছি।’’
ভারতের হয়ে এখনও পর্যন্ত ১৯টি প্রতিযোগিতায় নেমে ২৫টি পদক জিতেছেন ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীর কন্যা মানসী। মুম্বইয়ের ফ্যাশন পত্রিকায় অল্প সময়ের জন্য মডেলিংও করেছেন। কলকাতায় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে প্রো-কবাডির সূচনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সেই প্যারা-ব্যাডমিন্টন কন্যা বলেন, ‘‘প্রস্তাবটা পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বিরাট কোহালিরা এই সম্মান পেয়েছেন। আমি ভাল গাইতেও পারি না। তাই রেকর্ডিংয়ের সময় ১৫-২০ বার মহড়া দিয়েছি।’’
গুরু গোপীচন্দের কথা জানতে চাইলেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মানসী। বলেন, ‘‘আমদাবাদের ব্যাঙ্কে কাজ করতাম। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন গোপী স্যর। ২০১৮ সালের প্যারা-এশিয়ান গেমসের তখন এক মাস বাকি। স্যরের কাছে সাহায্য চাইতেই হায়দরাবাদে তাঁর অ্যাকাডেমিতে নিয়ে আসেন আমাকে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘তাঁর আগে যে কৃত্রিম পা দিয়ে হাঁটতাম তার সাহায্যেই খেলতাম। গোপী স্যর খেলার জন্য আধুনিক কৃত্রিম পায়ের বন্দোবস্ত করে দেন। যার সাহায্যে দু’পাশে শরীর সঞ্চালন, ক্ষিপ্রতা বেড়েছে। এ ছাড়াও সাইনা, সিন্ধুর মতো তারকাদের সঙ্গে অনুশীলন করেও জয়ের খিদেটা বেড়ে গিয়েছে। বাসেলে সোনা জয়, তারই ফল।’’
প্যারা-ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনার পরে টোকিয়োয় প্যারালিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন সহজ হবে? জানতে চাইলে লতা মঙ্গেশকর, অমিতাভ বচ্চনের ভক্ত মানসী বলছেন, ‘‘পরিশ্রম করলে সফল হবই। সমস্যা নিয়ে না ভেবে সমাধান নিয়ে ভাবাই সেরা পথ। তা হলে সাফল্য আসতেই পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy