হুঙ্কার: কর্নাটকের আরও একটি উইকেট তুলে নিয়ে ঈশানের গর্জন। রবিবার ইডেনে রঞ্জি ট্রফি সেমিফাইনালের দ্বিতীয় দিনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রঞ্জি ট্রফি না টেস্ট? ইডেন নাকি পার্থ? বাংলার পেস ত্রয়ীর দাপটে অনেক প্রশ্নই তৈরি হয়ে গেল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। জাতীয় ক্রিকেটের সেরা ব্যাটিং লাইন-আপ হিসেবে যে দল চর্চিত, বাংলার বিরুদ্ধে তারাই তিন ঘণ্টায় অলআউট!
কর্নাটকের হাল যে এ রকম হতে পারে, তা অনেকেই ভাবেননি। যখনই কোনও নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসছেন, ধারাভাষ্যকার বিজয় দাহিয়া বলে উঠছেন, ‘‘এই ব্যাটসম্যানেরই সেঞ্চুরি করার পালা।’’ তাঁর ধারণা পাল্টে দেন বাংলার ‘রকস্টার’ ঈশান পোড়েল। একটি করে উইকেট পাচ্ছেন। উৎসবের নতুন ভঙ্গি নিয়ে হাজির হচ্ছেন সমর্থকদের জন্য। কখনও তিনি উৎসব করছেন রবের্তো ফির্মিনোর ভঙ্গিতে। কখনও বা নকল করছেন কে এল রাহুলের উৎসবের ভঙ্গি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তৃতীয় বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট তাঁর ঝুলিতে। তিন উইকেট আকাশ দীপের। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন মুকেশ। কে এল রাহুল ও মণীশ পাণ্ডে তাঁর ধাঁধার ফাঁদে পড়েই পরাস্ত। প্রথম ইনিংসে ৩১২ রান করে বাংলা। কর্নাটকের ইনিংস শেষ হয় ১২২ রানে। ১৯০ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামে বাংলা। দিনের শেষে চার উইকেট হারিয়ে তাদের রান ৭২। এগিয়ে ২৬২ রানে।
রবিবার ইডেনে বাংলার বোলিং দেখার চেয়েও সমর্থকেরা হয়তো ভিড় করেছিলেন রাহুল ও মণীশ পাণ্ডের শৈল্পিক ইনিংসের অপেক্ষায়। সকালে ‘বি’ ও ‘এল’ ব্লক থেকে ভেসে আসছিল রাহুলের নামে জয়ধ্বনি। কিন্তু কর্নাটক ইনিংসের প্রথম ওভারে ঈশানের অবিশ্বাস্য ডেলিভারি রবিকুমার সামর্থের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। সমর্থকেরা উপলব্ধি করেন, বাংলার খেলা দেখতে এসে কেনই বা অন্য দলের ব্যাটসম্যানদের সমর্থন করবেন? মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় সুর। গ্যালারিতে ওঠে স্লোগান, ‘‘শেষ করে দে ঈশান।’’ জ্বলে ওঠে বঙ্গ পেস ত্রয়ী। নতুন রূপকথার স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় তাঁদের অভিযান।
ইডেনের পিচে কোন লেংথে বল করা উচিত, সেই অভিজ্ঞতা বাংলার পেসারদের রয়েছে। শুরু থেকেই রাহুলদের ‘ফ্রন্টফুটে’ খেলতে বাধ্য করেন মুকেশ ও ঈশান। প্রত্যেকটি বল পড়ছিল অফস্টাম্পের গা ঘেষে। যেখান থেকে বল বাইরে গেলেও বিপদ, ভিতরে এলেও বিপদ। এই পরিকল্পনায় ফেরেন করুণ নায়ার। অফ-মিডল স্টাম্পের বল ফ্লিক করে বাউন্ডারি মারতে চেয়েছিলেন করুণ (৩)। কিন্তু পিচে পড়ে দিক পরিবর্তন করে ঈশানের ডেলিভারি। করুণের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় প্রথম স্লিপে। তৃতীয় পেরেকটি পুঁতলেন আকাশ দীপ। চোট সারিয়ে দলে ফিরে তাঁর প্রথম ওভারেই ফেরালেন কে ভি সিদ্ধার্থকে (১৪)। বিপক্ষের স্কোর যখন ৩৫-৩, ক্রিজে আসেন মণীশ পাণ্ডে।
রাহুল-মণীশ জুটি ব্যাট করার সময় সমর্থকেরা কাদের জন্য গলা ফাটাবেন, বুঝতে পারছিলেন না। লাঞ্চের পরে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা শুরু করেন মণীশ। কিন্তু ভিডিয়ো সেশনে বাংলার বোলারেরা খুঁজে পেয়েছিলেন মণীশের দুর্বলতা। তিনি ইনসুইংয়ের বিরুদ্ধে সাবলীল নন। ২১তম ওভারে বল করতে এসে প্রথম দু’টি ডেলিভারি আউটসুইং করান মুকেশ। মণীশের ব্যাট ও পায়ের ফাঁক খুঁজে পাওয়ার জন্য যা যথেষ্ট। তৃতীয় বলটি আউটসুইং ভেবেই এগিয়ে যান তিনি। একই জায়গা থেকে মুকেশের ডেলিভারি মণীশের (১২) ব্যাট ও পায়ের ফাঁক দিয়ে ভেঙে দিল স্টাম্প। গর্জে উঠল ইডেন। কর্নাটকের হয়ে মরসুমে সব চেয়ে বেশি রান পাওয়া দেবদূত পাড়িক্কাল দাঁড়াতেই পারেননি। দ্বিতীয় স্পেলে স্বপ্নের ডেলিভারিতে তাঁকে ফেরান ঈশান। দিনের শেষে বললেন, ‘‘পাঁচটি উইকেটের মধ্যে সামর্থ ও দেবদূতের উইকেটটিই সেরা। চলতি মরসুমে ওরা দু’জনেই ভাল ছন্দে রয়েছে।’’
এক দিক থেকে উইকেট পড়ছে কর্নাটকের। অন্য দিকে দাঁড়িয়ে দেখছেন রাহুল। বাংলার পেস-ত্রয়ীর চাপে খেয়াল করেননি ৬৬ বল খেলে মাত্র ২৬ রান পেয়েছেন। কী পরিকল্পনা ছিল রাহুলের বিরুদ্ধে? ঈশান বলছিলেন, ‘‘রাহুলকে রান করতে না দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। বিশ্বের যে কোনও ব্যাটসম্যান উইকেটে থমকে গেলে খারাপ শট নিতে বাধ্য।’’ অফস্টাম্পের বাইরে মুকেশের খাটো লেংথের বল স্কোয়ার কাট করে গ্যালারিতে পাঠাতে চেয়েছিলেন রাহুল। বাউন্ডারি লাইনে উড়ন্ত বাজপাখির মতো ঝাঁপিয়ে ক্যাচ তালুবন্দি করেন অভিষেক রামন। সেখানেই শেষ কর্নাটকের প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন।
৬৫-৭ থেকে কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ও অভিমন্যু মিঠুন নবম উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েও হাল ফেরাতে পারেননি। ঈশান, আকাশ, মুকেশের হার-না-মানা মানসিকতার বিরুদ্ধে মাথা নত বিপক্ষের। সঙ্গে অনুষ্টুপ মজুমদারের অদম্য লড়াই। সকালে ঈশানের সঙ্গে শেষ উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েন তিনি। অপরাজিত ১৪৯ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি। ১৯০ রানে এগিয়ে থাকা বাংলার টপ অর্ডার আবারও হতাশ করল। তবুও ছন্দ হারানো সুদীপ চট্টোপাধ্যায় কিছুটা ইতিবাচক ভঙ্গিতে খেলছেন (অপরাজিত ৪০)। এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত অলআউট হলে ম্যাচের পাল্লা ঘুরে যেতে পারে। সকলেই মাথায় রাখছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছন্দে থাকা রাহুল কিন্তু রোজ ব্যর্থ হবেন না। তাই কোচ অরুণ লালের সতর্কবার্তা, ‘‘কাল সারা দিন ব্যাট করতে হবে। তার পরে দেখি ওরা কত রান করতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy