জনসন জানেন কোহালিকে রাগানোর ফল।
অস্ট্রেলিয়ার স্লেজিংয়ের হুমকি
ধুর, ধুর, স্লেজিং ম্যাচ জেতায় বলেই আমি মনে করি না। জেতায় যোগ্যতা। যে দলে যোগ্যতা নেই, তারা স্লেজ করে জিততে পারবে? এখনকার দিনে তো স্লেজিং তেমন হয়ও না। আইসিসি খুবই কঠোর সমস্ত নিয়ম করে দিয়েছে। ম্যাচ রেফারি কড়া দৃষ্টি রাখেন। স্লেজিং হলেও কেউ সীমানা অতিক্রম করার সাহস পায় না। আমার সন্দেহ আছে, স্লেজিং কতটা হবে। আমি মনে করি, যারা ক্রিকেটীয় দিক থেকে ভাল দল তারাই সিরিজ জিতবে। যারা স্লেজিংয়ে ভাল, তারা নয়।
স্লেজিং নিয়ে নিজের দর্শন
আমি মনে করি, ভাল ক্রিকেটার কখনও স্লেজ করে না। এ সব অস্ট্রেলিয়াই এনেছে। স্টিভ ওয়ের সময়ে স্লেজিং নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছিল। কখনও এই জিনিসটাকে সমর্থন করিনি আমি। নিজে কখনও স্লেজ করিনি। আমাকেও কখনও খুব একটা কেউ কথা শোনায়নি।
মার্শালদের স্লেজিং করতে হয়নি
ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং-রা কখনও স্লেজ করেছে বলে তো শুনিনি। ক্রিকেটের ইতিহাসে স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ম্যালকম মার্শালদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিছুটা ওপরের দিকেই থাকবে। ওদের পেসাররা হয়তো বাউন্সার দিয়ে গিয়েছে অবিরাম ভাবে, রক্তাক্ত করেছে ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু অত শক্তিশালী দল হয়েও কখনও স্লেজিংয়ের মতো ফালতু ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি।
বিরাটকে রাগানোর নকশা
অস্ট্রেলিয়া এটা করতে গেলে ব্যুমেরাং হবে। বিরাট এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। ও কিছুতেই দমে যাওয়ার ছেলে নয়। কেউ ইট ছুড়লে পাটকেল ফিরিয়ে দেবে। অস্ট্রেলিয়া ওকে স্লেজ করলে বিরাট ব্যাট আর মুখ দু’টোতেই যোগ্য জবাব দিয়ে দেবে। ঠিক যেমন দিয়েছিল দু’বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে মিচেল জনসনদের।
কোচ কুম্বলের সঙ্গে কথা
এই রক্ষণাত্মক ফিল্ড সাজানো নিয়েই এর মাঝে কথা হল অনিল কুম্বলের সঙ্গে। এখন তো ও ভারতীয় দলের কোচ। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, কুম্বলে ছিল আমাদের এক নম্বর স্পিনার। ওকে না বলে পারলাম না যে, ‘‘আমি অধিনায়ক থাকার সময় তোমার বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি অন্তত চার জন ফিল্ডার থাকত। তা হলে তুমি এখন কোচ হয়ে স্পিনারদের জন্য রক্ষণাত্মক ফিল্ড সাজাতে দিচ্ছ কেন?’’ অনিল আমাকে বলল, ব্যাপারটা নিয়ে ও ভাববে। আমার এখনও বেশ মনে আছে, অনিল বল করার সময় আমি একদম বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলাম যে, সিলি পয়েন্ট আর ফরওয়ার্ড শর্ট লেগ থাকতেই হবে। ও দু’টো সরবেই না।
স্পিনমন্ত্রে বিদেশি বধের জনক
ইংল্যান্ডে গেলে আমাদের সিমিং পিচে পড়তে হয়। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলে গতিসম্পন্ন, বাউন্সি পিচে। তা হলে আমাদের দেশে ওরা এলে ঘূর্ণি উইকেটে কেন খেলব না? ওরা যেমন হোম অ্যাডভ্যান্টেজ নেয়, আমরাও নেব। আমাদের সময়ে ঘরের মাঠে তিন স্পিনার খেলানোর চিন্তাটা সেই ভাবনা থেকেই এসে পড়েছিল। তবে তিন স্পিনার থাকলেও আমাদের কিন্তু দারুণ দু’জন মিডিয়াম পেসার ছিল। কপিল দেব ও মনোজ প্রভাকর। এত ভাল সুইং বোলার ছিল ওরা যে, ভারতীয় পিচেও শুরুর দিকে নিয়ম করে দু’তিনটে উইকেট তুলে নিত। তার পর এসে স্পিনাররা ভেল্কি দেখাতে শুরু করত। কপিল আর মনোজ দারুণ রিভার্স সুইংটাও করত। ফলে স্পিনাররা উইকেট তুলতে না পারলে পুরনো বলে ওদের ফিরিয়ে আনা যেত। পরের দিকে শ্রীনাথ চলে এল। ওই পেস বোলিং কম্বিনেশন পাওয়াটা ক্যাপ্টেনের কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল।
অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারতীয় স্পিন
অতিথিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের ফর্ম। ও কেমন খেলে, তার ওপর এই সিরিজের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে। ডেভিড ওয়ার্নারও খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়াকে যদি ভারতে ভাল কিছু করতে হয়, এদের দু’জনকে রান পেতেই হবে। আর প্রথম ইনিংসে নিয়ম করে অন্তত ৪৫০-৫০০ রান তুলতে হবে। স্পিনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক রেকর্ড মোটেও ভাল নয়।
আরও পড়ুন:
বিশ্বাস রাখো স্বপ্ন ছুঁতে পারবে, বললেন বিরাট
অশ্বিন বনাম অস্ট্রেলিয়া
গত এক বছরে সবচেয়ে উন্নতি করা বোলার অশ্বিন। আগে অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাত। এখন বেশি করে অফস্পিন বলটাই করছে। এটাই ঠিক রণনীতি। আমার কাছে ফর্মুলা খুব সহজ। অফস্পিনার বেশি করে অফস্পিন করবে, লেগস্পিনার লেগস্পিনের ওপর জোর দেবে। ওই সব ক্যারম বল-টল চার ওভারে দু’একটাই ঠিক আছে। অশ্বিন এটা বুঝতে পেরেছে দেখে ভাল লাগছে। আমি নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ার জন্যও অশ্বিন বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দেবে।
কোহালি বনাম অস্ট্রেলীয় বোলিং
দারুণ আকর্ষণীয় লড়াই হতে যাচ্ছে। বরাবর অস্ট্রেলিয়াকে দেখলেই অন্য রকম একটা চনমনে ভাব চলে আসে কোহালির মধ্যে। এ বারের সিরিজ নিয়েও উত্তাপ বেশ বেড়ে গিয়েছে। কোহলি নিশ্চয়ই ফুটছে ভাল কিছু করার জন্য। এই ছেলেটার এই জিনিসটা দেখে আমি মুগ্ধ। মঞ্চ যত বড়, ততই যেন ওর জেদ বেড়ে যায়। আমার মনে হয়, কোহালিকে অসুবিধায় ফেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া তাকিয়ে থাকবে মিচেল স্টার্কের দিকে। স্টার্কের গতি আছে, সুইং ভাল, বৈচিত্রও আছে। বাঁ-হাতি বলে আলাদা কোণ তৈরি করতে পারে। আর বল ঘুরলে নাথন লায়নও কিন্তু কাজে আসতে পারে। লায়ন স্পিনার হিসাবে একেবারে খারাপ নয়।
সিরিজ নিয়ে পূর্বাভাস
বলা কঠিন। তবে যথেষ্ট ব্যবধান রেখে ভারত জিতবে এটুকু বলতে পারি। হোয়াইটওয়াশ হবে না কি ৩-০ সেটা সময় বলবে। কোহালির এই ভারতীয় দল যে ফর্মে খেলছে, দেশের মাটিতে অন্তত পা পিছলে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
প্রিয় ইডেনে টেস্ট নেই কেন
অবাকই হয়েছি এই সিরিজে ইডেনে কোনও টেস্ট না থাকায়। বরাবর অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য ভীষণ পয়া মাঠ ইডেন। আমরা মার্ক টেলরদের হারিয়েছিলাম। তার পর ২০০১ সালে সৌরভের নেতৃত্বে সেই অবিশ্বাস্য টেস্ট জয়। ভারতীয় বোর্ড হয়তো ছোট কেন্দ্রে টেস্ট ছড়িয়ে দিতে চাইছে, তাই পুণে, ধর্মশালার মতো জায়গায় ম্যাচ দিয়েছে। সেটা প্রশংসনীয় প্রয়াস। স্বাগতই জানাচ্ছি। তবু, ইডেনে একটা টেস্ট দিলেই পারত। ক্লাব হাউজ দিয়ে ঢুকতে গিয়েই তো স্টিভ স্মিথের মনে হতো, এ মাঠে মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়-রা হেরে ফিরেছিল। আমি পারব তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy