কলকাতার শেষ ডিসেম্বরের মতোই এখন দারুণ আবহাওয়া লন্ডনে। মনোরম ঠান্ডা। উইম্বলডনে আজ ঝকঝকে উজ্জ্বল আকাশ। কিন্তু তার অর্ধেকও উজ্জ্বল দেখলাম না সেরেনা-শারাপোভা মহালড়াই! মনোরম তো নয়ই। বরং আজ লন্ডনের টিউব হরতালের মতোই বিরক্তিকর।
শারাপোভার বিরুদ্ধে গত বারো বছরে টানা ১৭ নম্বর জয় তুলতে সেরেনা আজ মেরেকেটে সোয়া ঘণ্টা নিল। দু’টো সেটেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে জোড়া ব্রেক। অনায়াস ৬-২, ৬-৪ জয়। তবু সেরেনার খেলায় আমি হতাশ। অনেক ভুল করেছে। কিন্তু শারপোভা তার চেয়েও অনেক বেশি ভুলভাল খেলায় সেরেনার ত্রুটিগুলো দিনের শেষে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু শনিবার ফাইনালে সেটা নাও হতে পারে। তাই টানা চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় বার ‘সেরেনা স্ল্যাম’ ঘটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা— এ কথাটা অন্তত আমি বলতে পারছি না।
কারণ ভেনেজুয়েলায় জন্মানো বছর একুশের স্প্যানিশ মেয়ে মুগুরুজা এ দিন অন্য সেমিফাইনালে উইম্বলডনের পুরনো ফাইনালিস্ট রাডওয়ানস্কাকে ৬-২, ৩-৬, ৬-৩ শুধু হারায়ইনি। সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের মতো খেলে হারিয়েছে। এক সেট আর দ্বিতীয় সেটে ৩-১ এগিয়েও মুগুরুজা টানা ছ’টা গেম হেরে বসায় ম্যাচ গড়বড়ে তৃতীয় সেটে গড়ায়। টেনিসে এই অবস্থায় সাধারণত কামব্যাক করা প্লেয়ারেরই অ্যাডভান্টেজ। কিন্তু সেন্টার কোর্টে বসে অবাক চোখে দেখলাম এক্ষেত্রে সেই রাডওয়ানস্কার বদলে পেশাদার ট্যুরে মাত্র চারটে টুর্নামেন্ট জেতা মুগুরুজাই বরং কামব্যাক করল! এটা এক জন চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ারের গুণ!
তার চেয়েও বড় কথা, সেরেনার বিরুদ্ধে শারাপোভার মতো কোনও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কোর্টে নামবে না মুগুরুজা। বরং গত বছরই ফরাসি ওপেনে গোড়ার দিকে ওর কাছে সেরেনা হেরে গিয়েছিল।
কোনও নির্দিষ্ট প্লেয়ারের বিরুদ্ধে কোনও বিশেষ প্লেয়ারের মানসিক প্রতিবন্ধকতা যে কী বিষম বস্তু তার করুণ নজিরের আমি নিজের কেরিয়ারের গোড়া থেকে অবসর জীবনে উইম্বলডন দেখতে এসেও সাক্ষী থেকেছি। আমার টেনিস গুরু দিলীপ বসু, উইম্বলডনে যিনি সিঙ্গলসে বাছাই পর্যন্ত হয়েছেন, বিহারের খাশু নামে এক প্লেয়ারের কাছে বরাবর হেরে যেতেন! কোনও দিন এই ম্যাচটা বার করার রাস্তা খুঁজে বার করতে পারেননি।
আবার তিন বারের উইম্বলডন রানার আপ অ্যান্ডি রডিকের ফেডেরারের বিরুদ্ধে চব্বিশ বারে জেতার সংখ্যা মাত্র তিন। দু’জনের শেষ ম্যাচটা আমি স্বচক্ষে দেখেছি পঞ্চম সেটে রডিককে ১৪-১৬ গেমে হারতে! এগুলোকে মানসিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আর কী বলব?
সেরেনার বিরুদ্ধে শারাপোভারও তাই। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত অমন চনমনে দেখাচ্ছিল। অথচ এ দিন সেরেনার সামনে কেমন যেন ক্লান্ত! সারাক্ষণ ধস্ত! ম্যাচের প্রথম সার্ভিস গেমটাই খুইয়ে বসে শুরুতেই খেলার রাশ তুলে দিল মহাপ্রতিপক্ষের হাতে।
দু’হাজার চারে তখনও স্কুলের গণ্ডি না পেরনো যে সতেরো বছরের তন্বী টিনএজার ফাইনালে রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত তারকা সেরেনাকে দাঁড় করিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, যাঁকে ‘মাদার অব ফোরহ্যান্ড’ বলা হত, সেই শারাপোভার সঙ্গে আঠাশের এই রুশ টেনিস সুন্দরীর আকাশপাতাল তফাত। এগারো বছর আগের সেই উইম্বলডন ফাইনালের কয়েক মাস পরেই লস অ্যাঞ্জেলিসে ডব্লিউটিএ ট্যুরের ফাইনালে তলপেটে ব্যথা শুরু হওয়ায় সেরেনা তৃতীয় সেটে ৪-০ এগিয়ে থেকেও শারাপোভার কাছে হারে। কিন্তু সেই শেষ!
তার পর থেকে কোর্টে দু’জনের সাক্ষাত ঘটলেই শারাপোভারই পেটে গুড়গুড় করার অবস্থা হয় যেন! তবে অদ্ভুত লাগে এগারো বছরেও এক জন প্লেয়ার বিশেষ একটা ম্যাচ জেতার টোটকা বার করতে পারল না! বছর কয়েক আগে জিমি কোনর্সকে পর্যন্ত চিফ কোচ করে এনেছিল শারাপোভা। কিন্তু একটা টুর্নামেন্টের পরেই দু’জনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
কোনর্সের কেরিয়ারে গ্রেট রাইভ্যালরি অনেক। ম্যাকেনরোর সঙ্গে। বর্গের সঙ্গে। লেন্ডলের সঙ্গে। এ রকম এক জন মহালড়াকু প্রাক্তন টেনিস তারকা কোচ থাকলে কিন্তু প্রচুর লাভ। বিশেষ করে মানসিক প্রস্তুতিতে। ফেডেরার, জকোভিচ, মারে যার রেজাল্ট পেয়েছে হাতেনাতে।
মনে হয়, কোনর্সকে না তাড়ালে একই রেজাল্ট শারাপোভাও পেত। গ্ল্যামারাস অথচ ‘মানসিক প্রতিবন্ধক’— এ রকম চূড়ান্ত মেরুকরণ কেরিয়ারে হত না ওর!
লি শেষ চারে, বিদায় সানিয়া, বোপান্নার: বোপান্না-মার্জিয়া আগের রাউন্ডে ব্রায়ানদের হারিয়েও এ দিন রজার-তেকাউয়ের কাছে পঞ্চম সেটে ১১-১৩ হেরে ডাবলস ফাইনালে উঠতে পারেননি। সানিয়া-সোয়ারেসও মিক্সড ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গেলেন। কিন্তু হিঙ্গিসকে নিয়ে চিরতরুণ লিয়েন্ডার সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়ে বিয়াল্লিশেও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার আশা জাগিয়ে রেখেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy