অতিথি: অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে আজ সামনে ব্রাজিল। তার আগে কলকাতায় ঘুরতে বেরিয়ে গেল জার্মানি দল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাল তারা। বড়দের বিশ্বকাপে ১-৭ জিতেছিল জার্মানি। আজ শেষ হাসি কার, অপেক্ষা তারই। নিজস্ব চিত্র
মাঠের মাঝখানে রাখা তেপায়ার উপর দাঁড় করানো একটা বোর্ড।
সংবাদমাধ্যমকে আড়ালে রেখে সেখানেই আর্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে ছবি আঁকেন সেই ভঙ্গিতে ব্রাজিল কোচ কার্লোস আমেদেউ একটা লম্বা পেনসিল দিয়ে বোঝাচ্ছিলেন তাঁর ছাত্রদের। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। সঙ্গে যুবভারতীর স্টেডিয়াম সংলগ্ন অনুশীলনের মাঠে বইছে শিরশিরে হাওয়া। তাতে কী? পাওলিনহো, ব্রেনের সৌজা, লিঙ্কন ডন স্যান্টোসদের আঠারো জোড়া চোখ বোর্ড থেকে সরছে না।
পেনসিলটা চলে যাচ্ছিল বোর্ডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। আর সঙ্গে ব্রাজিল কোচের চোখও ঘুরছিল নিজের দলের ডিফেন্ডার থেকে স্ট্রাইকারদের দিকে। যার দিকে হেড মাস্টারের চোখ যাচ্ছে, সে ঘাড় নাড়ছে। মিনিট পনেরো এটা চলার পরই গোলকিপারদের ডেকে নিলেন আমেদেউ। তারপর ঘণ্টা দেড়েকের অনুশীলন। সেখানে সেট পিস থেকে ‘সিচুয়েশন’, সবই হাজির।
এ সবই আজ, রবিবাসরীয় রাতে সাম্বা নাচের মঞ্চ তৈরির আগাম প্রস্তুতি। শনিবার সকালে যখন জার্মান বধের প্রস্তুতিতে রোনাল্ডিনহো, নেমারের দেশের ছেলেরা ব্যস্ত, তখন ইস্পাতকঠিন মানসিকতা আর শৃঙ্খলায় মোড়া জার্মানরা বেরিয়ে পড়েছে কলকাতা ভ্রমণে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, রাজভবন, রাইটার্স ও পাশের চার্চ দেখার পথে রাস্তায় পড়েছে কালীপুজোর মণ্ডপ। পুজো মণ্ডপেও অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রচার দেখে অবাক ক্রিস্টিয়ান উকের ছাত্ররা। ভিক্টোরিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিজেদের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন অনেকেই। সকালে বার্লিন বা ফ্র্যাঙ্কফুর্টের মতো আবহাওয়ায় ফুরফুরে মেজাজ অবশ্য উবে গিয়েছে রাতের অনুশীলনে। সেখানে রিও-র বদলা নেওয়ার প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন: টিকিটের বণ্টন নিয়ে ক্ষুব্ধ পিকে
জার্মানদের প্রিয় সেলিব্রেশন স্টাইল ‘চেস্ট বাম্প’ বা ‘পোগবা-ড্যাব’ দেওয়া হয়নি চোদ্দো মাস আগের মারাকানায়। যুবভারতীতে সেটা করার জন্য যে মরিয়া তারা। কিন্তু রিও অলিম্পিক্সের বদলা কি কলকাতায় নেওয়া সম্ভব? মারাকানার মতো যুবভারতীর গ্যালারিও তো আজ দেখাবে সর্ষে খেতের মতো। হলুদ আর হলুদ। ষাট হাজার দর্শকের বেশির ভাগই চেঁচাবেন ব্রা-জি-ল, ব্রা-জি-ল বলে। শহরের মেজাজ তো সে রকমই। টানা বৃষ্টি আর পুজোর উৎসবের মধ্যেও চেতলা থেকে বাগবাজার, হাওড়া থেকে হাতিবাগানে ইতিউতি যা পতাকা উড়ছে, তা তো সেই নেমারের উত্তরসূরীদের সমর্থনেই।
‘‘জীবনে যত ম্যাচ খেলেছি সব সময় বিপক্ষে চল্লিশ হাজার দর্শক চেঁচিয়েছে। এখানে ষাট হাজার আমাদের সঙ্গে। এটা আমাদের বাড়তি এনার্জি জোগাবে,’’ বলার সময় পাওলিনহোর মুখটা ঝকঝক করে ওঠে। চার ম্যাচে দু’গোল করা ব্রাজিলের নতুন প্রতিভা সাম্বা-ঝলক দেখানোর বারুদ যে পেয়ে গিয়েছে বোঝা যায়। ওই একবারই ক্লিপ দিয়ে আটকানো দাঁতে ভেসে ওঠে মুক্তোর মতো হাসি। একটু আগেই যুবভারতীর ভিতর হাঁটতে গিয়ে পুরো স্টেডিয়ামের ছবি তুলেছে সতীর্থদের সঙ্গে। পাশে বসা কোচ আমেদেউয়ের মন্তব্য আরও ক্ষুরধার, ‘‘মাঠ, আবহাওয়া, পরিবেশ কোনও কিছুই আমাদের বিপক্ষে নেই। আড়াই বছর ধরে আমরা প্রস্তুত হয়েছি শুধু জেতার জন্যই।’’
ব্রাজিল বনাম জার্মানি মানেই ধুন্ধুমার ম্যাচ। মানসিকতা এবং সম্মানের যুদ্ধ। তা সে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বা যে কোনও বয়সের টুর্নামেন্টেই হোক। সেটা ব্রাজিল কোচের মতো মানছেন জার্মান কোচও। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘোরার ফাঁকে ক্রিস্টিয়ানো উকের ঘনিষ্ঠ মহলে মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ‘‘জার্মানরা কোনও যুদ্ধেই মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকে না। গ্যালারি কাদের সমর্থন করল তা নিয়েও মাথাও ঘামায় না। ব্রাজিল মানেই হারাতে হবে।’’
বৃষ্টির জন্য স্টেডিয়ামে কোনও দলকেই শনিবার অনুশীলন করার অনুমতি দেয়নি ফিফা। পুরো ব্রাজিল তবু হেঁটেছে মাঠে আর জার্মানির কোচ শুধু মাঠ দেখেছেন। কলকাতা ডার্বির আগে এ রকম হলে ধুন্ধুমার লেগে যেত। কিন্তু এটা নিয়ে মুখ বন্ধ দুই দেশের কোচের। ফিফা তো আর আইএফএ বা সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন নয়!
কলকাতা বহু বিশ্বতারকাকে দেখেছে, কিন্তু দুই মহাশক্তির এমন দ্বৈরথ কখনও দেখেনি। টিকিটের চাহিদা এতটাই তুঙ্গে যে, রাজ্যের জনা দু’য়েক মন্ত্রী আর পুরপিতা জানাচ্ছেন, তাদের বোনেরা ভাইফোঁটা দেওয়ার সময় অনুরোধ করেছেন, উপহার চাই না ছেলে-মেয়েরা মাঠে যাবে গোটা চারেক টিকিট চাই। মন্ত্রী, বিধায়ক, আমলা, ফুটবল কর্তারা টিকিট প্রত্যাশীদের সামাল দিতে হিমশিম।
ভিড় সামাল দিতে প্রায় পাঁচশো বাড়তি পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে স্টেডিয়ামে। বম্ব স্কোয়াডের কুকুর শনিবার থেকে পরীক্ষা করছে মাঠ। এ সব নিয়ে অবশ্য মাথা ব্যথা নেই কারও। বিশ্ব ফুটবলের দুই শক্তিধরের যুদ্ধে যে ডুবে গিয়েছে কলকাতা। বাংলাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy