Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

কম পাস খেলে বাজিমাত ক্লপের লিভারপুলের

অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে এই য়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরাই। তা হলে?

স্বপ্নপূরণ: চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি হাতে উচ্ছ্বাস সালাহ-র। গেটি ইমেজেস

স্বপ্নপূরণ: চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি হাতে উচ্ছ্বাস সালাহ-র। গেটি ইমেজেস

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৪:২৩
Share: Save:

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে টটেনহ্যাম হটস্পার বনাম লিভারপুল ম্যাচটা দেখে আরও একবার উপলব্ধি হল— পরিসংখ্যান দিয়ে কোনও দলকে বিচার করা ঠিক নয়।

বল দখলের লড়াই থেকে গোল লক্ষ্য করে শট নেওয়া, হ্যারি কেনরা অনেকটাই এগিয়ে ছিল মহম্মদ সালাহদের চেয়ে। পুরো ম্যাচে ৬১ শতাংশ বল ছিল টটেনহ্যাম ফুটবলারদের দখলে। ৫২৮টা পাস খেলেছে কেন-রা। সেখানে সাদিয়ো মানেরা খেলেছে ২৮০টি পাস। বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে টটেনহ্যাম নির্ভুল শট নিয়েছে আটটি। লিভারপুল নিয়েছে মাত্র তিনটি শট। অথচ তা থেকেই দু’টো গোল হয়েছে। নেভিল কার্ডাসকে অনুকরণ করে বলতে হয়, ফুটবলে পরিসংখ্যান হল গাধা।

অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে এই য়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরাই। তা হলে? রিয়ালের সঙ্গে টটেনহ্যামের কোনও তুলনাই চলতে পারে না। রোনাল্ডোরা নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে খেলতে সারাক্ষণ আক্রমণ করে গিয়েছিল। টটেনহ্যাম অধিকাংশ পাসই খেলেছে নিজেদের অর্ধে। লিভারপুলের বক্সের কাছাকাছি গিয়েই ওরা একের পর এক ভুল করেছে। লিভারপুল কখনওই বল দখলের প্রতিযোগিতায় যাওয়ার চেষ্টা করেনি। ওরা তিন-চারটে পাস খেলেই দ্রুত টটেনহ্যামের বক্সের ভিতর ঢুকে পড়ছিল। বারবার জায়গা পরিবর্তন করছিল ওরা। নেপথ্যে ক্লপের মস্তিষ্ক।

লিভারপুল ম্যানেজারের এটা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল ছিল। প্রথম বার বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বস হিসেবে হেরেছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে। গত বছর রিয়ালের বিরুদ্ধে হার। তৃতীয় বার আর খালি হাতে ফিরতে চাননি। এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শুরু থেকেই নিখুঁত পরিকল্পনায় দলকে খেলিয়েছেন ক্লপ। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী রণনীতি তৈরি করেছেন জার্মান ম্যানেজার। এই মরসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দু’বারই টটেনহ্যামকে হারিয়েছে লিভারপুল। ফলে ওদের খেলার ধরনটা খুব ভালই জানেন ক্লপ। তাই খুব কম পায়ে বল রাখছিল ফাবিয়ানো-রা। দু’টো গোলই কিন্তু এ ভাবে আক্রমণের ঝড় তুলে করেছে লিভারপুল। প্রথম গোলটার কথা মনে করুন। খেলা সবে শুরু হয়েছে। মানের শট লাগল টটেনহ্যাম ডিফেন্ডার মুসা সিসোকোর হাতে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। টটেনহ্যামের ফুটবলারেরা প্রতিবাদ জানায়। আমার মতে রেফারির সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই। কারণ, মানের শটটা যদি সিসোকোর শুধু হাতে লাগত, তা হলে পেনাল্টি না-ও দিতে পারতেন রেফারি। কিন্তু বারবার টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখলাম, সিসোকো হাতটা ব্যবহার করেছিল বলটা থামাতে। এই কারণেই পেনাল্টি। গোল করতে ভুল করেনি সালাহ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্বিতীয় দ্রুততম গোলের মালিককে শনিবার রাতে আরও ভয়ঙ্কর দেখিয়েছে রবের্তো ফির্মিনো দলে ফেরায়। এ বার দ্বিতীয় গোলটা মনে করুন। সময় নষ্ট না করে বল জালে জড়িয়ে দেয় দিভোক ওহিগি। খুব সহজ অঙ্ক। কম পাস খেলে দ্রুত বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের সামনে পৌঁছে গিয়ে চাপ বাড়াও। গোল আসবেই।

ক্লপের রণনীতি দেখে প্রদীপকুমার (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রয়াত অমল দত্তের কথা মনে পড়ছিল। ডেম্পো তখন দুর্ধর্ষ দল। নিজেদের মধ্যে এত পাস খেলত যে, বিপক্ষের ফুটবলারেরা প্রায় বল ধরতেই পারত না। ডেম্পোর বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে দুই কিংবদন্তি কোচ বলতেন, বেশি ক্ষণ পায়ে বল রাখবে না। চেষ্টা করবে দ্রুত ওদের পেনাল্টি বক্সের সামনে পৌঁছে যেতে। এই ছকে খেলে আমরা বহুবার ওদের হারিয়েছি। সালাহরাও একই কৌশলে লিভারপুলকে ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন করল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy