Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

এএফসি কাপে বড় জয়, বাগানে দোলের আবহ

কাতসুমি ইউসা নামক জাপানি বোমার তীব্র গতিতে আছড়ে পড়া! না কি জেজে লালপেখলুয়ার পাহাড়ি বিষ উগড়ে দেওয়া কামড়। কারও মত আবার সনি নর্দে নামক এক সোনালি চুলের মিডিও-র মাঝেমধ্যে জ্বলে ওঠাই সাফল্যের আসল রসায়ন।

উল্লাস: ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে উচ্ছ্বসিত জেজে লালপেখলুয়ার। মঙ্গলবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে।-সুদীপ্ত ভৌমিক

উল্লাস: ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে উচ্ছ্বসিত জেজে লালপেখলুয়ার। মঙ্গলবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে।-সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫৬
Share: Save:

মোহনবাগান ৪ : ভ্যালেন্সিয়া ১

কাতসুমি ইউসা নামক জাপানি বোমার তীব্র গতিতে আছড়ে পড়া! না কি জেজে লালপেখলুয়ার পাহাড়ি বিষ উগড়ে দেওয়া কামড়।

কারও মত আবার সনি নর্দে নামক এক সোনালি চুলের মিডিও-র মাঝেমধ্যে জ্বলে ওঠাই সাফল্যের আসল রসায়ন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সূর্য অস্তাচলে যাওয়ার মুহূর্তে রবীন্দ্র সরোবরের গ্যালারিতে মুঠো মুঠো আবির ওড়াচ্ছিলেন এক দল সমর্থক। হোলির বারো দিন আগেই তাদের হাত এবং মুখ সবুজ-মেরুন আবিরে মাখামাখি। তাদের মধ্যেও জোর বিতর্ক চলছিল মোহনবাগানের এ দিনের মলদ্বীপের টিমকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়ার পিছনে আসল কারণটা কী?

সাংবাদিকদের সামনে এসে সেই বিতর্কের একটা সমাধান সূত্র দিয়ে গেলেন সঞ্জয় সেন। ‘‘কাতসুমিকে নামানোর ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু যখন ম্যাচটা ২-১ হয়ে গেল তখন এতটাই চাপে পড়ে গিয়েছিলাম যে আর ওসব মাথায় রাখিনি। কাতসুমি নামতেই তো ওঁরা শেষ। ওই পরিবর্তনটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট,’’ কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই স্বগোতোক্তির মতো বলে দেন ডাকাবুকো মোহনবাগান কোচ।

মলদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়া টিমকে সে দেশের লোকেরা আদর করে ডাকেন ‘দ্য সানরাইজার্স’ নামে। কিন্তু একেবারে সাদামাঠা টিম নিয়ে এএফসি কাপে খেলতে আসা টিমটায় কোনও ‘সূর্য’-রই তো দেখা পাওয়া গেল না। সূর্যোদয় হবে কী করে? জেজে-সনিদের কাছে তাঁদের মনে হচ্ছিল নিতান্তই শিক্ষানবিশ। কোনও আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নেই, শুধুই দৌড়োদৌড়ি আর সুযোগ পেলেই মাঠে শুয়ে পড়া। এই টিমটা দেখার পর সনি নর্দের বলে যাওয়া একটা কথা না লিখে পারা যাচ্ছে না। স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে হাইতিয়ান মিডিও বলে গেলেন, ‘‘আই লিগে পরের ম্যাচে আমাদের যাদের সঙ্গে খেলতে হবে সেই চার্চিল ব্রাদার্স এই টিমটার চেয়ে কিন্তু ভাল দল। আজকের মতো হারানো সহজ হবে না।’’

নোটবই বলছে, সব কিছু ঠিকঠাক হলে ম্যাচটায় সঞ্জয় ব্রিগেডের জেতার কথা অন্তত সাত-আট গোলে। গোল নষ্টের তালিকায় প্রথম নাম যদি হয় বলবন্ত সিংহ, তা হলে পরের নাম হবে সনি নর্দে। এত গোল নষ্ট সত্ত্বেও মোহনবাগান চার চারটে গোল করে গেল হেলায়। শুরুর তিন মিনিটের মধ্যেই পেনাল্টি থেকে জেজের গোল। এত নিখুঁত প্লেসিং যে অবাক লাগছিল এই মিজো স্ট্রাইকার কী ভাবে গতবার শিলিগুড়ির আই লিগ ডার্বিতে পেনাল্টি নষ্ট করেছিলেন। ডুবিয়েছিলেন দলকে। এ দিনের জেজের পেনাল্টি গোলটা দেখে অনেকে এটাকে প্রায়শ্চিত্ত বলছেন হয়তো, কিন্তু এএফসি কাপ মানেই তো জেজের জ্বলে ওঠা। গতবার সাতটা গোল করেছিলেন এই টুনার্মেন্টে। এ বারও শুরু করলেন জোড়া গোল দিয়ে। ভ্যালেন্সিয়া যে দ্বিতীয় গোলটা হজম করল সেটা চিনের ম্যাচ কমিশনার আত্মঘাতী বলে রায় দিলেন বটে, তবে সেটা জেজে বল তাড়া করে গিয়েছিলেন বলেই ফসল তুলেছিল মোহনবাগান।

কিন্তু অমাবস্যার মধ্যেও তো মাঝেমধ্যে আলো ঠিকরে বেরোয়। ভ্যালেন্সিয়ারও এক বার বেরোল। এবং সেটা তাদের টিমের সেরা বিদেশি গডফ্রে ওমোদুর পা থেকে। গোল বক্সের মাথা থেকে চলতি বলে তাঁর সোয়ার্ভিং শট এমন ভাবে দেবজিৎ মজুমদারকে টপকে ঢুকল যে, দেশের সেরা বঙ্গসন্তান গোলকিপার নড়তেই পারলেন না। পুরো ম্যাচে ওই একবারই এডু-আনাসদের দেখে মনে হল চাপে পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ বার মোহনবাগান কর্তারা এমন টিম গড়েছেন যে কোচের হাতে রসদ অনেক। ২-১ ম্যাচটা ২-২ হলেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেত সঞ্জয় সেনের টিম। ফলে যুদ্ধ জিততে অস্ত্রাগার থেকে জাপানি বোমাকেই বাছলেন সনিদের কোচ। কাতসুমি নামতেই ভ্যালেন্সিয়ার আক্রমণের গঙ্গাপ্রাপ্তি। আর টিমের সবথেকে ধারাবাহিক এবং চোটহীন মিডিও মাঝমাঠের দখল নিতেই পরপর দু’টো গোল। সৌজন্যে জেজে আর সনি। যা সওয়াশো বছর পেরোনো ক্লাবকে নিয়ে গেল টুর্নামেন্টের মূল পর্বে। সেখানে তাদের খেলতে হবে বেঙ্গালুরু, মলদ্বীপের মাজিয়া এফসি এবং বাংলাদেশের ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে।

কিন্তু এ দিন রাত থেকে পুরো টিমটার ফোকাস তো ঘোরাতে হবে ফের আই লিগে। সবুজ-মেরুন কোচ সেটা বলেও গেলেন, ‘‘পরপর তিনটে আই লিগের ম্যাচ আছে। এখন আমাদের মাথায় আর এএফসি নয়, থাকবে শুধুই আই লিগ। কাল থেকে তার প্রস্তুতি শুরু হবে।’’

আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতে এ দিন কী লাভ হল মোহনবাগানের? চৌম্বকে উঠে আসছে, এক) বিদেশি টিমকে চার গোল, আত্মবিশ্বাস বাড়বেই, দুই) চাপে পড়েও ম্যাচ জেতার অভ্যাস তৈরি হওয়া, তিন) রিজার্ভ বেঞ্চ ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। না হলে অনামী সার্থক দলুইয়ের মতো ফুটবলার এত ভাল খেলেন! চার) সনির ফর্মে ফেরার মরিয়া চেষ্টা। যিনি এদিনও বলে গেলেন, ‘‘নিজের খেলার পঞ্চাশ শতাংশও খেলতে পারছি না।’’

আই লিগ শীর্ষে থাকা ইস্টবেঙ্গলের এএফসি কাপ খেলার চাপ নেই। সনি-দেবজিতদের সেই চাপটা কিন্তু নিতে হবে এরপর।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, সার্থক, এডু, আনাস, শুভাশিস, প্রবীর, বিক্রমজিৎ (কাতসুমি), সৌভিক (সৌরভ), সনি, জেজে (আজহার), বলবন্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

Jeje Lalpekhlua Mohun Bagan AFC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE