মুমতাজ যে ভাবে জুনিয়র পর্যায় খেলছেন তাতে সিনিয়র দলেও তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি দেখা যেতে পারে। যে গতি এবং গোল করার ক্ষমতা তাঁর মধ্যে রয়েছে তাতে রানি রামপালদের দলেও দেখা যেতে পারে তাঁকে। এই প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত ছ’টি গোল করে সর্বাধিক গোলস্কোরারের তালিকায় তিন নম্বরে মুমতাজ।
ছবি: টুইটার থেকে
লখনউয়ের তোপখানা বাজারের গলিতে রোদ্দুরের মধ্যে দাঁড়িয়ে সব্জি বিক্রি করছেন কাইসের জাহান। প্রায় একই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হকির মাঠে দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষককে টপকে জালে বল জড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর মেয়ে মুমতাজ খান।
হকির যুব বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে কোয়ার্টার ফাইনালে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় ভারত। একটি গোল করেন মুমতাজ। ইতিহাসে দ্বিতীয় বার এই প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে খেলবে ভারত। ম্যাচের সেরা ১৯ বছরের মুমতাজের খেলা দেখতে পারেননি তাঁর মা কাইসের। তিনি বলেন, “আমি ওই সময় ব্যস্ত থাকি। ও গোল করছে দেখলে আমার ভাল লাগত, কিন্তু আমাকে জীবন চালানোর জন্য আয় করতেই হবে। ওকে গোল করতে দেখার সুযোগ ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আসবে।”
মুমতাজ যে ভাবে জুনিয়র পর্যায় খেলছেন তাতে সিনিয়র দলেও তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি দেখা যেতে পারে। যে গতি এবং গোল করার ক্ষমতা তাঁর মধ্যে রয়েছে তাতে রানি রামপালদের দলেও দেখা যেতে পারে তাঁকে। এই প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত ছ’টি গোল করে সর্বাধিক গোলস্কোরারের তালিকায় তিন নম্বরে মুমতাজ।
মুমজাতের মা খেলা দেখতে পারলেও তাঁর পাঁচ বোন খেলার দিকে নজর রেখেছিলেন। লখনউয়ের বাড়িতে মোবাইলে খেলা দেখছিলেন তাঁরা। খেলা চলাকালীন তাঁদের বাবা ছিলেন মসজিদে। মুমতাজের বড় দিদি ফারাহ বলেন, “আমাদের মনের অবস্থা বোঝানো কঠিন। একটা সময় ছিল যখন আমাদের কিছুই ছিল না। আমাদের মা-বাবাকে কথা শুনতে হত মেয়েদের খেলতে দেওয়ার জন্য।”
মুমতাজের জীবনে হকি এসেছে হঠাৎ করেই। ২০১৩ সালে আগ্রায় স্কুলের হয়ে একটি প্রতিযোগিতায় দৌড়েছিলেন মুমতাজ। সেখানে তাঁর গতি নজর কাড়ে। তাঁর ছোটবেলার কোচ নীলম সিদ্দিকি বলেন, “মুমতাজের প্রচণ্ড গতি ছিল। আমাদের মনে হয়েছিল হকিতে সেটা কাজে লাগবে। আমাদের মনে হয়েছিল ও যদি হকি খেলাটা শিখতে পারে, তা হলে দারুণ খেলোয়াড় হয়ে উঠবে।”
লখনউয়ের কেডি সিংহ বাবু স্টেডিয়ামে কোচিং করাতেন নীলম। আগ্রার প্রতিযোগিতায় নজর কাড়ার কয়েক মাস পরেই সেখানে আসেন মুমতাজ। সেখানে ট্রায়ালে ভাল খেলেন মুমতাজ। বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হয়ে যান সেখানে। সেখানকার হস্টেলে থাকতে শুরু করেন। নীলম বলেন, “মাত্র ১৩ বছরের তখন মুমতাজ। স্কুলের হয়ে খেলেছে কিছু ম্যাচে। সেই সময় সিনিয়রদের সঙ্গে একটা ম্যাচে আমরা নামিয়ে দিয়েছিলাম তাকে। দেখতে চাইছিলাম কী করে ও। ভয় পায়নি মুমতাজ। বেশ কয়েকটা ভাল ডজও করে ও। যে সময় আমরা ওকে ভর্তি করে নিই, তখন থেকেই ভারতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ওর চোখে।”
মুমতাজের দিদি ফারহা বলেন, “আমাদের বাবা রিকশা চালাত। বয়স হচ্ছিল বাবার। কষ্ট হচ্ছিল রিকশা চালাতে। আমার মামা সেটা লক্ষ্য করে। মামা সেই সময় সব্জির ঠেলা কিনে দেয়। আমাদের মা এখন সেটা নিয়ে বেরোয়।” সব্জি বিক্রি করে সেই টাকায় ছয় মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন ছিল। মুমতাজের জন্য হকির সরঞ্জাম কেনা তো আরও কঠিন। মুমতাজের বোন শিরিন বলেন, “দিদির কোচেরা খুব সাহায্য করেছিল সেই সময়।”
নীলম জানান তাঁকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি মুমতাজকে খেলা শেখাতে। খেলা সম্পর্ক কিছু কিছু ধারণা মুমতাজের মধ্যে নিজের থেকেই এসে গিয়েছিল। সেটা কাজে লাগিয়েই ২০১৭ সালে ভারতের যুব দলে জায়গা করে নেন মুমতাজ। যুব অলিম্পিক্সে পাঁচ জনের দল করে হকি খেলা হয়। সেখানে রুপো জিতেছিলেন মুমতাজ। ফারাহ বলেন, “ওই পদকটা আমাদের জীবনে অসময়ে ইদ নিয়ে এসেছিল। এখনও পদক জিতলে একই রকম আনন্দ হয়।”
রবিবার সেমিফাইনালে ভারত খেলবে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে মুমতাজের দিকে নজর থাকবে সকলের। শুধু মুমতাজের মা দেখতে পারবেন না সেই ম্যাচ। তাঁকে যে সব্জি বিক্রি করতে বেরতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy