ফাইল চিত্র
ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থের কোনও সমালোচনা শুনতে চান না তিনি। কিন্তু উইকেটকিপার পন্থকে দেখে হতাশ ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানি। তিনি স্পষ্ট বলে দিচ্ছেন, এখনও সাবলীল ভাবে পায়ের নড়াচড়া করতে পারেন না পন্থ। যা তিনি অনায়াসে শিখে নিতে পারেন তাঁর সিনিয়র সতীর্থ ঋদ্ধিমান সাহার কাছ থেকে।
১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয়ী দলের সেরা উইকেটকিপার বেছে নেওয়া হয়েছিল কিরমানিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার আগে চার বছর তালিম নেন ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। তাই ব্যাকরণ মেনে কিপিং করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল তাঁর। ঋষভের হাত থেকে একাধিক ক্যাচ পড়তে দেখে কিরমানি জানিয়ে দিলেন, ফিটনেস ও পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের অভাব ফুটে উঠছে ২৩ বছর বয়সি কিপারের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৪টি টেস্টে ১৩টি ক্যাচ পড়েছে ঋষভের হাত থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা মেনে নেওয়া কঠিন।
শুক্রবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শেষে আনন্দবাজারকে কিরমানি বলেন, “ব্যাটসম্যানকে যেমন বিচার করা হয় তার ফুটওয়ার্ক দেখে, ঠিক তেমনই কিপারের ক্ষেত্রেও ফুটওয়ার্ক অত্যন্ত জরুরি। ঋদ্ধিমান সাহাকে দেখলে বোঝা যায়, লেগসাইডে বল ধরতে কোনও সমস্যাই হয় না ওর। কারণ ক'টি ধাপে বলের কাছে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব তা রপ্ত করে ফেলেছে ও। ঋষভ কিন্তু লেগসাইডের বল শরীর না ছুড়ে ধরতে পারে না। এখানেই ছবিটি পরিষ্কার, সঠিক প্রস্তুতির অভাব।”
স্পিনারের ক্ষেত্রে কী সমস্যা হচ্ছে পন্থের? কিরমানির উত্তর, “স্পিনার বল করার সময় বাউন্সের সঙ্গে কোমর ওঠাতে হয় কিপারকে। সহজে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি স্টাম্প পুঁতে স্পিনারের বিরুদ্ধে কিপিং করে যেতে হয়। তবেই বাউন্সের তালে শরীরের নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে দেখেছি, ঋদ্ধি এ ভাবেই অনুশীলন করত। পন্থেরও উচিত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এ ধরনের অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া।”
ঋষভের আরও একটি গলদ চিহ্নিত করেন কিরমানি। তাঁর কথায়, “কোমর দ্রুত উঠে গেলেও হাত যতটা সম্ভব নীচে থাকা উচিত কিপারের। ঋষভের হাত কিন্তু আগেই উঠে যাচ্ছে। তাই অশ্বিনের বলে পুকভস্কির ক্যাচ গিয়ে পড়ে ওর বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলে।” তাঁর আরও ব্যাখ্যা, “বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলে বল লাগা মানে ব্যাট ছোঁয়ার পরে সেই মাত্রায় নড়েনি বল। হাতের পজিশন ঠিক জায়গায় না থাকার কারণেই সেই ক্যাচ ফস্কায় পন্থ। হাতের পজিশন ঠিক রাখার জন্য দেওয়ালে বল ছুড়ে অনুশীলন করা উচিত পন্থের। লকডাউনে যেটা করত ঋদ্ধি। তাতে হাতের পজিশনও নিচু থাকে। হাতের তালু নরম রাখার কৌশলও শেখা যায়।”
কিরমানি মনে করেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আবির্ভাবের পর থেকেই উইকেটকিপারের গুরুত্ব কমে গিয়েছে। বেড়েছে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের চাহিদা। কিন্তু চেষ্টা করলেও যে ধোনি হওয়া সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি। কিরমানি বলছিলেন, “ধোনির প্রতি যোগ্য সম্মান দিয়েই বলছি, ব্যাকরণ মেনে কিন্তু কিপিং করত না ধোনি। ওর নিজস্ব ভঙ্গি ছিল। তাকে দেখে যদি কেউ কিপিং শিখতে যায়, তা হলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে।” কিরমানির আরও ব্যাখ্যা, “ঋষভকে বুঝতে হবে, ধোনির জায়গা পূরণ করার জন্য ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কিপিংটাও জরুরি। উইকেটের পিছন দিয়ে অনর্গল কথা বলে গেলে তো উইকেট আসবে না। ম্যাচে মনোনিবেশ করতে হবে। একজন কিপার দলের স্তম্ভ। সে এ ভাবে ক্যাচ ফেলতে থাকলে দলের আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে যেতে বাধ্য।”
কিরমানি চান, এখনও দু'বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তৈরি হোক ঋষভ। বলছিলেন, “ভারতীয় দলে আগেও এ রকম তরুণ কিপার এসেছে। যেমন পার্থিব পটেল। শুরুতে ও সমস্যায় পড়ত। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পরে ফের সুযোগ পায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। পন্থেরও প্রয়োজন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে নিজেকে তৈরি করার। নির্বাচকেরা অতিরিক্ত সুযোগ দিয়েছে ওকে। তার একাংশও ঋদ্ধিকে দেওয়া হলে ছয়-সাত নম্বরে ব্যাটসম্যানের খরা এত দিনে মিটে যেত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy