অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জয়। টানা ১৬টি টেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড। তাঁর কোচিং কেরিয়ার যেমন বর্ণময়, তেমনই বিতর্কিত। ভারতের টেস্ট অভিযান শুরুর আগে সেই স্টিভ ওয়, রিকি পন্টিংদের প্রাক্তন কোচ জন বুকানন অস্ট্রেলিয়া থেকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে। যেখানে উঠে এল বিরাট কোহালি থেকে শেন ওয়ার্ন— যাবতীয় বিষয়।
দিনরাতের টেস্ট: আমার কাছে এটা ক্রিকেটের চতুর্থ ফর্ম্যাট। বাকি তিনটে হল, টেস্ট, ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি। দিনরাতের টেস্টের এমন কিছু সময় আছে, যেখানে খেলা ঘুরে যাবেই। দলগুলো সে ভাবেই কৌশল তৈরি করছে। যেমন গোধূলি থেকে রাতের সময়। এই পর্যায়টা সম্পূর্ণ অন্য রকমের। এর সঙ্গে সাধারণ টেস্ট ম্যাচের তুলনা হয় না।
কী হওয়া উচিত কৌশল: সব দলই চায়, রাতের দিকে বিপক্ষকে ব্যাট করাতে। যে দল সেটা করাতে পারবে, তারা এগিয়ে যাবে। রাতের দিকে ফাস্ট বোলাররা অনেক সুবিধে পাবে। বল সুইং করবে।
আরও পড়ুন: লড়ছেন হোল্ডার, ইনিংসে জয়ের গন্ধ পাচ্ছে নিউজিল্যান্ড
আরও পড়ুন: রাজ্য টেবিল টেনিসে জোড়া খেতাব জিতল অঙ্কুর ভট্টাচার্য
অ্যাডিলেডে কী হবে: অ্যাডিলেডে কিন্তু পিচ প্রস্তুতকারকদের কাজটা অনেক কঠিন। দিনরাতের টেস্টের জন্য ‘ড্রপ-ইন’ পিচ (বাইরে থেকে তৈরি করে আনা) রক্ষনাবেক্ষন করা কিন্তু কঠিন। একে সূর্যের তাপ সে ভাবে পাবে না। তার উপরে রাতে অনেকটা সময় পিচ খোলা থাকবে। রাতের পরিবেশ, হাওয়া, শিশির— সব মিলিয়ে খেলার ধরনটাই বদলে যাবে। ক্রিকেটার এবং আম্পায়ারদেরও এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। যে কারণে বললাম, দিনরাতের টেস্ট সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ফর্ম্যাট।
ভারতের জন্য কী পরামর্শ: সাধারণত, টেস্টে একটা দল টস জিতলে ব্যাটিং নেয় প্রথম ইনিংসে বড় রান করার লক্ষ্য নিয়ে। যাতে টেস্টের চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে বিপক্ষকে ব্যাট করানো যায়। ধরে নেওয়া হয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে পিচ ভাঙবে এবং স্পিনাররা সাফল্য পাবে। দিনরাতের টেস্টে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে পিচ সে ভাবে ভাঙে না। এটা মনে রেখে কৌশল তৈরি করতে হবে।
কোহালির ফিরে যাওয়া: বিরাট ধাক্কা ভারতের কাছে। এটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল ভারতের। যা ওদের এই সিরিজে ভোগাবে।
নেতা কোহালির অভাব: আমি তো বলব, ব্যাটসম্যান কোহালির থেকেও নেতা কোহালির অভাব মেটানো কঠিন। অধিনায়ক কোহালি নিয়ে কয়েকটা কথা বলতে চাই। ও এমন এক জন অধিনায়ক, যে দলকে সব সময় প্রেরণা জোগায়, সতীর্থদের মন্ত্র দেয়, নির্দেশ দেয়— যে দলের বিরুদ্ধেই খেলো না কেন, এক পা পিছু হঠবে না। এই আগ্রাসন, এই মনোভাব এর আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে দেখেছিলাম। কোহালি চলে গেলে ভারতের অধিনায়ক সম্ভবত অজিঙ্ক রাহানে হবে। যে-ই হোক না কেন, কোহালির সেই ঝাঁঝটা মাঠ এবং মাঠের বাইরে দলের মধ্যে আনতে পারবে না। নেতা কোহালির বিকল্প হয় না।
বিরাট-স্মিথদের বিরুদ্ধে কৌশল: বিরাট এবং স্টিভ স্মিথকে নিয়ে কৌশল নিঃসন্দেহে তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেরা ক্রিকেটারদের এই ভাবে থামানো কঠিন। বিরাটরা জানে, ওদের দুর্বলতা কোথায়। এও জানে, বিপক্ষ বোলাররা সে জায়গাতেই আক্রমণ করবে। সেরা ক্রিকেটাররা এই দুর্বলতা ঢেকে দেয় প্রতিভা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা দিয়ে। যে কারণে বিরাট-স্মিথদের থামাতে ভাগ্যের সাহায্য পাওয়াটাও দরকার। এই দু’জনের রক্ষণও খুব ভাল। তাই প্রথমে রক্ষণাত্মক খেলে পরে আক্রমণে যেতে পারে।
সিরিজের ফল কী হবে: অস্ট্রেলিয়াই জিতবে। কাগজে-কলমে ওদের বোলিং আক্রমণ ভারতের থেকে বিপজ্জনক। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হেজ্লউড ছাড়াও জেমস প্যাটিনসন, মাইকেল নেসেররা আছে। স্পিনার নেথান লায়ন। ভারতের বোলিং আক্রমণে গভীরতা আর অভিজ্ঞতার অভাব। অশ্বিন, জাডেজা বা কুলদীপ সিডনি টেস্টের আগে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না।
শেন ওয়ার্ন বিতর্ক: কোচের কাজটা সব সময়ই কঠিন। চ্যালেঞ্জ আছে, প্রাপ্তি আছে আবার সব কিছু চূর্ণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে। কোচের আসল কাজ হল দলকে সাহায্য করা। দলের মধ্যে আবার কয়েক জন মহান খেলোয়াড় থাকে। যেমন শেন ওয়ার্ন।
কোথায় সমস্যা: খেলোয়াড়দের ‘মহান’ উপমাটা দেওয়া হয়, তারা মাঠে কী করছে, তার ভিত্তিতে। কোচ হিসেবে আমার একটা কাজ ছিল, ওয়ার্নকে মাঠে ওর সেরাটা দিতে সাহায্য করা। আর একটা কাজ ছিল, শুধু ক্রিকেটার নয়, ওয়ার্নকে পূর্নাঙ্গ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরা। আমি শুধু ক্রিকেটার নয়, ব্যক্তি ওয়ার্নের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টাও করেছি। যে কারণে অনেক সময়ই হয়েছে, ও এমন কিছু করত যা আমার মনে হত, ঠিক নয়। ওয়ার্নের পক্ষেও নয়, ওর সতীর্থদের পক্ষেও নয়। এই সময়ই কোচকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ঠিক করতে হয়, এই ‘মহান’দের মুখের উপরে কিছু সত্যি কথা বলবে কি না।
এই মুহূর্তে লক্ষ্য কী: অনলাইন কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছি। তা ছাড়া আমাদের ‘লঞ্চটিস্পোর্টস’-এর সঙ্গে একটা নতুন একটা জিনিস যোগ করছি। যেখানে দেড় থেকে ছ’বছরের বাচ্চাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে ছোটবেলা থেকেই ওদের ক্রীড়া দক্ষতা তৈরি হয়। অ্যাডাম গিলক্রিস্টও সঙ্গে আছে। সেরা তিন কোচ: ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার নিরিখে বলছি। ডানকান ফ্লেচার, জন রাইট এবং জাস্টিন ল্যাঙ্গার। এরা তিন জনই কোচিংয়ের ক্ষেত্রে ছাপ ফেলে গিয়েছে এবং যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy