‘বন্ধুত্ব’ তাঁদের আজকের নয়। অনেক দিনের।
ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবল ইতিহাসে গত এক দশকে অন্যতম সেরা চরিত্র হিসেবে দু’জনকে ধরা হয়েছে বরাবর। যে দিন যেখানে যে ভাবে দেখা হয়েছে, নিরামিষ ফুটবল-যুদ্ধে তার নিষ্পত্তি হয়নি। সম্মুখ সংঘর্ষ স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছে ঠিক কোনও না কোনও ভাবে, চোখের সামনে সুস্বাদু ডিশ দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, টিভি টিরআপি বেড়েছে চড়চড়িয়ে।
শনিবার আবার সব হবে।
শনিবার আবার উন্মত্ত হয়ে পড়বে দেশ-বিদেশের মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় আবার আছড়ে পড়বে সাইক্লোন, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মাঠে তাঁরা ঢুকবেন যখন। বিজ্ঞাপনদাতাদের আজ আবার পোয়াবারো, অনেক দিন পর এঁরা তো ফিরলেন আবার, এ বার ইংল্যান্ডের মাঠে।
জোসে মোরিনহো বনাম পেপ গুয়ার্দিওলা! সেটাও সোজাসুজি ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বিতে!
ইউনাইটেডের জোসে আর সিটির পেপের সম্পর্কের ইতিহাস ঘাঁটলে বেশি তুলনা-উদাহরণে যেতে হয় না। কলকাতা ময়দানে পিকে-অমল সম্পর্ক ছিল যে রকম, এঁদেরও প্রায় তাই। শুধু একটা উদাহরণ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যাক। ২০১১ সাল। রিয়াল-বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের আগে। রিয়াল কোচ তখন মোরিনহো। বার্সা কোচ গুয়ার্দিওলা। তা ম্যাচের আগে গুয়ার্দিওলা দুম করে বলে বসলেন, রিয়াল প্রেসরুমে যে মোরিনহোকে দেখা যায়, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। ও সব যদি বার্সার প্রয়োজন পড়ে, তা হলে তারা অন্য কোচ দেখতে পারে। রীতিমতো গালিগালাজ করে পেপ বলে দেন, ‘‘রিয়াল প্রেসরুমে মোরিনহো বস্। ওর সঙ্গে কে পারবে? কিন্তু বার্সেলোনার সে সবের প্রয়োজন হয় না।’’
চুপচাপ শুনে হজম করা মোরিনহোর স্বভাবে কোনও ছিল না, আজও নেই। দিন দু’য়েক পর তিনি যে কথাটা বলেন, তা মোটামুটি আন্তর্জাতিক বির্তকের জন্ম দিয়ে দেয়! বলে বসেন, পেপ আগে পরিচ্ছন্ন ভাবে একটা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতুন। তার পর যেন কথা বলতে আসেন! স্পেশ্যাল ভঙ্গিতে দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান তখন বলে দিয়েছিলেন, ‘‘পেপ খুব বড় কোচ। কিন্তু আমি দু’টো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছি, আর ও একটা। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখ কী ভাবলে পাই জানেন? ওর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার কথা ভাবলে। ও যদি এ বার জেতে সেটা কিন্তু স্ক্যান্ডাল অব বের্নাবাও নামে পরিচিত হবে!’’
এতটাই দুর্দান্ত দু’জনের সম্পর্ক।
ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির চব্বিশ ঘণ্টা আগে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বলাবলি করছেন যে, পেপ যত ধুরন্ধর কোচই হন না কেন, মোরিনহোর ইউনাইটেডের সঙ্গে তিনি এ বার অন্তত পারবেন না। প্লেয়ার কোথায়? সের্জিও আগেরো নেই। একটা দে’ব্রায়েন, একটা দাভিদ সিলভা নিয়ে লড়া যাবে নাকি ইব্রাহিমোভিচ-পল পোগবা-ওয়েন রুনির সঙ্গে? ডোয়াইট ইয়র্কের মতো ব্যক্তিত্বও এই তালিকায় আছেন। বলেও দিয়েছেন যে, ‘‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে খেলা বলেই বলছি, ইউনাইটেড এগিয়ে।’’
কিন্তু ফুটবল-যুক্তিতে ‘পিছিয়ে’ বললেই তো গুয়ার্দিওলা নামের মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণ হঠিয়ে দেওয়া যায় না। একটা ওয়েবসাইট নিজ-প্রতিিনধিদের পাঠিয়ে ডার্বির গরমাগরম উত্তাপ ধরার চেষ্টা করছে দুই ক্লাবের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে। এক সংবাদপত্র আবার ডার্বির ঠিক আগে মোরিনহো আর গুয়ার্দিওলার চরিত্রে পাগলাটে দিকটা ফাঁস করে দিয়েছে। মোরিনহোর সঙ্গে ইউনাইটেডের প্লেয়ারদের দারুণ সম্পর্কের কথা ইদানিং লেখালেখি হয়েছে। ফেলাইনি তো এ দিনও বলেছেন যে, ইউনাইটেডে মোরিনহো আসার পর তাঁর খেলা পাল্টে গিয়েছে। ফর্মের উন্নতি হয়েছে শুধু এবং শুধুমাত্র মোরিনহোর জন্যই। এ বার তিনি চান, মোরিনহোকে কিছু ফিরিয়ে দিতে।
ঘটনা হল, টিমের সঙ্গে এমন একাত্ম হয়ে যাওয়া মোরিনহোর ধর্মের মধ্যেই পড়ে। চিনে প্রাক-মরসুম সফরে যখন টিম নিয়ে যান মোরিনহো, ফ্লাইটে টিমের বুকিং ছিল ইকনমি ক্লাসে আর তাঁর বিজনেসে। মোরিনহোর প্রতিবাদ ছিল দেখার মতো। একটা সময় দেখা যায়, এয়ারবাসের মাটিতে শুয়ে আছেন মোরিনহো! গুয়ার্দওলাও কিছু কম যাননি। সিটিতে আসার আগে সিটির যাবতীয় লোকজনের নাম-ধাম, এমনকী ডাকনাম পর্যন্ত জেনে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, এক রিসেপশনিস্টের জন্মদিনের পার্টিতে আচমকা হাজির হয়ে যান পেপ। ওই রিসেপশনিস্টকে স্তম্ভিত করে তাঁর জন্য উপস্থিত সবাইকে আবেদনও করেন গান গাইতে!
প্রাক-যুদ্ধে এঁরা এত কিছুর পর চমকে দেবেন না, সম্ভব?
মোরিনহো যে কথাটা বলেছেন, বিশ্বের আর কোনও কোচ বলতেন কী না সন্দেহ। সের্জিও আগেরো নির্বাসনে—ডার্বির আগে এ রকম খবর পেলে যে কোনও কোচ উল্লসিত হয়ে পড়বে। কিন্তু মোরিনহো সেখানে বড়ই দুঃখে! তাঁর মনে হচ্ছে, আগেরো থাকলে ভাল হত! কেন? ‘‘আরে, তা হলে তো ওদের ফর্মেশনটা বোঝা যেত। কী ভাবে খেলবে জানা যেত। আগেরো ছাড়া সিটি, বেশ শক্ত ব্যাপার!’’ বলে দিয়েছেন মোরিনহো। পেপের কথাটা আরও রসালো। ডার্বির আগে তিনি বলে রেখেছেন, মোরিনহো ডাকলে তাঁর সঙ্গে একটু তিনি ওয়াইন খেতে চান! ‘‘আমি বারবার বলেছি, মোরিনহোকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। ও ওয়াইন খেতে ডাকলে নিশ্চয়ই যাব!’’
মোরিনহো উত্তর দেননি এখনও। দেবেন নিশ্চয়ই। ডার্বিটা যাক!
চার স্মরণীয় ম্যাচ
বার্সেলোনা ৫ রিয়াল মাদ্রিদ ০ (লা লিগা, নভেম্বর ২০১০)
জয়ী-গুয়ার্দিওলা মোরিনহোর প্রথম এল ক্লাসিকোকে
স্রেফ বিপর্যয়ে পরিণত করেছিলেন পেপ। জাভি, পেদ্রো, জেফ্রেন ও
দাভিদ ভিয়ার জোড়া গোলে জেতে বার্সা।
ইন্টার মিলান ৩ বার্সেলোনা ১ (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল প্রথম পর্ব, এপ্রিল ২০১০)
জয়ী-মোরিনহো মোরিনহো মাস্টারক্লাস।
ইব্রাহিমোভিচ, মেসির বার্সেলোনা স্বপ্নের ফর্মে ছিল।
পেদ্রোর গোলে ১-০ এগোয় বার্সা।
কিন্তু জবাবে মাইকন, দিয়েগো মিলিতো এবং ওয়েসলি স্নেইডার ধ্বংস করে দেন পেপের টিমকে।
রিয়াল মাদ্রিদ ১ বার্সেলোনা ০ (কোপা দেল রে ফাইনাল, এপ্রিল ২০১১)
জয়ী-মোরিনহো টানটান ম্যাচ নব্বই মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য।
অতিরিক্ত সময়ে রোনাল্ডোর গোলে স্প্যানিশ কাপ জিতল রিয়াল।
রিয়াল মাদ্রিদ ০ বার্সেলোনা ২ (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল প্রথম পর্ব, এপ্রিল ২০১১)
জয়ী-গুয়ার্দিওলা মেসি ম্যাজিক। পেপে লাল কার্ড দেখেন
ম্যাচে। এলএম টেন নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন রিয়াল ডিফেন্সকে।
অসাধারণ দুটো গোলও করেন।
ইপিএলে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম ম্যাঞ্চেস্টার সিটি আজ বিকেল ৪-৫০ স্টার স্পোর্টস ২
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy