অস্ট্রেলীয় ওপেন সুপার সিরিজ জিতে শ্রীকান্ত। ছবি: এএফপি
ফাইনালটা জেতার পরেই ভাইকে মেসেজ করলাম। বেশ খানিক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও দেখি কোনও উত্তর নেই। খানিক্ষণ বাদে নিজেই ফোন করল। ভিডিও কলে এক ঘণ্টা কথা বললাম।
তখনই শ্রীকান্ত জানাল, প্রচুর মেসেজ আসছে। ইচ্ছা থাকলেও সব গুলোর উত্তর দিয়ে উঠতে পারছে না। তাই আমার মেসেজেরও উত্তর না দিয়ে ভিডিও কল করল। আমি ওর অবস্থাটা বুঝতে পারছি। তার কারণ, হায়দরাবাদে থাকলেও আমার কাছেই ওর জন্য কত শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে। দক্ষিণী ফিল্মের অনেক তারকা, অনেক অভিনেত্রীর অভিনন্দন বার্তা এল। তবে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য নামটা বোধ হয় রাজামৌলি। যাঁর বাহুবলী হইচই ফেলে দিয়েছে বক্সঅফিসে আর দক্ষিণের ডিরেক্টর এখন বেশ বড় এক নাম। শ্রীকান্তকে জানালাম, সব মেসেজের কথা। ততক্ষণে ও জেনে গিয়েছে আরও বড় বড় সব নাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্যার টুইট করে বলেছেন, দেশের গর্ব কিদাম্বি শ্রীকান্ত। যা শুনে ও বলল, এর চেয়ে বড় সম্মান আর আমি কী পেতে পারি? সচিন তেন্ডুলকর টুইট করেছেন। সেটা নিয়েও খুব আপ্লুত।
আর ভিডিও কলটা চলতে চলতেই আমার মন দৌড়চ্ছিল পিছনের দিকে। যখন গোড়ালির চোটে ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট থেকেই ছিটকে গেল। দীর্ঘ সময় বাইরে থাকতে হয়েছিল ওকে। এখন এটা বললে মিথ্যা বলা হবে যে, চোট ওকে বিষণ্ণ করে দেয়নি। মাঝেমধ্যে হতাশ দেখাত ভাইকে। কে জানে কত দিন এ ভাবে বাইরে বসে থাকতে হবে?
তবে একটা কথা বলব। এক দিনের জন্যও ওকে হাল ছাড়তে দেখিনি। কখনও বলতে শুনিনি যে, আর হবে না। কী বাড়িতে শুয়ে থাকা অবস্থায়, কী কষ্টসাধ্য রিহ্যাবিলিটেশন চলার সময়— কখনও ওকে দেখে মনে হয়নি যে, হেরে যাবে। বরং ভীষণ জেদি ছিল বরাবর। নিজেই বলে উঠত, পারবই। পারতেই হবে আমাকে। রিহ্যাব করার সময় কখনও ফাঁকি দেয়নি। খুব সিরিয়াস থেকেছে কারণ ও জানত, রিহ্যাবে যদি ফাঁক থাকে, ফিরে এসেও ভাল কিছু করতে পারবে না। আমরা দু’জনে ভাই এবং একই খেলাতে আছি। বয়সে আমিই বড়। তবে দু’জনের ইভেন্ট আলাদা। আমি নন্দগোপাল ডাবলস, মিক্সড ডাবলস খেলি। শ্রীকান্ত খেলে সিঙ্গলস। দু’জনেই গোপী স্যারের অ্যাকাডেমিতে খেলা শিখেছি। তবে একটা আশ্চর্য ব্যাপার বলি। আমার যখন ওর সঙ্গে দেখা হয়, চেষ্টা করি ব্যাডমিন্টন নিয়ে কথা না বলতে। আমি দু’বছরের বড় হলেও দু’জনে বন্ধুর মতোই সম্পর্ক। তাই হাসি-ঠাট্টা, ইয়ার্কি সবই চলে। ওর সঙ্গে দেখা হলে তাই ব্যাডমিন্টন নিয়ে কম কথা হয়, বেশি চলে অন্য সব কথা।
সারাক্ষণ ওর সঙ্গে কোচ, সহকারী কোচ, ট্রেনার, ফিজিওরা তো ব্যাডমিন্টন নিয়েই কথা বলে। এর পর আমিও যদি দেখা হলে খেলার পোস্টমর্টেম করতে থাকি বা কী উন্নতি দরকার তা নিয়ে কথা বলতে থাকি, তা হলে খুব ‘বোরিং’ হয়ে যাবে। কখনও চাইনি এত নিংড়ে নেওয়া সূচির মধ্যে সেই একঘেয়েমি ওকে উপহার দিতে।
আরও পড়ুন:মোদী বললেন, তুমি দেশের গর্ব
আজ অস্ট্রেলিয়ান সুপার সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে ভিডিও কলে যখন কথা হচ্ছিল, তখন অন্যরাও কথা বলল। কিন্তু আমি যে-ই বলতে এলাম, পরিবেশটা ঝুপ করে হাল্কা হয়ে গেল। আমি বলতে শুরু করলাম, ‘ইউ প্লেড লাইক আ চ্যাম্পিয়ন’। বললাম, কী অসম্ভব ঠাণ্ডা মাথা নিয়ে খেললি ম্যাচটা। অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়কে হারিয়ে দিলি! আমি এ সব বলছি আর ও দিকে ভাই চুপচাপ শুনছে। মুখে দুষ্টু হাসি। তার পরেই বলে উঠল, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। অত আর আমার প্রশংসা করতে হবে না!’’ সেটা শুনেই সকলে হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল। আমাদের সম্পর্কটা আমার ইভেন্ট দিয়ে ভাল বোঝানো যাবে। যতটা না দাদা-ভাইয়ের, তার চেয়ে বেশি করে ডাবলস পার্টনারের মতো। আর ওকে খুব ভাল করে বুঝতে পারি বলেই আমি জানি, ওর মনের মধ্যে এখন কী চলছে। জানি, অস্ট্রেলিয়ায় সুপার সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হয়েই ও আরাম করবে না। ওর আসল লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ভাল করা। আর একটা কথা বলি। সিঙ্গাপুর ওপেনের ফাইনালে উঠেও শ্রীকান্ত হেরে গিয়েছিল। আমি ওখানে ছিলাম। সে দিন ওর মধ্যে হারের হতাশা নয়, জয় করার জেদ দেখেছিলাম। ট্রেনিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। গোটা টুর্নামেন্টে ভাল খেললেও ফাইনালে ও খুব খারাপ খেলেছিল। খুব সৎ থেকে সে দিন পোস্টমর্টেম করতে দেখেছিলাম ভাইকে। নিজেই বলেছিল, খারাপ খেলেছি বলেই হেরেছি। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে আমাকে ভাল খেলতে হবে। আজ আমি ওর সঙ্গে ছিলাম না। কিন্তু সে দিন সিঙ্গাপুরে বসে দেখা সেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চোখমুখটাই মনে হচ্ছে বিশ্বের এক নম্বরকে হারিয়ে সুপার সিরিজ খেতাব জেতাল। সত্যিই সেলাম করতে ইচ্ছে করছে। ওয়েল ডান ব্রাদার!
(শ্রীকান্তের দাদা নন্দগোপালও ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে খুবই পরিচিত নাম। সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy