Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
তিন দিনে শেষ টেস্ট, ০-২ সিরিজ হার
India

‘মনঃসংযোগ ও ধৈর্যের অভাব খুব বেশি করে নজরে পড়ল’

তৃতীয় দিনই ভারত ছয় উইকেট হারানোর পরে ম্যাচের ভাগ্য মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।

বিষণ্ণ: ক্রাইস্টচার্চেও পাল্টাল না হতাশার ছবি। সোমবার ম্যাচের পরে ঋদ্ধিমান, পৃথ্বী, শামি, রাহানেদের নিয়ে অধিনায়ক কোহালি।  গেটি ইমেজেস

বিষণ্ণ: ক্রাইস্টচার্চেও পাল্টাল না হতাশার ছবি। সোমবার ম্যাচের পরে ঋদ্ধিমান, পৃথ্বী, শামি, রাহানেদের নিয়ে অধিনায়ক কোহালি। গেটি ইমেজেস

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০৪:২৪
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন মুম্বইয়ের এক স্থানীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় হার্দিক পাণ্ড্যের মারা বিশাল, বিশাল ছয়ের ভিডিয়ো মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু ৪০-৪৫ বছর আগে ইন্টারনেট ছেড়ে দিন, টিভিতেই ক্রিকেট সে ভাবে সম্প্রচারিত হত না। তাই সবার পক্ষে জানা সম্ভবও ছিল না, কী ভাবে আচ্ছাদনহীন পিচে, হেলমেট ছাড়া ফাস্ট বোলিং এবং সুইংয়ের ছোবল সামলেছিলেন
সুনীল গাওস্কররা।

এই তুলনাটা করার কারণ একটাই। এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে হয়তো হার্দিকের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যান পেতে সমস্যা হবে না, কিন্তু বিষাক্ত গতি আর সুইং সামলে, মনঃসংযোগের প্রতিমূর্তি হয়ে বিপক্ষের আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়ার মতো ব্যাটসম্যান কোথায়? বিরাট কোহালি রান না পেলে এই দলটা এখনও লড়াই করার জায়গায় পৌঁছতে পারে না। ক্রিকেটে খারাপ সময় সবার আসে। ডন ব্র্যাডম্যান থেকে গাওস্কর, ভিভ রিচার্ডস থেকে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ— সবাই ব্যাড প্যাচের শিকার হয়েছেন। বিরাটকেও মাঝে, মাঝে রান খরার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তখন বাকি ব্যাটসম্যানদের কাউকে না কাউকে তো লড়াইটা বিপক্ষ শিবিরে নিয়ে যেতে হবে। সলমন খান, শাহরুখ খান কি সব সিনেমা হিট করাতে পারে? পারে না। মাঝে, মাঝে আয়ুষ্মান খুরানা বা ভিকি কৌশলও তো সিনেমা হিট করিয়ে দেয়। ভারতীয় ব্যাটিংয়ে সে রকমই কাউকে দরকার ছিল।

তৃতীয় দিনই ভারত ছয় উইকেট হারানোর পরে ম্যাচের ভাগ্য মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। সোমবার সকালে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি বাকি চার উইকেট পড়ার জন্য। ১২৪ রানে শেষ হয়ে যায় বিরাটদের দ্বিতীয় ইনিংস। জয়ের জন্য ১৩২ রানের লক্ষ্য কখনওই বড় ছিল না, তার উপরে নিউজ়িল্যান্ডের ওপেনাররা প্রথম উইকেট জুটিতেই একশো রানের উপরে তুলে দেওয়ায় কোনও লড়াই হয়নি। সাত উইকেটে ম্যাচ এবং ২-০ ফলে সিরিজ জিতে নিল কেন উইলিয়ামসনের দল।

ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আগেভাগে ফ্রন্টফুটে চলে আসার প্রবণতা লক্ষ করলাম। যেটা নিউজ়িল্যান্ডের বোলারদেরও নজর এড়ায়নি। চারটে বল ব্যাটের কাছে ফেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনের পায়ে নিয়ে আসার পরে একটা শর্ট বল করে ঝামেলায় ফেলে দিচ্ছিল। পৃথ্বী শ-এর হাতে হয়তো ভাল শট আছে, কিন্তু শর্ট বলে ওর যথেষ্ট দুর্বলতা দেখলাম। অজিঙ্ক রাহানে আবার আগেই ফ্রন্টফুটে চলে আসছিল। যেটা ওকে সমস্যায় ফেলে দেয়। চেতেশ্বর পুজারা টেস্টের আদর্শ ব্যাটসম্যান হলেও ও কখনও রাহুল দ্রাবিড় নয়। আমার মনে হয়েছে, পুজারা বোলারদের একটু বেশিই মাথায় চড়তে দেয়। যে কারণে রান ওঠার গতি কমে যায়, বোলাররা আধিপত্য দেখাতে শুরু করে। এই সিরিজে যেমন হয়েছে। মনঃসংযোগ আর ধৈর্য— এই দুটো জিনিসের অভাব ভারতীয় ব্যাটিংয়ে খুব দেখা গেল। যার জেরে এই সিরিজ হার।

ভারতীয় বোলাররা খারাপ বল করেনি সিরিজে। প্রথম টেস্টে ইশান্ত শর্মা পাঁচ উইকেট নিয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু দুটো দলের মধ্যে তফাত হয়ে গিয়েছে আরও একটা জায়গায়। সেটা হল নীচের দিকের ব্যাটিংয়ে। প্রথম টেস্টে ভারতের শেষ তিন উইকেটে দু’ইনিংসে রান উঠেছিল যথাক্রমে ৩৩ এবং ২৯। নিউজ়িল্যান্ডের শেষ তিন উইকেটে প্রথম ইনিংসে ওঠে ১২৩ রান। ক্রাইস্টচার্চে দুই ইনিংসে সাত উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ভারতের ব্যাটসম্যানরা তুলতে পেরেছিল ৩৫ এবং ২৭ রান। সাত উইকেট হারানোর পরে নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা তুলেছিল ৮২ রান।

ভারতীয় ব্যাটিং লাইনে চোখ বোলালে পরিষ্কার সাত নম্বরের পরে আর কোনও ব্যাটসম্যান নেই। তাও সেটা খাতায় কলমে। ঋষভ পন্থ যে ফর্মে ছিল, তাতে ছ’নম্বরের পর থেকেই প্রায় ব্যাটিং লেজ শুরু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। বিদেশে ঋষভ, ভারতে ঋদ্ধিমান সাহা— ভারতীয় দল পরিচালন সমিতির এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছি না। বিশেষ করে যেখানে ঋদ্ধিকে শুধু ভারতেরই নয়, বিশ্বের সেরা কিপার বলা হচ্ছে। ঋদ্ধি এর চেয়ে আর কী খারাপ ব্যাট করত?

এই সিরিজের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হল টিম সাউদি। ক্রিকেট যেখানে ব্যাটসম্যানদের খেলা বলে পরিচিত, সেখানে সাউদির মতো এক জন বোলারের সিরিজ সেরা হওয়াটা একটা টাটকা হাওয়ার মতো। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের আসল আবিষ্কার কাইল জেমিসন। ছ’ফুট আট ইঞ্চির পেসার যে শুধু বল হাতেই তফাত গড়ে দিল তা নয়, ব্যাট হাতেও নিউজ়িল্যান্ডের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রথম টেস্টে ৪৪, দ্বিতীয় টেস্টে ৪৯ রান। মনে রাখবেন, রানটা করেছে ন’নম্বরে নেমে। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে। এই জেমিসন ক্রিকেট জীবন শুরু করেছিল ব্যাটসম্যান হিসেবে। দেখা যাচ্ছে, ব্যাটিং ভোলেনি ও।

অন্য বিষয়গুলি:

India New Zealand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy