অঙ্কিত স্মরণে। সোমবার কোটলায়। ছবি: পিটিআই
চিয়ার লিডার বনাম ড্রামার।
গৌতম গম্ভীর বনাম যুবরাজ সিংহ।
সুনীল নারিন বনাম ইমরান তাহির।
সোমবার ফিরোজ শাহ কোটলায় এই দ্বৈরথগুলোকে যেন ছাপিয়ে গেল দুই মর্মান্তিক অধ্যায়।
সতেরো বছর আগের রমন লাম্বা-স্মৃতি কোটলায় তাজা হয়ে উঠল অঙ্কিত কেশরীর মৃত্যুর খবরে।
ওই মুহূর্তটাই যেন এই অধ্যায়ের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের ক্লাইম্যাক্স।
আপাত শান্ত কোটলার জায়ান্ট স্ক্রিনে একের পর এক ভেসে উঠছে হঠাৎ ঝরে যাওয়া তাজা-তরুণ অঙ্কিত কেশরীর নানা মেজাজের ছবি। আর মাঠে তাঁর জন্য নীরবতা পালন করছেন গম্ভীর, যুবরাজ, দুমিনি, মর্কেল, তাহির, নারিন, রাসেলরা।
যদিও টিন এজারদের ভিড়, তবু ওই মুহূর্তে শান্ত গ্যালারিতে তখন ১৭ বছর আগে ঢাকা থেকে আসা সেই মর্মান্তিক খবরের স্মৃতি। কলকাতাকে সোমবার যে দুঃখে কাঁদতে হল, সেই কান্না দিল্লিকে কাঁদতে হয়েছে ১৭ বছর আগে। এমনই এক অশুভ তারিখে। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮।
ডিডিসিএ কর্তা চেতন চৌহান বলছিলেন, ‘‘আবার সেই ঘটনা! কলকাতার ক্রিকেটমহলকে এমন মর্মান্তিক স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার শক্তি দিক ঈশ্বর। যেমন আমাদের দিয়েছেন।’’
জয়ের পরও অঙ্কিতের মৃত্যুর খবর ভুলতে পারলেন না কেকেআর ক্যাপ্টেন। বলে দিলেন, ‘‘খবরটা খুবই দুঃখের। কলকাতায় ফিরে অঙ্কিতের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে আছে। ওঁদের জন্য কিছু করারও ইচ্ছা আছে।’’
যতই ক্রিকেট-সার্কাস, শো বিজনেস বলুন, অঙ্কিত কেশরীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে আইপিএল কিন্তু ফিরে এল ক্রিকেটের চেনা স্পিরিটে। মাঠে এক ক্রিকেটারের মৃত্যুর জ্বালা বুকে নিয়ে মাঠে নামলেন সবাই।
তবে কোটলায় ডেয়ারডেভিলদের সঙ্গে নাইটদের যুদ্ধে সেই চেনা আগ্রাসন দেখা গেল না। যুবরাজদের দেখে ডেয়ার বা ডেভিল কোনও শব্দটাই মনে পড়ার উপায় নেই। তরুণ ক্রিকেটারের অকালমৃত্যু যেন শুষে নিল ‘তেওহার’-এর মেজাজ। এমন ম্যাড়মেড়ে ম্যাচে এমন হেলায় জয়। এ বারের আইপিএলে এমন দিন বোধহয় আর আসেনি। যেন আর নাও আসে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ডেয়ারডেভিলদের ইনিংসে রানের খরা। ব্যাটিং অর্ডারে উপর দিকে আসার সুযোগ পেয়ে মনোজ তিওয়ারি এ দিন ২৮ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে দিলেন ঠিকই, কিন্তু যে ভাবে উইকেটে সেট হয়ে গিয়েও শর্ট মিড উইকেটে ইউসুফ পাঠানকে সহজতম ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন, তা অবাক করার মতো। এই মনোজ তিওয়ারিই অবশ্য এ দিন দলের সবচেয়ে বেশি রান পাওয়া ব্যাটসম্যান। যুবরাজের আউটটাই বা কি কম বিস্ময়কর? যুবরাজ যে ভাবে অম্লান বদনে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে স্টাম্পড হলেন, তাতে মনে হল উইকেটকিপারের কথা তাঁর মনেই ছিল না।
দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ১৪৬ রান পার করতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পুরো কুড়ি ওভারও লাগল না। এগারো বল বাকি থাকতেই তা তুলে দিল তারা। ঘরের ছেলে গম্ভীর কোটলার উপর পুরো রাগটা যেন উগরে দিলেন ৪৯ বলে ৬০ রান করে। তবে জয়ের কৃতিত্ব বোলারদের দিয়ে বললেন, ‘‘বোলাররাই ম্যাচ জিতিয়ে দিল। বিশেষ করে উমেশ। মর্নি, উমেশ আর সুনীলের এক দলে থাকাটা আমাদের প্রাচুর্য বলতে পারেন।’’
আঠারো রান দিয়ে দু-উইকেট পাওয়া উমেশ বললেন, ‘‘বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগছে। লাইন-লেংথে ফোকাস করছি। ওখানকার আত্মবিশ্বাসটাও রয়েছে।’’
কোটলার যে উইকেট দেখে টস জিতে গৌতম গম্ভীর তাকে ‘অচেনা লাগছে’ বলেছিলেন, সেই উইকেটে নাইট বোলাররা বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেললেন। যাদব, মর্কেল, চাওলার জোড়া উইকেট ও নারিনের এক শিকারে কাবু দিল্লি তখনই হেরে বসে রয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দিল্লি ডেয়ারডেভিলস
১৪৬-৮ (মনোজ তিওয়ারি ৩২, উমেশ যাদব ২-১৮)
কলকাতা নাইট রাইডার্স
১৪৭-৪ (গৌতম গম্ভীর ৬০, মুথুস্বামী ২-১৮)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy